দীপাবলির আলো নিভিয়ে প্রয়াত পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন-সহ রাজ্যের চারটি দফতরের মন্ত্রী বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। ২৪ অক্টোবর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে এসএসকেএমে ভর্তি হন তিনি। শ্বাসকষ্ট বাড়ায় উডবার্ন ওয়ার্ডের আইসিসিইউ-তে রাখা হয়। চিকিৎসারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন তাঁকে সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে কালীপুজোর রাত ৯ টা ২২ মিনিটে মৃত্যু হল প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বাড়ির কালীপুজো ছেড়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি কার্যত ভেঙে পড়েন। দীপাবলির দিনে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘আমার জীবনে আমি অনেক দুর্যোগ দেখেছি। সুব্রতদার মৃত্যুটা আমার কাছে ভীষণ ভীষণ বড় দুর্যোগ। সুব্রত দার মত মানুষ এত হাসিখুশি এত কর্মঠ এবং দল অন্তপ্রাণ। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র অন্তপ্রাণও ছিলেন। এমন মানুষ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। আমি গোয়া থেকে ফিরে প্রথমেই হাসপাতালে তাঁকে দেখতে আসি। সেদিনও আমার সঙ্গে কথা হল, হাসল। বলল, আমি আবার জেলায় জেলায় যাব। সন্ধ্যায় হাসপাতালে প্রিন্সিপাল আমার বাড়ির কালীপুজোয় গিয়েছিলেন। বললেন, ভাল আছেন। কাল বাড়ি যাবেন। তার মধ্যে বিরাট হার্ট অ্যাটাক। যেটা চেষ্টা করেও ডাক্তাররা পারেননি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানালেন, এই অবস্থায় তিনি তাঁর প্রিয় ‘সুব্রতদা’কে দেখতে পারবেন না। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রবীন্দ্রসদনে তাঁর মরদেহ রাখা থাকবে। সেখানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পারবেন অনুরাগীরা। দুপুর ২টোর পর তাঁর দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর হবে শেষকৃত্য।
মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জীর প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি।
তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
পাশাপাশি সুব্রতদা ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। হাসিমুখে তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে আমাদের সরকারের কাজে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন।
এছাড়া কলকাতার মেয়র হিসাবে কলকাতার সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর বিশেষ ভূমিকা স্মরণীয়।
সুব্রতদা ছাত্র আন্দোলনে সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই আমি তাঁর সঙ্গে থেকেছি, তাঁর নেতৃত্বে বড় হয়েছি। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং শারদীয়া দুর্গাপূজার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
সুব্রতদার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আমার অগ্রজ ও অভিভাবকতুল্য ছিলেন। তাঁর প্রয়াণ আমার কাছে এক বিরাট ক্ষতি শুধু নয়, রাজ্যের তথা দেশের রাজনৈতিক জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি।
আমি ছন্দবাণী-বৌদি সহ সুব্রতদা’র পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আরও পড়ুন- দীপাবলির সব আলো নিভিয়ে প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়