করোনার(coronavirus) দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত দেখেছিল মৃতের স্তুপ। শ্মশানে জায়গা কুলোচ্ছিল না শেষকৃত্যের। গঙ্গায় ভেসে গিয়েছে শত শত মৃতদেহ। যদিও খাতায়-কলমে একটি হিসেব থাকলেও বাস্তবে তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর সেই প্রশ্নকে আরো বাড়িয়ে তুলল আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স-এর সাপ্তাহিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ(science journal) প্রকাশিত একটি সমীক্ষা। তাদের অনুমান ভারতের প্রকৃত কোভিড -১৯-এ মৃত্যু হয়েছে ৩২ লক্ষ মানুষের কোভিডে মৃত্যুর(Covid death) সরকারি সংখ্যা থেকে যা ছয়গুণ বেশি বলে অনুমান করা হয়েছে।

মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে মোট ৪৮৩,১৭৮টি কোভিড -১৯ মৃত্যু আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড করা হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন যে ১ জুন, ২০২০ থেকে ১ জুলাই, ২০২১ পর্যন্ত, আনুমানিক ৩২ লাখ মানুষ কোভিড-এ মারা গেছে – যা অধ্যয়ন করা ১৩ মাসের সময়কালে প্রত্যাশিত সর্বজনীন মৃত্যুর ২৯% (যেকোনো কারণে মৃত্যু)। কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের ডাঃ প্রভাত ঝা এবং ডার্টমাউথ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ডক্টর পল নোভোসাড, আইআইএম-আহমেদাবাদের গবেষকদের একটি দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছিলেন।
গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়েছে প্রায় ৭১% বা ২৭ লক্ষ আনুমানিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গত বছরের (২০২১) এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে, যখন কোভিডের ডেল্টা তরঙ্গ সারাদেশে তাণ্ডব চালাচ্ছিল । প্রকৃতপক্ষে, সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে এই সময়ের মধ্যে, কোভিড সম্ভবত সর্বজনীন মৃত্যুর হার দ্বিগুণ করে (যে কোনও কারণে একটি সময়ের মধ্যে মোট মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে)। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, “ কোভিড মৃত্যুর অসম্পূর্ণ প্রমাণপত্র এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ভুল বণ্টনের কারণে ভারতের রিপোর্ট করা কোভিড মৃত্যুর মোট সংখ্যা ব্যাপকভাবে কম নথিভুক্ত (আন্ডার-রিপোর্ট) বলে মনে করা হয়। এর কারণ বেশিরভাগ মৃত্যু গ্রামীণ এলাকায় ঘটে, প্রায়শই চিকিৎসা ছাড়াই।”

গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে, জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক ১,৩৭, ২৮৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক টেলিফোনিক জরিপ থেকে পাওয়া ডেটা, সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা তথ্য সিস্টেমের মাধ্যমে পাওয়া দু’লক্ষ সরকারি হাসপাতালের মৃত্যুর রিপোর্ট এবং প্রায় অর্ধেক সরকারী কোভিড-১৯-এর মৃত্যু হয়েছে যে ১০টি রাজ্যে, সেখানকার সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে রেকর্ডকৃত মৃত্যুর ঘটনাগুলি । ডঃ নভোসাদ টুইট বার্তায় বলেছেন, “অতিরিক্ত মৃত্যু ৩০ লক্ষের কাছাকাছি। ১. সরকারি সংখ্যা থেকে অনেক বেশি। ২. বিশ্বব্যাপী কোভিড-এর মৃত্যুর সংখ্যা ২০ লক্ষ থেকে কম হওয়া বোঝায় (এবং অন্যত্র আরও কম সংখ্যা দেওয়া হয়েছে) । একাধিক ডেটা উৎস এবং বিভিন্ন বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি, সবাই একমত : ২০২১ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে ভারতে ২০ লক্ষেরও বেশি কোভিড মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড মৃত্যুর সংখ্যায় ভারত একাই একটি বিশাল অংশ । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচিত এটি (গবেষণাপত্রটি) বিবেচনায় নিয়ে তাদের বিশ্বব্যাপী সংখ্যাগুলিকে (কোভিড) আপডেট করা।” গবেষণাপত্রটি প্রকাশের প্রাক মুহূর্তে ডাঃ প্রভাত ঝা বলেছেন, “আমাদের গবেষণাপত্রের উপসংহার ছিল যে রিপোর্টের তুলনায় সাত থেকে আট গুণ বেশি মৃত্যু (কোভিড-১৯) হয়েছে।এটি অন্যান্য গবেষণার মতো একই বৃত্তের মধ্যে রয়েছে যার সবকটিই মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছে বলে মতপ্রকাশ করে। এখন তৃতীয় তরঙ্গটি কেমন হবে তার একটি অনুমান পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখনও পর্যন্ত, অন্যান্য দেশে তৃতীয় তরঙ্গ দ্বিতীয়টির চেয়ে বড় হয়েছে।কাদের পরীক্ষা করা হবে তা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে (যার ফলে রিপোর্ট করা কেসের সংখ্যা পরিবর্তন হয়), তবে মৃত্যুর সংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন ডাঃ জয়প্রকাশ মলিয়িল বলেছেন, “মহামারীটি ভারতে পৌঁছানোর আগে, আমি ইউরোপ থেকে বয়স-নির্দিষ্ট মৃত্যুর হারের উপর ভিত্তি করে প্রত্যাশিত মৃত্যুহার গণনা করেছি; আমাদের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ কম বয়স্ক তাই আমি গণনার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রেখেছি। আমার গণনার উপর ভিত্তি করে, সেই সময়ে সংক্রমণের গতিশীলতা অনুসারে ভারতে ২২ লক্ষ মৃত্যুর রিপোর্ট করা হয়েছিল। যখন মাত্র কয়েক হাজারের মধ্যে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, তখন তা বিব্রতকর ছিল। আমি বলছি ৩ লক্ষ মৃত্যু যুক্তিসঙ্গত সংখ্যা ।”
আরও পড়ুন:Election Date: আজই ৫ রাজ্যের নির্বাচনের দিন ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন










































































































































