কমছে ক্ষমতাধীন রাজ্যের সংখ্যা, উত্তর-পূর্ব ছাড়া দেশের বাকি অংশে ফিকে গেরুয়া

0
4

কর্নাটকে বিজেপির (BJP) ভরাডুবি আপাতত দৃষ্টিতে একটা বিধানসভা ভোটে হার মনে হলেও, জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব যথেষ্ট। প্রথমত কন্নড়ভূম হাতছাড়া হওয়ার পরে দক্ষিণ ভারতে আর কোথাও পদ্ম ফুটে নেই। একই সঙ্গে সারাদেশে বিজেপি ক্ষমতায় থাকা রাজ্যের সংখ্যা ১৯ থেকে কমে ১৫-তে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে একমাত্র উত্তর-পূর্ব ভারতছাড়া দেশের অন্যান্য অংশে ফিকে হচ্ছে গেরুয়া।

অন্যদিকে, দেশের মোট ৭ টি রাজ্যে ক্ষমতায় আছে কংগ্রেস। গত ৫ বছরে হওয়া ৩১ বিধানসভার ভোটে তিনটিতে ক্ষমতায় আসে হাত-শিবির। তবে বেশ কয়েকটি জায়গায় কংগ্রেসের (Congress) ঘর ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতা দখল করে পদ্ম শিবির। সেই কারণেই কর্নাটকের ভোটের আগে অপারেশন লোটাসের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন হাসতা’-র (অপারেশন হাত) হুঁশিয়ারি দিয়েছিল কংগ্রেস। তবে কর্নাটকে সেই দড়ি টানাটানিতে যেতে হয়নি হাত শিবিরকে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে তারা।

কর্নাটকের আগে ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের ভোটে বিজেপি একমাত্র ত্রিপুরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডেও জোট করে সরকারে পদ্মশিবির। তবে, এখন উত্তর-পূর্ব ভারতে তাদের অবস্থা সবচেয়ে ভাল। যদিও ২০১৬- আগে সেখানে কার্যত বিজেপির অস্তিত্বই ছিল না।

২০১৮-য় মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিসগড়-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়। একটিতেও জিততে পারেনি পদ্ম শিবির। সরকার গঠনের এক বছরের মাথায় মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে ফের ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। কারণ সেখানে তারা কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে পাশে পেয়েছিল।
রাজস্থানে শচীন পাইলটকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল গেরুয়া বাহিনী। কিন্তু সূত্রের খবর, সেই ফর্মুলা কার্যকর হয়নি। কারণ, শচীনকে নেওয়ার বিষয়ে আপত্তি করেন স্বয়ং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া।

২০১৯-এ দেশে সাত রাজ্যে ভোট হয়। শুধুমাত্র অরুণাচলপ্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি। তবে ঘোড়া কেনাবেচা করে তিন রাজ্যে সরকার গড়ে তারা। মহারাষ্ট্রেও শিবসেনার বিধায়কদের ভাঙিয়ে সরকার গড়ে বিজেপি জোট। কিন্তু সেখানে সরকারের বৈধতা নিয়ে জল গড়িয়েছে আদালতে।

২০২০-তে দিল্লি ও বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। দিল্লিতে আপের কাছে নাস্তানাবুদ হয় গেরুয়া শিবির। বিহারে নির্বাচনের আগে জেডিইউ-র বিরুদ্ধে নির্দল বা অন্য দলের প্রার্থীকে সমর্থন করে বিজেপি। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাতেও আসেনি। পরে জেডিইউ-র হাত ধরে ক্ষমতায় আসে পদ্ম শিবির। ২০২২-এ পদ্ম ছেড়ে আরজেডির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার টিকিয়ে রেখেছেন জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার।

২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট হয়। একটিতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি গেরুয়া শিবির। বাংলায় বিজেপিকে দুরমুশ করে দেয় তৃণমূল (TMC)। নির্দলদের সঙ্গী করে পুদুচেরিতে এবং অন্যদলের সমর্থন নিয়ে অসমে সরকার গড়ে বিজেপি।

২০২২-এ সাত রাজ্যের ভোটে বিজেপি চারটিতে সরকার গঠনের অবস্থায় আছে। তবে দল ভাঙিয়ে সরকার গঠন করে পাঁচ রাজ্যে।

২০২৩-এ এখনও পর্যন্ত চারটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। বিজেপি একমাত্র ত্রিপুরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। কিন্তু তিন রাজ্যে সরকার গড়ছে তারা।

অর্থাৎ ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে গেরুয়া। উত্তর-পূর্ব ভারতকেই তারা আপাতত তাদের শক্ত ঘাঁটি বলে করছে। সে ক্ষেত্রে বাংলার প্রতিরোধ তাদের কাছে নিঃসন্দেহে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই জন্যই বিভিন্নভাবে তারা বাংলার তৃণমূল সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে আর কোনও দিক থেকেই হালে পানি পাওয়ার মতো জায়গায় নেই বিজেপি। সেটা বুঝতে পেরেই উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে সমর্থন আদায়ের মরিয়া চেষ্টায় নেমেছে মোদি-শাহ ব্রিগেড। আর সেখানেই কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই পরিস্থিতিতে সব আঞ্চলিক, বিজেপি-বিরোধী দলগুলি জোটবদ্ধ হলে এবং কংগ্রেস তার অহং ছাড়লে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির পাশা পাল্টে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।