সেনায় নিয়োগে কেন্দ্রের অগ্নিপথ স্কিমের (Agnipath Scheme) বিরুদ্ধে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বিহার, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশে। বিহারে ট্রেনে আগুন, পাথর ছোড়া, বাস ভাঙচুর চলেছে অবাধে। হরিয়ানাতেও রাস্তা অবরোধ হয়েছে অধিকাংশ জায়গায়। উত্তরপ্রেদেশ রাস্তায় টায়ার জ্বেলে চলেছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভের আঁচ লেগেছে পশ্চিমবঙ্গেও।
আরও পড়ুনঃ Breakfast news: ব্রেকফাস্ট নিউজ
অগ্নিপথ ইস্যুতে হাওড়া ব্রিজে পথ অবরোধের চেষ্টা। বেশ কয়েকজন যুবক মিছিল করে কলকাতা যাওয়ার পথে তারা হাওড়া ব্রিজ অবরোধের চেষ্টা করে। ঘটনাস্থলে আসে নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ এবং হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা। তারা বিক্ষোভকারীদের ব্রিজ থেকে সরিয়ে দেয়। এর ফলে বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হয়।
তেলঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ১৯ বছরের এক তরুণের। তাঁর বাড়ি ওয়ারাঙ্গেলে বলে জানা গিয়েছে। একই ঘটনায় ১৫ জন বিক্ষোভকারী ঘায়েলও হয়েছেন। বিক্ষোভকারী তরুণদের অভিযোগ, পুলিশ মোট ১৭ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে।
বিহার ও উত্তরপ্রদেশে জ্বলছে একের পর এক ট্রেন। বিহার-সৌপল, লক্ষ্মীসরাই, সমস্তিপুর, আরা ও উত্তরপ্রদেশের বালিয়া সহ মোট ৫টি ট্রেনে আগুন লাগিয়েছে অগ্নিপথে স্কিম বিরোধী বিক্ষোভকারীরা।
বিহারের পর এ বার ট্রেনে আগুন উত্তরপ্রদেশে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী যুবকেরা শুক্রবার সকালে পূর্ব-উত্তরপ্রদেশের বালিয়া স্টেশনে একটি ট্রেনে আগুন জ্বালিয়ে দেন। ভাঙচুর করা হয় রেলস্টেশন। পুলিশ এবং রেলরক্ষী বাহিনীর সদস্যেরা দ্রুত গিয়ে জ্বলন্ত কামরাগুলি সরিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি সামলেছেন।
উত্তরাখণ্ডেও অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। এখানে হলদওয়ানিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়।
অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে নার্নাউলে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে। পড়ুয়ারা জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে লাগানো ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। পাথর ছুড়ছে। অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য শহরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সুভাষ পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন উপস্থিত পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাড়িয়ে দেয়। বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভরত ৩ যুবককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অগ্নিপথ’ বিক্ষোভের জেরে শুক্রবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে রেল অবরোধ হয়েছে। যার জেরে ব্যস্ত সময়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। বিক্ষোভের জেরে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় রেল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
অগ্নিপথ স্কিমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে হরিয়ানাও। শুক্রবার হরিয়ানা সরকার ফরিদাবাদের বল্লভগড়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিল ইন্টারনেট। সেনায় নিয়োগের নয়া নীতির বিরুদ্ধে তৈরি হওয়ার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামলাতে তত্পর সরকার।
কেন্দ্রের ‘অগ্নিপথ’ (Agnipath) প্রকল্পের বিরোধিতায় দেশজুড়ে বিক্ষোভের আগুনের রেশ ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়াতেও। অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পাথর ছুড়ে, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করছেন বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর চালানো হয়েছে বাসে। ট্রেনও থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
বিহারের মুঙ্গেরে শ্রীকৃষ্ণ পুলে রাস্তা অবরোধ করল ছাত্ররা। যার নির্যাস, বিশাল যানজট সকাল থেকেই। গাড়ির লম্বা লাইন লেগেছিল।
ফিরোজাবাদ জেলার মঠসেনায়, যুবকরাও অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতা শুরু করেছে। শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ আগ্রা-লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য যুবকরা অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এ সময় কয়েকটি বাস ভাঙচুরও করেন তিনি। অন্যদিকে, হট্টগোল ও নাশকতার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। বর্তমানে আগ্রা-লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচল করছে।
অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে বিহারে তোলপাড় চলছে। ছাত্ররা সমস্তিপুরে বিহার সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস ট্রেন থামিয়ে দিল। এর পর ছাত্ররা ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে এবং ব্যাপক ভাংচুর করে। পরিকল্পনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী ট্রেনের এসি বগিতেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদে আরা রেলস্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ ১৬ জন দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল রেলস্টেশনে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তথ্যমতে, এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৬৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিহারের পশ্চিম চম্পারণ জেলার বেতিয়ায় রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী রেণু দেবীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। ঘটনার সময় রেণু পটনায় ছিলেন। বিহার বিজেপির সভাপতি এবং পশ্চিম চম্পারণের বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় জাওয়ালের বাড়িতেও দুষ্কৃতী হামলা হয়েছে।
দেশ জুড়ে অন্তত ১২টি ট্রেনে আগুন জ্বালানো হয়েছে। ৩০০টি ট্রেনের যাত্রাপথ প্রভাবিত হয়েছে। ২১৪টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ১১টি ট্রেন ঘুরপথে চালানো হয়েছে এবং অন্তত ৯০টি ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেও তা পৌঁছতে পারেনি। মাঝ পথেই থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই আবহে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শান্তিরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি দেশের যুবসম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করতে চাই, হিংসাত্মক প্রতিবাদ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে রেলের সম্পত্তি ধ্বংস করবেন না। রেল আমাদের দেশের সম্পত্তি।’’তবে বিক্ষোভের জেরে অন্যান্য সময়ের মতো এ বারও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ। বলা ভাল, রেলপথই যেন হয়ে উঠেছে অগ্নিপথ!












































































































































