রিকশা চালিয়ে সত্যেনদার লাদাখ যাওয়ার রেকর্ড আজও অক্ষত

0
2

লাদাখের বিজ্ঞানী সোনম ওয়াচুংককে অনেকেই জানেন।‘থ্রি ইডিয়ট’-সিনেমার সোনম ওয়াংড়ু’কে একবার মনে করুন।সেই ওয়াচুংকের সঙ্গে লাদাখে দেখা করে এসেছিলেন নাকতলার বাসিন্দা সত্যেন দাশ। ওই বিজ্ঞানীর সঙ্গে দেখা করতে আসলে সত্যেনদা লাদাখ গিয়েছিলেন কীভাবে জানেন? নিজের রিকশা করে।আসলে রিকশা চালিয়ে দেশের দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছে যাওয়াটা তার বহুদিনের শখ। আর জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে তিন তিনবার রিক্সা নিয়ে লাদাখ গিয়েছেন সত্যেন দাশ।২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে লাদাখ যাওয়ার তার রেকর্ড আজও ভাঙতে পারেনি কেউ।

সময়টা ছিল নয়ের দশকের শুরু।সদ্য বিবাহিত এক যুবক সত্যেনের ইচ্ছা পুরী যাওয়ার।সেই সময়ে এলাকা থেকে পুরী ঘুরতে যাওয়া হচ্ছিল লাক্সারি বাসে।এক একজনের জন্য খরচ ঠিক হয়েছিল প্রায় চারশ টাকা। কিন্তু যুবক সত্যেনের হাতে অতো টাকা ছিল না। তিনি ট্যুর কন্ডাক্টরদের বলেছিলেন, এখন দুশো টাকা দিচ্ছি,  ফিরে এসে বাকি দুশো টাকা দেব।কিন্তু তারা রাজী হয়নি। কিন্তু যুবকের অদম্য জেদের কাছে সেদিন হেরে গিয়েছিলেন ট্যুর কন্ডাক্টররা। ভাইয়ের সাইকেল নিয়েই পুরি পৌঁছে গিয়েছিলেন সত্যেন। সেই শুরু। এরপর সাইকেলে ঘুরে এসেছেন ভারতের নানান প্রান্তে।নিজের বউ এবং ছোট্ট মেয়েও পুরী যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করল। তখন সবাইকে অবাক করে নিজের রিকশা নিয়েই সপরিবারে পুরী চলে যান চম্পাহাটি সাউথ গড়িয়ার সত্যেনদা।

এরপর ২০০৭ সালে রিকশা নিয়ে গিয়েছিলেন হিমাচল প্রদেশের মানালিতে।২০১৪ সালে বিশ্ব শান্তির বার্তা দিতে রিক্সা নিয়ে শ্রীনগর হয়ে লাদাখ যান। সেই সময় বিশ্ব উষ্ণায়ণ নিয়ে মানুষকে সতর্ক করতে পথে চলার সময় ৫ হাজার গাছের চারাও লাগিয়েছিলেন তিনি।রিক্সা নিয়ে তার লাদাখ যাওয়ার কথায় বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন, সহকর্মীদের থেকে পেয়েছিলেন বিদ্রুপ।জেদ আর অদম্য ইচ্ছাকে ভর করে সেদিন তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন। সেবার রিক্সা চালিয়ে কলকাতা থেকে বিশ্বশান্তির বার্তা নিয়ে শ্রীনগর হয়ে লাদাখের খারডুংলা পাস পর্যন্ত গিয়েছিলেন। যা জানার পর তাজ্জব বনে যান সকলেই। কেননা খারডুংলা পাস, বিশ্বের সব থেকে উঁচু গাড়ি চলাচলের রাস্তা। ওই রাস্তার উচ্চতা প্রায় ১৮ হাজার ৩৮০ ফিট। যেখানে বাইকে নিয়ে যেতেও উচ্চতার কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। সেখানে রিকশায় পৌঁছে যান সত্যেন দাশ।সেখানে পৌঁছতে পেরোতে হয় ডেড জোন জোজিলা পাস।সেখানে অক্সিজেনের সমস্যার পাশাপাশি যোগাযোগের ব্যবস্থাও নেই।যেখানে খাবারের কোনও ব্যবস্থা পাননি, সেখানে নিজেই রান্না করেছেন।

শুধু তাই নয়।পাহাড়ের প্রতি টানের পাশাপাশি যুব সমাজকে ইচ্ছাশক্তির পাঠ পড়ানোর উদ্দেশ্যে রিক্সা চালান সত্যেন দাশ।তিনি জানান, বর্তমান যুব সমাজের মধ্যে ইচ্ছাশক্তির অভাব আছে। তাই রিক্সা চালিয়ে  যুব সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান তিনি। রিক্সাচালক অভিযাত্রী সত্যেন দাশ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। সত্যেনকে নিয়ে নির্মিত হয়েছিল তথ্যচিত্র ‘লাদাখ চলে রিকশাওয়ালা’। সেই ছবি ২০১৮ সালে জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে ‘এক্সপ্লোরেশন/ অ্যাডভেঞ্চার’ ফিল্ম হিসাবে সেরার শিরোপা পেয়েছিল। দাদাগিরির মঞ্চে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।  ইতিমধ্যেই ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ড’- এ মনোনীত হয়েছে তার নাম। লাদাখ, সিয়াচেন, কাশ্মীর বা কন্যাকুমারী থেকে রিকশা নিয়ে ফিরেও এসেছেন। ফেরার পর তার ঠিকানা  নাকতলা মেট্রো স্টেশনের বাইরের রিকশা স্ট্যান্ড।

1.
2.

3.
4.
5.
6.
7.
8.
9.
10.