তিনি জগতের নাথ। তিনি প্রভু। তিনি সর্বজীবে অধিষ্ঠাতা পরমাত্মা। তাঁকে ধরে নেওয়া হয় শ্রী কৃষ্ণের অবতার রূপে। অর্থাৎ দ্বাপরে যিনি কৃষ্ণ, কলিতে তিনিই জগন্নাথ। অন্যদিকে আবার হিন্দুদের পরমপুজ্য দেবতা হয়েও বেদে সুস্পষ্টভাবে জগন্নাথদেবের উল্লেখ নেই! দশাবতার কিংবা বৈদিক দেবমণ্ডলীর সদস্যও নন তিনি। শ্রী বিষ্ণুর রূপভেদ হিসেবে জগন্নাথদেব এক অসাম্প্রদায়িক দেবতা যাকে হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, স্মার্ত সব শাখার অনুগামীরাই পুজো করেন পরম ভক্তি ও বিশ্বাসে। সবচেয়ে বড় এমন এক অবিসংবাদিত জনপ্রিয় দেবতার বিগ্রহ নিয়েও বিপুল রহস্য ও অগুনতি প্রচলিত কাহিনি। সুতরাং এমন দেবতার উপাখ্যান ও লীলা যে এক বড় অংশের দর্শককে টানবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর সে কারণেই নতুন স্বপ্নের রং নিয়ে যখন কালারস বাংলা ফের হাজির, সুরিন্দর ফিল্মস-এর সঙ্গে একযোগে শ্রী জগন্নাথদেবের কাহিনিকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি সুব্রহ্মণ্যমের
কাহিনি ফাঁদা হয়েছে বেশ বড় ক্যানভাসে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে শতপুত্রকে হারিয়ে গান্ধারীর হৃদয় খানখান। সমস্ত দুর্ভাগ্যের জন্য শ্রীকৃষ্ণকে দায়ী করে তাঁকে অভিসম্পাত করলেন তিনি, একইভাবে মাধবকেও তাঁর বংশের নাশ দেখতে হবে। যদুকূল ধ্বংস হওয়া ও শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু থেকে ‘জয় জগন্নাথ’-এর কাহিনি শুরু হয়েছে। ধারাবাহিকের পরিচালক অমিত দাস জানালেন, ‘জগন্নাথ দেবকে নিয়ে নানা মিথ প্রচলিত আছে। আমরা তাই ইতিহাসকে আশ্রয় করে পুরাণে ঢুকেছি। শ্রী কৃষ্ণের আর এক অবতার রূপেই মর্ত্যলোকে পূজিত হন শ্রী জগন্নাথ দেব। দুইয়ের মাঝে একটা জার্নি ছিল। তাতে এসেছে অনেক চরিত্র, হয়েছে প্রচুর টানাপোড়েন, ঘটেছে অসংখ্য চমৎকার। সবগুলিই আমরা ধরেছি। সেভাবেই চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে। এমন নয় যে জগন্নাথদেবের প্রেক্ষাপটে নানা ম্যাজিকাল কাহিনি দেখিয়ে দর্শক মনোরঞ্জনের চেষ্টা করছি। প্রচলিত লোকগল্পগুলোও অবশ্যই পরবর্তীকালে আমরা করব কিন্ত তার আগে প্রপার রিসার্চ ওয়ার্ক ও পুরো টিমের এফোর্ট রয়েছে এর পিছনে।‘ ধারাবাহিকটি আসলে যে জগন্নাথদেবকে জানার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা তা শুরুতে প্রচারের ধরনই বলে দেয়। ক্যাচ লাইনটিই ছিল, ‘জগন্নাথ বলে ডাকি যাকে, সত্যি কি আমরা জানি তাঁকে?’
পৌরাণিক প্রেক্ষাপট অর্থাৎ প্রভু জগন্নাথ দেবের উৎস দেখানোর পর কাহিনি গড়াবে তাঁর বিগ্রহ, মন্দির গড়ার ঘটনাবলী নিয়ে। ধারাবাহিকের শ্যুটিং হচ্ছে দাশানি টু তে ও নলবনে। শ্রী কৃষ্ণ ও জগন্নাথের চরিত্রে অভিনয় করছেন বিপুল পাত্র। বিপুল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় নতুনই বলা যায়। এর আগে একটি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে ‘মোহমায়া’ সিরিজে অভিনয় করেছিলেন এবং সম্প্রতি করছিলেন ‘মৌয়ের বাড়ি’ ধারাবাহিকটি। স্বাভাবিকভাবেই এরপর একটি ধারাবাহিকের লিড চরিত্রে সুযোগ পেয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত। নিজের মত করে প্রস্তুতি তো নিচ্ছেনই বিপুল একই সঙ্গে কৃতজ্ঞ অভিনেতা অরিন্দম গাঙ্গুলী ও খেয়ালি দস্তিদারের প্রতি। ২০১৬ তে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বিপুল সিদ্ধান্ত নেন ইঞ্জিনিয়ারিং নয় আগামি জীবনে অভিনয়টাই করবেন! সব ছেড়ে তাই কাঁথি থেকে কলকাতায় চলে আসা এবং চার্বাক নাট্যদলে যোগদান। অভিনয়ের প্রতি বিপুলের আগ্রহ ও নিষ্ঠা দেখে এরপর অরিন্দম-খেয়ালি ওঁকে দলে নিয়ে নেন। বাকিটা এগিয়ে নিয়ে যান বিপুল নিজে। বিপুলের নিজের কথায়, ‘আমার বিশ্বাস মন থেকে কিছু করতে চাইলে সে সুযোগ একদিন আসবেই। আমি আগে সেভাবে মাইথলজিক্যাল চরিত্র না করলেও অসুবিধে কিছু হচ্ছে না কারণ মহাভারত হোক, শ্রীকৃষ্ণ হোক বা জগন্নাথদেব হোক এই গল্পগাথাগুলো একদম ছোট থেকে আমাদের জানা। বাকি প্রতিটা ছোট-খাটো বিষয়ে টিমের ডিরেক্টর থেকে প্রত্যেকে সাহায্য করছেন। আর আমি নিজে আমার অস্তিত্বের সবটুকু নিয়ে জগন্নাথদেবের আখ্যান, লীলা, মাহাত্ম এসবের মধ্যেই থাকার চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা রাখি শ্রী জগন্নাথদেব আমাদের সবার চেষ্টার দাম দেবেন।‘ বিপুলের আরেকটি নতুন অভিজ্ঞতা, মেকআপ। কারণ ধারাবাহিকে ওঁর অনেকগুলো লুক। কৃষ্ণের যোদ্ধা রূপ, বংশীবাদক রূপ, মধুসূদন রূপ প্রত্যেকটি লুক করতে কমপক্ষে দেড়-দু ঘন্টা সময় লাগে। মেকআপ, কস্টিউম, জুয়েলারি প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই দর্শক বিপুলকে পর্দায় বর্তমানে কৃষ্ণরূপে দেখতে পান। বিপুলের কৃতজ্ঞতা তাই সবার প্রতি।
আরও পড়ুন-Tripura: ফের কলকাতার ছবি দিয়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যের ‘উন্নয়নের’ বিজ্ঞাপন! এবার ত্রিপুরা
গত সেপ্টেম্বরে অডিশন দিয়ে যোগ্যতা অর্জনের পর্ব পার হওয়ার পর শ্যুট শুরু হয়েছিল অক্টোবরের শেষে। দর্শক ধারাবাহিকটি পছন্দ করছেন শুধুমাত্র জগন্নাথদেবের মাহাত্মের কারণে নয়, যে যত্ন নিয়ে তৈরি হচ্ছে ধারাবাহিকটি, তাও মন ছুঁয়েছে তাদের। ধারাবাহিকের অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন, শ্রীমা ভট্টাচার্য, সিদ্ধার্থ শঙ্কর চক্রবর্তী, জসমিন রায়, দেবরাজ রায়, সৌমিত্র বোস, রাইমা সেনগুপ্ত, তমোঘ্ন মান্না, অঙ্কিতা মল্লিক। চিত্রনাট্য করছেন রাকেশ ঘোষ, সংলাপ অঞ্জন চক্রবর্তী। শীর্ষ সঙ্গীত তৈরি করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। ‘জয় জগন্নাথ’ সম্প্রচারের সময় প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটা।












































































































































