থেমে গেল ঔদ্ধত্যের আস্ফালন: ‘হাত’ঝড়ে দক্ষিণে সাফ বিজেপি

0
3

১. “বিজেপিকে ভোট না দিলে মোদির আশীর্বাদ পাবে না কর্নাটক”, ২. “কর্নাটকে দাঙ্গা হবে, যদি বিজেপিকে ক্ষমতায় না আসে”, ৩. “আমি যা বলি ভারত তাই বলে, মোদিই ভারত।”

এত ঔদ্ধত্য! এত আস্ফালন! ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করা মোদির গালে সজোরে থাপ্পড় কষাল কর্নাটকের জনতা। ২০১৮ সালে জনগণকে প্রতারিত করে ঘোড়া কেনাবেচায় ‘ঘুষ’ দিয়ে ক্ষমতা চুরি করা বিজেপিকে, ঘাড় ধরে মাটিতে মিশিয়ে দিল নির্বাচনী ফলাফল। কংগ্রেসকে এনে দিলো নিরঙ্কুশ জয়। একই সঙ্গে বিজেপির চোখে চোখ রেখে বুঝিয়ে দিল, ‘শনি’র দশা সবে শুরু, পিকচার আভি বাকি হে।

বুথ ফেরৎ সমীক্ষা আগেই আভাষ দিয়েছিল কর্নাটকে দর্প চূর্ণ হতে চলেছে মোদি-শাহদের। শনিবার সকালে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখা যায় বিজেপিকে পিছনে ফেলে ১১৯ আসনে এগিয়ে রয়েছে কংগ্ৰেস। বিজেপি মাত্র ৮১। বেলা যত বাড়তে থাকে আশা ততই নিভতে থাকে পদ্ম শিবিরের। বিকেলের পর(তখনও সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশ্যে আসেনি) কার্যত শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে বিজেপির দলীয় কার্যালয়গুলিতে। অন্যদিকে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে হাত শিবির। নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর দেখা যায় ১৩৫ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে কংগ্রেস। বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৬৪ আসন। অন্যদিকে ১৯ আসন পেয়েছে জিডিএস।

বলার অপেক্ষা রাখে না সামনে ২৪এর কঠিন লড়াই, তার আগে একের পর এক রাজ্যে ডুবতে বসা কংগ্ৰেস বুক ভরে অক্সিজেন নিল কর্নাটক থেকে। পাশাপাশি একদিকে ২৪এর লড়াইকে নজরে রেখে বিরোধীরা যখন কোমর কষতে শুরু করেছে ঠিক সেই সময় যুদ্ধের ময়দানে কর্নাটক আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিল মহাজোটের।

যে পথে যুদ্ধ জয়
মধ্য ও উত্তর ভারতের অংকে কর্নাটকেও শুরু থেকে মেরুকরণের তাস খেলেছিল বিজেপি। বিজেপি নেতাদের নির্বাচনী প্রচারে ইস্যু করা হয়েছিল, হিন্দু মুসলিম বিভাজন, হিজাব, বজরংবলী, দাঙ্গা, টিপু সুলতানের প্রতি বিদ্বেষকে। ঠিক অন্য পথে সর্বধর্ম সমন্বয়, শান্তি ও হিন্দু মুসলিম ঐক্যকে সামনে রেখে পথ হেঁটেছিল কংগ্রেস। নির্বাচনী ইস্তেহারে হাত-শিবিরের তরফে জানানো হয়েছিল, ক্ষমতায় এলে কট্টর মুসলিম সংগঠন PFI এর মত উগ্র হিন্দুত্ববাদী বজরং দলকে নিষিদ্ধ করা হবে। পাশাপাশি ইস্তেহারে সবচেয়ে বড় চমক ছিল ক্ষমতায় এলে কর্নাটকে মহিলাদের মাসিক ভাতা দেবে কংগ্রেস। বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য তৈরি করা হবে কর্মক্ষেত্র।

পাশাপাশি একদিকে যখন কর্নাটকে ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন ও ধর্মীয় ভেদাভেদহীন রাজ্য গঠনের আশ্বাস দিচ্ছে কংগ্রেস। ঠিক সেখানেই বিজেপির উগ্র আস্ফালন ও ঔদ্ধত্য ভালোভাবে নেয়নি জনতা। ভোট প্রচারে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার বার্তা ছিল, “বিজেপিকে ভোট না দিলে মোদির আশীর্বাদ পাবে না কর্নাটক”, অমিত শাহ নিদান দিয়েছিলেন “কর্নাটকে দাঙ্গা হবে, যদি বিজেপি ক্ষমতায় না আসে”। সর্বোপরি শততম মন কি বাতে মোদির ঔদ্ধত্য, “আমি যা বলি ভারত তাই বলে, মোদিই ভারত,” ভালো চোখে নেয়নি কর্নাটকের সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, ২০১৮ সালে কর্নাটকবাসীর সঙ্গে প্রতারণার জবাব দিল জনগণ। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৮ সালে কর্নাটকের নির্বাচনে কংগ্ৰেস ও জেডি(এস)-এর বিরুদ্ধে টাকার অস্ত্র প্রয়োগ করে বিজেপি। বিধায়ক কিনে নির্বাচিত জোট সরকারকে ফেলে দিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। শনিবার কর্নাটকবাসীর সঙ্গে সেই প্রতারণার জবাব পেল গেরুয়া শিবির।

কর্নাটকে জয়ের পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জানান, “কর্নাটকে ঘৃণার বাজার বন্ধ হয়েছে। ভালবাসার দোকান খুলে গিয়েছে। এটা কর্নাটকের মানুষের জয়। কর্নাটকে কংগ্রেস গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এটা সবার জয়। কর্নাটকের জয়। আমরা নির্বাচনে কর্নাটকের জনতার কাছে পাঁচটি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সেটা পূরণ করব।” পাশাপাশি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, “কর্নাটকের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জয় এটি। এই জয় ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করতে রাজনীতির জয়।” কর্নাটকে ধরাশায়ী হওয়ার পর বুকে পাথর চেপে কংগ্রেসকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “এটা ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির শেষের শুরু। চরম ঔদ্ধত্য, অহংকার, এজেন্সি পলিটিক্সের ফল ভোগ করছে BJP। কর্নাটকে (Karnatak) যে ভাবে ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি, সেভাবেই লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হবে তাদের। ১০০ পেরোবে না।”