বিজেপি ইতিহাস মুছেই চলছে, রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নাম ফিরিয়ে রাজনীতির চাল হিমন্তের

0
1

ইতিহাস মুছেই চলেছে বিজেপি‌। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে গিয়ে এবার রবীন্দ্রনাথকে তিনি আনলেন অসমের (Assam) মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ইতিহাস বদলে, জায়গার নাম বদলে নোংরা রাজনীতি করে চলেছে দেশজুড়ে। যেমন উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ, তেমনি অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta Biswasharma)। সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস, পরম্পরা সব ভুলে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির নোংরা খেলায় মেতেছেন তাঁরা।

হিমন্ত বিশ্বশর্মা সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিলেন, করিমগঞ্জের নাম বদলে ‘শ্রীভূমি’ (Sribhumi) করার। তাঁর দাবি, শতবর্ষ আগে করিমগঞ্জের নাম শ্রীভূমি রেখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)। সেই নামে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অসমের করিমগঞ্জ জেলার নাম বদলে হতে চলেছে শ্রীভূমি। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিলমোহর পড়ল সেই নামে। হিমন্ত বলছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান জানাতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ মনে করছে, হিমন্তের (Himant Biswasharma) এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষ। রবীন্দ্রনাথের নাম ভাঙিয়ে তিনিও যোগী আদিত্যনাথের মতো সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছেন।

মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্তের পাশাপাশি এক্স হ্যান্ডেলেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা লেখেন, ১০০ বছর আগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) অসমের করিমগঞ্জ জেলার নাম রেখেছিলেন শ্রীভূমি। যার অর্থ ‘মা লক্ষ্মীর ভূমি’। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্রীভূমি নাম ফিরিয়ে আনার। সেই দাবিই পূরণ করল তাঁর সরকার। একইসঙ্গে তিনি করিমগঞ্জের ম্যাপ ও রবীন্দ্রনাথের ছবি-সহ একটি পোস্টার সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, দক্ষিণ অসমের হারানো গৌরব ফেরানো হল। করিমগঞ্জ এখন শ্রীভূমি।

১৯১৯ সালে করিমগঞ্জ হয়ে সিলেটে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই সিলেট সফরকালেই রবীন্দ্রনাথ অবিভক্ত ভারতের ওই অঞ্চলের বর্ণনায় লিখেছিলেন, ‘মমতাবিহীন কালস্রোতে/বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হোতে/ নির্বাসিতা তুমি/ সুন্দরী শ্রীভূমি।’

সেই সিলেট জেলার মধ্যে শুধু করিমগঞ্জই দেশভাগের পরে ভারতে যুক্ত হয়। হিমন্তের যুক্তি করিমগঞ্জের কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। কিন্তু শ্রীভূমি নামে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস আর রবীন্দ্রস্মৃতি। সেই গৌরবই আমরা ফেরানোর চেষ্টা করলাম।

বিজেপি শাসিত রাজ্যে মুসলিম সম্পর্কিত নাম বদলের রেওয়াজ চলছে সাম্প্রতিককালে। মোদি জমানায় উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের হাত ধরে জি অপসংস্কৃতির সূচনা হয়েছিল, তা মেনে কেন্দ্রীয় সরকার পোর্ট ব্লেয়ার, মুঘল গার্ডেন-সহ একাধিক নাম বদল করে। মোদি-যোগীর পর হিমন্ত বিশ্বশর্মাও একই পন্থা অবলম্বন করলেন। আসলে ‘করিম’ নামেই যে বিজেপির আপত্তি, তা সুস্পষ্ট। রবীন্দ্র-স্মৃতিকে ঢাল করে সেই কাজটাই করে দেখালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী।