কলকাতায় অটোচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বলতে গেলে অটোচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার তো বটেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে অটোচালকদের বিরুদ্ধে। কলকাতার বিভিন্ন রুটে যেমন অটোচালকদের বিরুদ্ধে সজোরে গান বাজানোর অভিযোগ ওঠে, তেমনি বেশি যাত্রী তোলার অভিযোগ নতুন নয়। আবার সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ অটো চালকদের বিরুদ্ধে।
অটোচালকদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। তারপরেও অবস্থার বিশেষ উন্নত হয়নি। ২০১৬ সালে তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী অটো নিয়ে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করার ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু, তারপরে বিষয়টি আর এগোয়নি। বেলেঘাটা থেকে সল্টলেকের রুটে অটোর অত্যাচার ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে যায়। শহরের যে কোনও রুটের তুলনায় এখানে যাত্রীভাড়া বেশি। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া গেছে।যেমন শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেলেঘাটা সেলস ট্যাক্স মোড়ের ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু সেই ভাড়া অটোচালকদের খুচরো না দিলেই, যাত্রীদের কপালে জোটে দুর্ব্যবহার। মহিলা বা পুরুষ কেউই এর হাত থেকে রেহাই পান না। কারণ, অটোচালকের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন স্টার্টার থেকে শুরু করে অন্য অটো চালকরা। দুদিন আগের ঘটনা।ঘড়ির কাঁটা বিকেল পাঁচটা ছুঁয়েছে। তপতী মজুমদার (নাম পরিবর্তিত)বেলেঘাটা সেলস ট্যাক্স মোড় থেকে অফিস করে অটোতে শিয়ালদহ স্টেশনে এসেছিলেন। তার অপরাধ ১০ টাকা ভাড়ার জন্য তিনি অটোচালককে খুচরো না থাকায় ৫০ টাকা দিয়েছিলেন।আর তাতেই গোঁসা ওই অটোচালকের।কেন তিনি আগে বলে ওঠেন নি, কেন নেই খুচরো ১০ টাকা এই প্রশ্ন তুলে সর্বসমক্ষে যাচ্ছেতাইভাবে মহিলাকে অপমান করলেন ওই চালক। সবাই দাঁড়িয়ে দেখলেন কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস দেখালেন না।আসলে ওই রুটে এটা নিত্য ঘটনা।এর সঙ্গে আছে ইচ্ছামতো সময় অনুযায়ী বাড়তি ভাড়া নেওয়া।
ইউনিয়ন যাত্রী ভাড়া ঠিক করছে কীসের ভিত্তিতে, কার সম্মতিতে বা কী পদ্ধতি মেনে, তার কোনও উপযুক্ত জবাব পাবেন না কারও কাছে। এই ধরনের ইউনিয়নের বেআইনি ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ মদতের ফলাফল হচ্ছে এক শ্রেণির অটোচালক দিনে রাতে যখন যেমন খুশি ভাড়া নিয়ে দিব্যি দুর্ব্যবহার করে চলেছেন যাত্রীদের সঙ্গে৷ বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের যেমন কোনও হেলদোল নেই, তেমনই মুখে কুলুপ এঁটেছেন ইউনিয়ন কর্তারা।ট্রেড ইউনিয়ন নেতা থেকে আরটিএ-র প্রতিনিধিরা দেখছি বলে দায় সারছেন।আসলে কেন্দ্রীয় ইউনিয়নের অটোর রুট ইউনিয়নগুলির ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই৷ কেউ কাউকে মানে না৷ এলাকার হরেক রকমের দাদা আছে, স্বঘোষিত ‘অটো দাদা ’ আছে। যার সঙ্গে লোকাল থানার দহরম যত তার কদর তত বেশি৷
অটোচালকরা যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বা তাদের হেনস্থা করেছেন জানতে পারলে এ বার স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ব্যবস্থা নেবে পরিবহণ দফতর। বেপরোয়া অটোচালকদের বাগে আনতে এবং তাদের উপরে নজরদারি চালাতে বেলেঘাটা-শিয়ালদহ স্টেশন রুটে আট জন এমভিআই (মোটর ভেহিক্লস ইনস্পেক্টর) নিয়ে দু’টি বিশেষ দল নামাচ্ছে পরিবহণ দফতর। অটো স্ট্যান্ডগুলির উপরে নজরদারি ছাড়াও অভিযোগ পেলে ঘটনাস্থলেই ব্যবস্থা নেবেন তারা৷
–
–
–
–
–
–
–
–
–