অবশেষে বইমেলায় নেতাজির মৃত্যুদিন নিয়ে বিতর্কের অবসান। সৌজন্যে বিশ্ববাংলা সংবাদ। ৪৫ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইলেলায় নেতাজির নামাঙ্কিত প্যাভিলিয়নে দেশনায়কের মৃত্যুদিবস নিয়ে যে হোর্ডিং ফলাও করে রাখা হয়েছিল, অবশেষে তা সরিয়ে নিল আয়োজক গিল্ড। এবং এই বিষয়টি সর্বপ্রথম তুলে ধরেছিল এই মুহূর্তে বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বিশ্ববাংলা সংবাদ।
আমাদের খবরের জেরে বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হতেই নড়েচড়ে বসে গিল্ড কর্তৃপক্ষ। গিল্ডের তরফে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যে সংস্থাকে এই ফ্লেক্স তৈরি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা এই স্পর্শকাতর বিষয়টির গভীরতা বুঝতে পারেনি। উইকিপিডিয়া বা কোনও আর্কাইভ দেখে হয়তো এই ভুল করেছিল। আমরা রাতের মধ্যেই সরিয়ে নিচ্ছি এই ফ্লেক্স। এবং বুধবার থেকে নেতাজি নামাঙ্কিত প্যাভিলিয়নে নতুন ফ্লেক্স লাগানো হবে।”
প্রসঙ্গত, জাতির নায়ক, দেশের নায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর “অন্তর্ধান” ভারতের সবচেয়ে বড় বিতর্ক। এতবছর পরেও নেতাজি কি আদৌ জীবিত, নাকি তিনি মৃত? এই রহস্যের সমাধান কেন্দ্রের কোনও সরকারই এখনও পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি। নেতাজি নিয়ে একাধিক ফাইল প্রকাশের দাবি বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিভিন্ন মহল থেকে বারেবারে করা হয়েছে, কিন্তু কেন্দ্রের কোনও সরকারই তার সদুত্তর এখনও পর্যন্ত দিতে পারিনি। বর্তমান বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার এই ব্যাপারে আরও বেশি উদাসীন।
এমন বিতর্কের মধ্যেই ঘটে গেল আরও বড় বিপত্তি। কোনও তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই ৪৫ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলাতে ঘোষণা হয়ে গেল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু দিন। নেতাজির মৃত্যুদিন ফলাও করে প্রকাশ করল বইমেলার আয়োজক গিল্ড। বইমেলায় খোদ গিল্ডের প্যাভিলিয়নে দেখা গেল নেতাজির মৃত্যুদিন! যেখানে গিল্ড ছবি-সহ নেতাজির জন্ম তারিখের সঙ্গে দিয়েছে মৃত্যুদিন। লেখা হয়েছে জন্ম ২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭, মৃত্যু ১৮ আগস্ট ১৯৪৫। অর্থাৎ কিনা তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনার দিনটিকেই মৃত্যুদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে এমন তথ্য দেওয়ার সাহস কোথা থেকে পেল গিল্ড? তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক দানা বেঁধেছে। অনেক মানুষ গিল্ডকে বিজেপির দালাল বলেও দাবি করছে।
দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর আদৌ কি তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। নেতাজির অন্ধর্ধান রহস্যের সমাধান হয়নি আজও। কিন্তু বইমেলায় গিল্ডের অফিসিয়াল প্যাভিলিয়নে দেখা গেল সেই সমাধান হয়ে গিয়েছে! সেখানে জ্বল জ্বল করছে নেতাজির মৃত্যুদিন! নেতাজির নামাঙ্কিত প্যাভিলিয়নে জন্ম তারিখের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদিনও। ঘটনায় তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। গিল্ডের সমালোচনায় মুখর আপামোর জনতা। অবিলম্বে এমন প্যাভিলিয়ন থেকে নেতাজির মৃত্যু নিয়ে প্রকাশিত বিতর্ক তারিখ সরানোর দাবি জানিয়েছে আমজনতা।
অন্যদিকে, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন গিল্ডকে অপদার্থ দাগিয়ে ট্যুইট করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি লেখেন, ”অপদার্থ! জেনে নাকি না জেনে? বইমেলায় গিল্ডের করা প্যাভিলিয়নে নেতাজির জন্মতারিখের সঙ্গে মৃত্যুর দিনও!!! তাহলে অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান করে দিল গিল্ডই। অবিলম্বে এসব সরানো হোক। আমরা নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের যথাযথ তদন্তের পক্ষে।”
এই ট্যুইটের সূত্র ধরে সুর চড়িয়েছেন নেতাজি অনুরাগীরা। অবিলম্বে গিল্ড সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এমনকি, গোটা কাণ্ডটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এভাবেও সরব নেট দুনিয়া।
গিল্ডের তরফে শেষ পর্যন্ত যাদের ফ্লেক্স বানানোর বরাত দেওয়া হয়েছিল তাদের উপর দায় চাপানো হলেও বিতর্ক কিন্তু থামছে না। বিশ্বমানের একটি বইমেলায় গিল্ডের তরফে কীভাবে এমন ভুল হলো তা নিয় কিন্তু প্রশ্ন উঠছে। গিল্ডের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলেই মনে করছে বইপ্রেমীরা। এক্ষেত্রে অন্তত একটা বিষয়ক স্পষ্ট, কোনও সংস্থাকে বরাত দিয়ে কিভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে গিল্ড? সংবাদমাধ্যমে চাউর হওয়ার আগে কেনই বা তাদের চোখে পরলোনা বিষয়টি? প্রশ্ন উঠছে…!
আরও পড়ুন- কলকাতা বইমেলায় নেতাজির “মৃত্যুদিন ঘোষণা” করল অপদার্থ আয়োজক গিল্ড!