ভারতীয় ফৌজদারি আইনের পরিবর্তে নতুন প্রণীত ভারতীয় দণ্ডসংহিতাকে নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ৮৫ পাতার একটি ডিসেন্ট নোট জমা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অন্তর্গত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ততৃণমূলের (TMC) রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O’Brian)। এই ডিসেন্ট নোটে ডেরেক ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন কেন তিনি এবং তাঁর দল তৃণমূল ভারতীয় দন্ড সংহিতার বিরোধিতা করছে।

ডেরেকের আপত্তির মূলে থাকা প্রধান অভিযোগ হল, ফৌজদারি আইন বদলে ফেলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারী নতুন প্রস্তাবিত সংশ্লিষ্ট তিনটি বিলের খসড়া আসলে ফৌজদারি আইনের ৯৩ শতাংশ কপি-পেস্ট মাত্র৷ নতুন বিল প্রণয়ন না করে পুরোনো বিলটিকে প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার করলেই সমস্যার সমাধান অনায়াসে হয়ে যেত। এই মর্মেই ডেরেক তাঁর ৮৫ পাতার ডিসেন্ট নোটে দাবি করেছেন, বিলটির খসড়া অনুমোদনের আড়ালে সরকারপক্ষ আসলে সংসদীয় কমিটির বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়াটিকে বুলডোজ করতে চাইছে। ডেরেকের অভিযোগ, সংসদীয় প্রথা মেনে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। লিখিত আপত্তিতে তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে শাসকদলের যোগ রয়েছে অথবা আগে ছিল। ডেরেকের (Derek O’Brian) মতে, দিল্লিতে ঠাণ্ডা ঘরে বসে আইন তৈরি করা হয়েছে। যে আইন দেশের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে জড়িত, সেই আইন তৈরির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ফিল্ড ওয়ার্ক না করে সংসদীয় প্রথাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, এলজিবিটি, মহিলাদের দিকটি নিয়ে যথাযথ চর্চা করা হয়নি। শুধুমাত্র হিন্দিতে না করে বিলটিকে ইংরাজিতেও রাখতে হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, উৎসবের সময়েও বৈঠক হয়েছে। সেই সময় সাংসদদের অন্যত্র কর্মসূচী স্থির থাকায় তাঁরা ঠিকমত মতামত দিতে পারেননি। এমনকী, খসড়া রিপোর্ট তৈরিতেও মাত্র ৫ দিনের সময় দিয়ে অত্যন্ত তরিঘরি করা হয়েছে।

ডিসেন্ট নোটে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস বা যে কোনও ধরণের সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে শাস্তির সুপারিশের বিরোধিতা করেছেন ডেরেক ও ব্রায়েন। কারণ, তাঁর মতে, এটি পুরোপুরি ব্যক্তিগত বিষয়। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে ফিরিয়ে আনা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। অনেক ক্ষেত্রেই আইন কমিশনের বিপরীত বিধি রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। অবহেলার কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৭ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ৫ বছর করার সুপারিশ করেছেন ডেরেক। কারণ, হিসেবে ডেরেক উল্লেখ করেছেন, যে কোনও রকমের ব্যর্থতাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলা নয়। কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিজলালকে দেওয়া ৯টি চিঠিও যুক্ত করা হয়েছে ডিসেন্ট নোটে।

তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে ডেরেক তাঁর ডিসেন্ট নোটে উল্লেখ করেছেন, ২০২০ সালে জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রণবীর সিং-র নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি কমিটি গঠন করেছিল ফৌজদারি আইনের সংস্কারের বিষয়ে৷ কিন্তু সেই কমিটির রিপোর্টে বহু গঠনমূলক ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দিয়েছিল বলে তাঁর দাবি৷ ডেরেকের প্রস্তাব, ইন্ডিয়ান জাস্টিস কোড ২০২৩, ইন্ডিয়ান প্রোটেকশন কোড ২০২৩ এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স বিল ২০২৩ নাম রাখা হোক বিল তিনটির৷
রাষ্ট্রদ্রোহিতা ইস্যুতে সরকারকে নিশানা করে ডিসেন্ট নোটে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইস্যু তুলে ধরেছেন ডেরেক ও ব্রায়েন৷ তাঁর অভিযোগ, আইন কমিশন রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যার কথা বললেও সরকার সেই রাস্তায় হাঁটেনি৷ তারা মুখে রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন বিলুপ্তির কথা বললেও আসলে তা করা হয়নি, এমনকী আগের তুলনায় অনেক তীব্র ভাবে তা বলবত্ করার চেষ্টা হচ্ছে। গোটা পদক্ষেপকে বিরোধীদের নিশানার প্রচেষ্টা বলেই অভিযোগ তাঁর।
এদিকে অর্থনৈতিক অভিযুক্তদের হাতকড়া পড়ানো যাবে না। তাঁদের ধর্ষণ, খুনের মতো জঘন্য অপরাধীদের সঙ্গে এক সারিতে রাখা যাবে না। ভারতীয় দণ্ড সংহিতা নিয়ে রিপোর্টে সুপারিশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বক্তব্য, হাতকড়া ব্যবহার করা উচিত, জঘন্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে। কমিটির তরফে অর্থনৈতিক অপরাধ শব্দটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।





































































































































