জ্যোতি বসুর মতই আদর্শ হলে প্রধানমন্ত্রী হতে বাধা কেন? কারাটের মন্তব্যে উঠল প্রশ্ন

0
4

বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীদের কমরেড জ্যোতি বসু বলেছিলেন বর্বর। তারাই এখন কেন্দ্রে ক্ষমতায়। রাজনৈতিক দিক থেকেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই। শুক্রবার, নিউটাউনে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu) নামাঙ্কিত ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ’-এর প্রথম পর্বের ভবন উদ্বোধন করে এই মন্তব্য করলেন CPIM পলিট ব্যুরোর কোঅর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট। জ্যোতি বসুর আর্দশেই লড়াইয়ের কথা বলেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, যে জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেননি এই প্রকাশ কারাট অ্যান্ড কোম্পানি, আজ তাঁর আদর্শের কথা মনে পড়ছে?

আরও খবর: প্যানিক অ্যাটাক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের, বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি জেল হাসপাতালে

এদিন ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ’-এর উদ্বোধন হয়। ছিলেন CPIM পলিট ব্যুরো সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট (Prakash Karat), বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু (Biman Basu), সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিএম নেতা রবীন দেব-সহ অন্যান্যরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। পরিবেশন করেন, ‘আজি শুভদিনে পিতার ভবনে’ গানটি।

স্মারক বক্তৃতায় প্রকাশ কারাট বলেন, “জ্যোতি বসু (Jyoti Basu) মানে কমিউনিস্ট এবং বাম আন্দোলনের অগ্রগতির প্রতীক। রেলে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা। তাঁর অবদান নিয়ে নতুন করে বলা নেই। দেশ ও রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ) গঠনে তাঁর ভূমিকা অনবদ্য। কীভাবে সংসদীয় কাঠামোয় কমিউনিস্টরা কাজ করবে তার উদাহরণ জ্যোতি বসু। শ্রমজীবী, বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে ধরা তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়া সংসদীয় কাঠামোর ভেতর, দেখিয়েছেন তিনি।“

কারাটের কথায়, “বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে তিনি (জ্যোতি বসু) বলেছিলেন এরা ‘অসভ্য বর্বর’। এখন তারাই দেশে ক্ষমতায়। হিন্দুত্বকে রাষ্ট্রের দর্শনে পরিণত করার চেষ্টা করছে। কেবল নির্বাচন নয় মতাদর্শের লড়াইও করতে হবে এই শক্তির বিরুদ্ধে। আজ জ্যোতি বসুকে স্মরণ করে তাঁর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জরুরি। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষার পক্ষে বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করে লড়াই চালানো আজ অত্যন্ত জরুরি।“ এই প্রসঙ্গে জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন তিনি। তাঁর মতে, কুযুক্তি এবং অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো জরুরি। এদিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণেও শোকপ্রকাশ করেন কারাট। বলেন, “আমরা আজও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সীতারাম ইয়েচুরির শূন্যতা অনুভব করছি। এই কাজের শুরু থেকে তাঁরা ছিলেন।“

কিন্তু যে জ্যোতি বসুকে নিয়ে এতন গাল ভরা কথা বলছেন কারাট, তাঁকেই একসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে দেননি তাঁরা। সেই সময় তাঁর আদর্শে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা মনে হয়নি! দলের সেই সিদ্ধান্তকে “ঐতিহাসিক ভুল“ বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তাহলে, সেই মতকেও মান্যতা দেন তো কারাটরা? একই সঙ্গে বর্তমান কেন্দ্রের মোদি সরকারের জনবিরোধী বিলের বিরোধিতায় কেন সেভাবে সরব নয় তাঁর দল? সে বিষয় নিয়েও মন্তব্য নেই কারাটের মুখে।

২০২২-র ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর ১০৯তম জন্মবার্ষিকীতে এই রিসার্চ সেন্টারের কাজ শুরু হয়। কর্মীদের দানের টাকায় এই সেন্টারটি গড়ে উঠেছে বলে দাবি সিপিএমের। ১৭ জানুয়ারি, জ্যোতি বসুর মৃত্যুদিনে এটির উদ্বোধন হল।