অভিযোগ গুরুতর, ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হওয়া দরকার : দেবাশিস বিশ্বাসের কলম

0
2

এক প্রাক্তণ ছাত্র ও নব যুবকের মৃত্যু ঘটেছে। মৃত্যু অতীব যন্ত্রণাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক তো বটেই, তার সাথে যথেষ্ট রহস্যে ঘেরা। মৃত্যুটাই কেবল নিশ্চিত, কিন্তু তা হত্যা, না দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়, অন্তত এই মুহূর্তে। অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ, আন্দোলন, মিছিল সবই অল্প বিস্তর চলছে। চলছে মৃত ব্যক্তি কাদের লোক সেই নিয়ে টানা পোড়েনও। যেমন চলে এসেছে এতদিন। সদ্য কোভিড -এর আতঙ্ক আর শীতের কম্বল ছেড়ে বেরোনো বাঙালির একটু গা বা মাথা বা পেট গরম করার সবরকম উপকরণ।

 

 


এহ বাহ্য। অভিযোগ (অন্তত মৃতের আত্মীয় পরিজনের) যে এটি ঠান্ডা মাথায় খুন। অভিযোগ শাসক দলও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অতি গুরুতর সন্দেহ নেই, এবং সে কারণেই এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হওয়া দরকার। এবং তদন্ত ঠিক করে করার জন্য দরকার মৃতের আত্মীয় ও বন্ধুদের সহযোগিতা। আন্দোলন চলার চলুক, কিন্তু সার্বিক সহযোগিতা ও খুবই জরুরি। দুর্ভাগ্য এ যাবৎ এই সহযোগিতা দেখা যাচ্ছেনা, যেমন মৃতের মোবাইল ফোন হস্তান্তর না করা বা আরো কিছু বিষয়।


দাবী উঠেছে CBI তদন্তের। কিন্তু এইকথা আজ স্পষ্ট যে CBI কোনো সর্বরোগের মহৌষধি নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এই CBI তদন্ত সমাধান তো নয় ই, বরং এটাই এক সমস্যা। কেন্দ্রীয় এই অতি উন্নত তদন্ত সংস্থাকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের পিছনে ফেউ এর কাজ করতে অত্যধিক ব্যবহার এর সার্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা কে বহু বহুবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে বা করছে। আর বিচার বিভাগের তদন্ত? এই দেশে এই রকম তদন্ত এত এত দীর্ঘসুত্রী যে যুবকটি মারা গেছেন এই কথাটুকু প্রমাণ হতেই বছর ঘুরে যাবে। বাস্তবে বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় এ জাতীয় তদন্ত এক বিরাট “ধামা” হিসাবে ব্যবহার হয়, যার তলায় কোনো অভিযোগের ভুত ভবিষ্যত সব ই কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে তা ব্যতিক্রমই। তাছাড়া রাজ্য প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা না করলে এই জাতীয় তদন্ত মোটেই এগোতে পারবে না। তাই রাজ্য সরকারের উপর ভরসা করতেই হবে, গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ ব্যতীত উপায় ও নেই। তাই আমি রাজ্য সরকারের তদন্তের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখছি। পারলে তাঁরাই পারবেন, না হলে কেউ নয়।


এরপর আসে রাজনৈতিক দল। দুর্ভাগ্য এই রাজ্যে কোনো বিশ্বাস যোগ্য বিরোধী দল নেই। আবার বলছি একটা দল ও নেই। যাঁরা প্রধান বিরোধী দল তারা ব্যস্ত নিজেদের ঘর সামলাতে আর তারা ঘোষিত মুসলিম বিদ্বেষী। মৃতের নাম আনিস না হয়ে “আনন্দ” হলে হয়তো তাদের ঘুম ভাঙলে ও ভাঙতো, কিন্তু তা যখন নয়, ওই নিয়ে ভেবেও লাভ নেই।


আরেক দল আছে (আদৌ আছে? অন্তত social media তে আছে), তাদের গ্রহণ যোগ্যতা এতই তলানিতে যে তাঁরা কিছু বলতে মুখ খুললে মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাঁরা ওই Social media আর আদালত আর রাজভবনের সামনেই একটু কান্নাকাটি করেই দিনগত পাপক্ষয় করছেন। অতএব এঁদের নিয়ে ভেবে লাভ নেই।
এই ঘটনার এক ধর্মীয় রূপ ও আছে, যেহেতু মৃত ব্যক্তি ধর্মীয় সংখ্যালঘু। কিন্তু আনিস কখনোই রিজয়ানুরের মতন রাজ্য কে কাঁপিয়ে দেবেনা, কারন এই রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষেরা এমন কোনো পথ কখনোই ধরবেন না যাতে এই রাজ্যের শাসক দলের বিড়ম্বনা বাড়ে। তাই তাঁরাও গোলা গোলা বক্তব্য রাখছেন আর শান্তি বজায় রাখতে বলছেন।
তাহলে কি থাকল হাতে পেন্সিল ছাড়া? যাদবপুর/ প্রেসিডেন্সির মতন কিছু elite শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা। তারা যতটা সম্ভব প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু তাতে আপামর রাজ্যবাসীর কোনো যোগ নেই। সবাই জানে যে কিছুদিন পরেই ওই সব ছাত্র ছাত্রীরা হয় ফিরে যাবে তাদের ক্যারিয়ারের টানে, না হলে আন্দোলন হয়ে যাবে বিপথগামী। “হোক কলরব” হয়ে শুরু হয়ে শেষ হবে “হোক চুম্বন” নামক সার্কাসে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ধামাধরা ভোটার তৈরির কারখানায় পরিণত হওয়ায় এর মৌলিকত্ব ও গেছে ও সাথে গেছে বিশ্বাস যোগ্যতা।

তাই আপাতত…..

দেবাশিস বিশ্বাস
রাজ্য সরকারি অফিসার