সোমনাথ বিশ্বাস
ব্রিগেড হোক কিংবা ধর্মতলা, এই বঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের মেগা সমাবেশ দেখতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। বাম জমান হোক কিংবা বর্তমানে তৃণমূলের শাসন, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের একযুগ পেরিয়েও সমাবেশের ছবি কিন্তু একই আছে। যদিও এবারের একুশের জনসুনামি অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে এই বাংলার মানুষ আরও একটি ছবি দেখতে অভ্যস্ত। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ কিংবা জলপাইগুড়ি থেকে জঙ্গলমহল, আগত কর্মী-সমর্থকরা “রথ দেখা কলা বেচা” করে থাকেন। অর্থাৎ, দূরের জেলাগুলি থেকে সপরিবারে আসা মানুষজন মূল সমাবেশের বাইরে তিলোত্তমারকে ঘুরে দেখার সুযোগ মিস করেন না। কেউ যান চিড়িয়াখানা তো কেউ আবার ভিক্টোরিয়া, যাদুঘর!

এবার অবশ্য সেই দৃশ্য কিছুটা কম পড়েছে চোখে। কিন্তু এবার দেখা গেল এক অন্য চিত্র। কালীঘাটে হাজার হাজার মানুষের ঢল। কালী মা নয়, বরং চ্যাটার্জি স্ট্রিটে স্বয়ং মমতাময়ী মায়ের “মন্দির” দেখতেই ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁরা। অর্থাৎ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর একচিলতে বাড়ি দেখতে উৎসুক তাঁর ভক্ত, অনুগামী দূর-দুরন্ত থেকে আসা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।
কেউ এসেছেন বর্ধমান বর্ধমান থেকে তো কেউ জলপাইগুড়ি। ওদিকে ধর্মতলায় তখন শুরু হয়ে গিয়েছে সভা। তখন প্রবল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি মাথায় করেই একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে বক্তৃতা রাখছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে যেমন লক্ষ লক্ষ মানুষ সভায় ভাষণ শুনছেন, ঠিক একইভাবে কালীঘাটে নেত্রীর বাড়ির সামনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় উপেক্ষা করেও নেত্রীর বাড়ির সামনে উপচে পড়া ভিড়। তখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলার উদ্দেশ্যে রওনা দেননি।

একুশের সমাবেশে আসা মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শোনা তো বটেই বাড়তি লাভ যদি তাঁর বাড়িটা দেখা যায়। সেই উদ্দেশেই জেলা থেকে আসা মানুষজন সকাল থেকেই ভিড় জমালেন কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে। তাঁরা একবার তৃণমূল নেত্রীর ঘর দেখতে চান। কিন্তু নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পাহারায় থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অধিকারিকরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সামনে। পরে অবশ্য ৮ থেকে ১০জন করে মানুষকে খেপে খেপে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি দেখার সুযোগ করে দেয় পুলিশ।

সুদূর বাঁকুড়া থেকে এসেছেন চায়না সরকার, শিবানী বিশ্বাস, নেত্রীর বাড়ি দেখে “থ” তাঁরা। এতবড় মাপের একজন মানুষ এত ছোট ঘরে থাকে শুনেছিলেন, কিন্তু এবার যে তাঁরা স্বচক্ষে দেখলেন। বললেন, “আমরা গরিব মানুষ। কিন্তু এত ছোট বাড়িতে আমরাও থাকি না। আর এখানে কিনা দিদির মতো সাক্ষাৎ একজন ভগবান থাকেন। আমরা দুঃখ পেয়েছি। ওনার আর একটু ভালো বাড়িতে থাকা দরকার। এখন উনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাই একটু ভালো বাড়িতে উনি থাকুন, আমরা সকলে সেটাই চাইছি।
একুশের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেন তীর্থক্ষেত্র হয়ে ওঠে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি।
আরও পড়ুন- কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিশা দেখাবেন নেত্রী, মন্তব্য পার্থর




































































































































