খাস কলকাতার প্রাচীন বেসরকারি আর্ট গ্যালারিতে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর (Nandalal Basu) জাল ছবি! অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় রাজ্যের শিল্পী মহল। সাধারণ দর্শকদের ধোকা দেওয়া গেলেও, শহরের শিল্পী-ভাস্কর-শিল্প সমঝদারদের ধোকা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এই ছবির প্রদর্শনীতে নকল ছবি রাখা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে শিল্পীদের দাবি, সিরিজটিতে আঁকা চরিত্রগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘নখ’ নেই। শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু এই বিষয়ে অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন বলে মত শিল্প মহলের তিনি তার চরিত্রের প্রত্যেকটির নখ আঁকতেন। প্রদর্শনী সম্পর্কে মতামত লেখার খাতাতেও অনেকেই লিখছেন, একটি ছবিও শিল্পাচার্যের আঁকা নয়, সব নকল!

‘নন্দলালের মহাভারত’ শীর্ষক ৩০টি ছবির প্রদর্শনী চলছে দক্ষিণ কলকাতার (Kolkata) চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে। ৩১ মে পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। আয়োজক প্রভাস কেজরিওয়াল এবং আশাতীত হালদার (চারুলতা)। কিন্তু অভিযোগ প্রদর্শনীর ছবিগুলি সম্ভবত শিল্পাচার্যের আঁকাই নয়। প্রবীণ ভাস্কর তাপস সরকার (Tapas Sarkar) এই অভিযোগ তোলেন। বরোদার মহারাজ কীর্তিমন্দির অলঙ্কৃত করার ভার দিয়েছিলেন নন্দলালকে। তার আগে একটি খসড়া তৈরি করেছিলেন নন্দলাল। সেই খসড়া রয়েছে দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্টে। যেসব শিল্পী সেটা দেখেছেন তাঁদের কথায়, সেই খসড়ার ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত বিস্তর ফারাক।
জাল ছবির বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে ‘দ্য ইন্ডিয়ান কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ড্রাফ্টম্যানশিপ’। সেই সংগঠনের অধ্যাপক শমীন্দ্রনাথ মজুমদার নিজে প্রদর্শনীতে না গেলেও তাঁকে প্রদর্শিত ছবির ফোটো তুলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন শিল্পীরা। শমীন্দ্রনাথ জানান, ছবির নীচে সইয়ের উপর সিল মেরে দিতেন নন্দলাল বসু। কিন্তু প্রদর্শিত ছবিগুলির অধিকাংশ ‘সিল’ হাতে আঁকা বলে মনে হয়েছে শমীন্দ্রনাথ।
এবে এই প্রথম নয়, এর আগেও চিত্রকূট আর্ট গ্যালারির বিরুদ্ধে জাল ছবির প্রদর্শনীর অভিযোগ ওঠে। তবে, এবার খোদ নন্দলাল বসুর ‘জাল’ ছবি নিয়ে অভিযোগ। আয়োজক প্রভাস কেজরিওয়ালে অবশ্য দাবি, তাঁরা রামান স্পেক্ট্রোস্কপি পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখেছেন, ছবি ওই সময়েরই। এই দাবিকে হাস্যকর বলে শিল্পীদের মত, যেমন রবীন্দ্রনাথের সময়ের লেখা মানেই তা রবীন্দ্রনাথের হয়ে যায় না, তেমনই নন্দলাল বসুর সমসাময়িক ছবি হলেই তাঁর আঁকা ছবি তা প্রমাণ হয় না।
ছবিপ্রাপ্তি নিয়ে আয়োজকদের দাবি ঘিরেও উঠছে প্রশ্ন। কারণ তাঁরা বলছেন, এই সব ছবি তাঁরা পেয়েছেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইয়ের নাতনির কাছ থেকে। তাপস সরকারের কথায়, নন্দলাল বসুর ছবি রবীন্দ্রনাথের পরিবারের কাছে গেল কীভাবে? এমন কোনও ঐতিহাসিক তথ্য নেই। জাতীয় বাংলা পরিষদের সভাপতি ডা. অরিন্দম বিশ্বাসের অভিযোগ, কিছু অবাঙালি ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে প্রথিতযশা বাঙালি শিল্পীদের শিল্পের অপমান করছেন।











































































































































