মহাকুম্ভে যত বেশি পুণ্যার্থী তত বেশি অর্থলাভ যোগী প্রশাসনের। কেন্দ্রের সাহায্যে বিপুল খরচে মহাকুম্ভের পুণ্যস্নান আয়োজন করে যতটুকু ব্যয় হয়েছে যোগী রাজ্যের প্রশাসনের তার দশগুণ আয় হয়েছে। শেষে পদপিষ্টের ঘটনায় মানুষের মৃত্যুকেও তাই দিনভর ধামাচাপা দিয়ে রাখল উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। পুণ্যস্নান শেষ হওয়ার পরে ঘটা করে জানানো হল মৌনী অমাবস্যায় প্রয়াগে ৫ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ পুণ্যস্নান করেছেন। তার মধ্যে ছোট করে পরিসংখ্যান পেশ করে জানানো হল পদপিষ্টের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। গুরুতর আহত ৬০ জন। অর্থাৎ মহাকুম্ভের বিপুল উপার্জনের তথ্য দিয়ে যোগী আদিত্যনাথ খাটো করে দেওয়ার করলেন স্বজনহারা পুণ্যার্থীদের চোখের জল।
প্রয়াগরাজে পুণ্যস্নানে যাঁকজমকে প্রথম থেকেই অনেকাংশে ঢাকা পড়ে গিয়েছে সাধারণ পুণ্যার্থীদের পুণ্যস্নান। বারবার প্রচারে এসেছে বিত্তশালী ও প্রভাবশালীদের পুণ্যস্নান। সাধারণ মানুষ কীভাবে পুণ্য অর্জন করেছেন সেই করুণ ছবি রাখা হয়েছে গোপণে। বুধবারের মর্মান্তিক পদপিষ্টের ঘটনার পরে শুধুই দুঃখ প্রকাশ করেছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার মৌনী অমাবস্যা শেষে মহাকুম্ভের ডিআইজি বৈভব কৃষ্ণ দাবি করেন, ব্রাহ্ম মুহূর্তে আখড়া এলাকায় বিরাট ভিড় হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে বেরিয়ে আসে। সেখানে ধাক্কাধাক্কিকে প্রশাসন কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন। গ্রিন করিডোর করে ৯০ জন আহতকে উদ্ধার করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৩০ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২৫ জনের সনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ভিনরাজ্যের বাসিন্দারাও ছিলেন। তার মধ্যে ছিলেন কর্ণাটক, অসমের বাসিন্দারাও। পরিচয় না জানতে পারা ৫ জনেরও খোঁজ চলছে।
দিনভর যোগী প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক জানিয়েছেন পদপিষ্টের ঘটনায় কোনও মৃত্যু হয়নি। অনেক মানুষ আহত হয়েছেন, যাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। আর ততক্ষণে উল্লাসের সঙ্গে সাধারণ মানুষের রক্তমাখা পথে কোটি কোটি মানুষ প্রয়াগে স্নানে গিয়েছেন। ডিজি পুলিশ বুধবারের বিশেষ সাধুদের নামও ঘোষণা করতে ভোলেননি। বারবার বিজেপি নেতারা প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন মঙ্গলবার মধ্যরাতের ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা। এমনকি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে। সেখানে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বা অন্তর্ঘাতের সব সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
যদিও ডিজির কথাতেই প্রশ্নের অবকাশ রয়ে গিয়েছে। যেখানে তিনি বলেন ব্রাহ্ম মুহূর্তে মানুষ স্নানের জন্য হুড়োহুড়ি করেন। অথচ বুধবারের ব্রাহ্ম মুহূর্ত ভোর সাড়ে ৫টার পরে ছিল। আবার ডিজি-ই বলছেন রাত ১টা থেকে ২টোর মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি ভাইরাল ভিডিওতে (ভিডিওর সত্যতা বিশ্ববাংলা সংবাদ যাচাই করেনি) দেখা যায় কমিশনার বি বি পন্থ রাত ১টা নাগাদ পুণ্যার্থীদের ঘুম থেকে তুলে স্নানের জন্য যাওয়ার নির্দেশ দেন।
আবার সাংবাদিক বৈঠকে ডিজি মেনে নেন ব্যারিকেড সামলাতেও ব্যর্থ হয় প্রয়াগের পুলিশ প্রশাসন। সাধারণ মানুষ ব্যারিকেড ভেঙেছিলেন বলে গোটা ঘটনার দায় পুণ্যার্থীদের উপর চাপানোর চেষ্টাও চালায় যোগী প্রশাসন।
–
–
–
–
–
–