বঙ্গবন্ধুর মূর্তিতে হাতুড়ি! গণভবনে ভুরিভোজে বাংলাদেশে পালাবদল

0
3

রাজনৈতিক পালাবদলে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ মানুষের মৃত্যুর পরেও পৈশাচিক উল্লাসের ছবি বন্ধ হল না। যে মুজিবর রহমান নিজের জীবনের সর্বস্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, আন্দোলনকারীরা ক্ষমতা হস্তান্তরের ছুতোয় তাঁরই মূর্তির উপরে উঠে, তাঁরই মুখে-মাথার উপর হাতুড়ি চালালো। দেশের সুষ্ঠু শাসনের দাবি জানাতে জাতির জনকের মূর্তিকেই মাটিতে নামিয়ে আনল উন্মত্ত জনতা। কোথাও তাঁর ছবি দিয়ে তৈরি ভাষ্কর্যে পড়ল শাবলের ধাক্কা। তাঁর স্মৃতিমাথা সব কিছু নিয়ে তৈরি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাউদাউ করে জ্বলে যায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ তৈরির মুজিবরের লড়াইয়ের একটা অধ্যায়।

হাসিনা সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনের অভিমুখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার মুহূর্ত থেকে যেন সরাসরি মুজিব বিরোধী হয়ে দাঁড়ায় সোমবার। সেই সঙ্গে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। সেনাপ্রধান দেশের মানুষের কাছে শান্তি প্রতিষ্ঠার আবেদন জানালে তা ভাইরাল হতে সময় লাগলেও নিজের বাসভবন গণভবন ছেড়েছেন হাসিনা সেই খবর ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। হাজার হাজার জনতা স্রোতের মত ঢুকে পড়ে গণভবনের গেট থেতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ঘরের ভিতর পর্যন্ত। কেউ বিছানায় শুয়ে উল্লাস করতে থাকেন। কেউ খাবারের সুলুক সন্ধান করতে থাকেন। গণ আন্দোলন কার্যত ইরাকের গণঅভ্যুত্থানের চেহারা নেয়। গণভবনের পরিখার জলে সাঁতার কেটে, নৌকা চালিয়ে মাছ ধরতেও বাকি রাখেননি আন্দোলনকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বালিশ, কম্বল থেকে জামদানি শাড়ি, রুইমাছ ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সর্বশেষে বাসভবনের আসবাব তুলে নিয়ে যেতেও দেখা যায় লুঠেরাদের। ‘গর্বের দিন’ নিজেরাই ফোনে বন্দি করে ভাইরাল করতেও দুবার ভাবেননি আন্দোলনকারীরা।

দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা হওয়ার আগেই হামলা চালানো হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ-উজ-জামান খানের বাসভবনে। রীতিমত বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয় সেখানে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামীর বাড়ি সুধা সদনে হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাদ যায়নি সাধারণ মানুষের দোকানপাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও। ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে উন্মত্ত মানুষ। বাংলাদেশ সংসদ ভবন বা হাইকোর্টের বাইরে সেনা মোতায়েন থাকলেও সংসদ ভবনের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করতে দেখা যায় তাদের।

যদিও এক শ্রেণির আন্দোলনকারীকে ঢাকা শহরের বড় রাস্তার উপর দিয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা করতে দেখা যায়। ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা পডু়য়াদের দেখা যায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সৌহার্দ্যের নজির তুলে ধরতে। কেউ তাঁদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দেন। কেউ তাঁদের আলিঙ্গনও করেন। অনেকেই রাস্তার মাঝে বসে দেশের ক্ষমতা বদলের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে নমাজ পড়েন।