সকাল থেকে বিরাট তোড়জোড় – ফুল, বেলুন, মালা। সাজলো গোটা অ্যাম্বুল্যান্স (Ambulance)। বাড়িতে যে লক্ষ্মী আসছে, উৎসাহে উত্তেজনায় যেন চোখে জল নাসিরুলের। কে বলবে এটা সেই দেশ যেখানে কন্যা সন্তানকে দুর্ভাগ্য বলে ভাবা হয়! কন্যাসন্তানদের রক্ষা করার জন্য সরকারকে আলাদা করে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্প বানাতে হয়! আর যেখানেই সেসব হোক এই বাংলায় যে মেয়েরা কতটা সুরক্ষিত আর সৌভাগ্যের প্রতীক তা আবার প্রমাণ করে দিল বীরভূমের (Birbhum) লাভপুরের (Lavpur) বাসিন্দা নাসিরুল ইসলাম।
গত ৩ ডিসেম্বর কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় নাসিরুলের স্ত্রী সাবিয়া খাতুন। এটাই তাদের প্রথম সন্তান। এর আগে পরিবারের বড় ভাই কবিরুলের দুই ছেলে এক মেয়ে। মাঝের দাদার এক ছেলে এক মেয়ে। তারপরেও কন্যাসন্তান হওয়া নিয়ে যেন আলাদা ভাবনাই নেই নাসিরুল বা তার পরিবারের। তাঁর কথায়, “চেয়েছিলাম যে আসছে সে যেন সুস্থ থাকে। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মেয়েরা হল মা লক্ষ্মী। লক্ষ্মীকে বরণ করে ঘরে নিয়ে এসেছি। মেয়েরা সব দিকে এগিয়ে চলেছে। সরকার (State Government) তাদের জন্য এত কিছু করছে। তার পরেও মেয়েদের অবহেলা করাটা অন্যায়।” গ্রাম বাংলার বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এই যুবক শুধুমাত্র সন্তানের পিতা হওয়ার আনন্দেই ডগমগ। লিঙ্গ বিচার যে বাবার সাজে না, তাও যেন দেখিয়ে দিল নাসিরুল।
তবে সদ্যোজাতকে ঘরে নিয়ে যেতে বাবার এই উৎসাহ দেখে সবথেকে নিশ্চিন্ত সাবিয়ার পরিবার। শ্বশুর মোস্তফা আহমেদ শেখের কথায়, এটাই তাঁদের মেয়ের প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় খানিকটা আশঙ্কা তাঁদের ছিল। আদৌ কী শ্বশুরবাড়ি মেনে নেবে? কিন্তু জামাই নাসিরুলের আনন্দ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁরাও। ইতিমধ্যেই সদ্যোজাতর নাম রাখা হয়েছে হেযা মেহের (Meher), যার অর্থ অমূল্য এবং দয়ালু।