রাত পোহালেই মিজোরাম-সহ পাঁচরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমদফা। গত নয় বছরে এই প্রথম কোনও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে যেতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। ৭ নভেম্বর একদফাতেই ভোট মিজোরামে।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি থাকলে শেষ মুহূর্তে মিজোরামে (Mizoram) নির্বাচনী প্রচার বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। বিরোধীদের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রতিবেশী রাজ্য মিজোরামে গেলে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসবে মনিপুর প্রসঙ্গ। অস্বস্তি এড়াতেই পূর্ব নির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও মনিপুরের প্রতিবেশী রাজ্য মিজোরামে প্রচারে যাননি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জেপি নাড্ডা (JP Nadda)।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে ‘শোলে’র ছায়া, ভোট যুদ্ধে জয়-বীরু বনাম গব্বর
কয়েক দশক ধরে, কংগ্রেস এবং মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসছে মিজোরামে। কংগ্রেসের পি লালথানহাওলা এবং মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের পি জোরামথাঙ্গা পর্যায়ক্রমে মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। জোরামথাঙ্গার আগে, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা লালডেঙ্গা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বিজেপি উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও উপজাতীয় এবং খ্রিস্টান অধ্যুষিত মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং মনিপুরে বিজেপি এখনও যে দুর্বল তা বলাই বাহুল্য। গত বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পেয়েছিল বিজেপি।
কংগ্রেস মুক্ত উত্তর-পূর্ব ভারত’ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন শাহ। মঙ্গলবার, এই রাজ্যে ফের বিধানসভা ভোট। মনিপুরে লাগাতার হিংসার আবহে মিজোরামের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে নজর দেশবাসীর। একইসঙ্গে এখানে বাড়তি নজর কংগ্রেসের। হারানো ক্ষমতা তারা দখল করতে পারবে নাকি শাহের বাণী সত্যি করে কংগ্রেস মুক্তই থাকবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, আসতে চলেছে তারই উত্তর।
নির্বাচনী ইতিহাস মেনে যেভাবে মিজোরামে প্রতিবার সরকার পাল্টায় সেই অনুযায়ী ভোটের ধারা মেনে এ বার কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার কথা। ৪০টি আসনের মিজোরাম বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ২১। যুযুধান প্রধান তিনদল শাসক মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ), প্রধান বিরোধী জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম) এবং প্রাক্তন শাসক দল কংগ্রেস সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপি লড়ছে ২৩টিতে। সব মিলিয়ে ১২৭৬টি বুথে ১৭৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন সে রাজ্যের প্রায় ৮ লক্ষ ৫২ হাজার ভোটদাতা। গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন এমএনএফ প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা (আইজল পূর্ব-১), উপমুখ্যমন্ত্রী তাওনলুইয়া (তুইচাং), বিরোধী দলনেতা লালডুহোমা (সেরচিপ), প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি লালসাওতা (আইজল পশ্চিম-২)।
শাসকদল এমএনএফ ২০১৬ সাল থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ‘নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ (নেডা)-র এর সদস্য হলেও মনিপুরের সাম্প্রতিক গোষ্ঠী হিংসার জেরে পদ্ম-বিরোধী সুর চড়িয়েছে। এমনকী, এমএনএফ প্রধান তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা প্রকাশ্যে বলেছেন, “আগামী লোকসভা ভোটের পর নরেন্দ্র মোদি আর দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না।” এদিকে মে মাসের গোড়া থেকে শুরু হওয়া মনিপুর হিংসার জেরে প্রায় ১৩ হাজার কুকি-জো মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে এ বারের ভোটে মণিপুর হিংসা মিজোরামে অন্যতম বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে জনমত সমীক্ষা বলছে, ৪০ আসনের বিধানসভায় এমএনএফ এবং কংগ্রেস কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ২১ ছুঁতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আট থেকে ১২টি আসন পেয়ে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে লালডুহোমার দল জেডিপিএম। এবিপি-সি ভোটার সর্বশেষ জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, এমএনএফ ১৭-২১, কংগ্রেস ৬-১০, জেডপিএম ১০-১৪ এবং নির্দল, বিজেপি ও অন্যেরা মিলে ০ থেকে ২টি বিধানসভা আসনে জিততে পারে। ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতিতে একদা কংগ্রেস নেতা এবং পরবর্তী কালে বিজেপির সহযোগী লালডুহোমা কী করবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে মিজোরামে।