তৎকালীন বাম জমানায় উপেক্ষিত টেস্ট টিউব বেবির আবিষ্কর্তা ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের(Subhash Mukherjee) কথা নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়। ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্টটিউব(Testtube) বেবি দুর্গাকে সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। তবে কথায় বলে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না! এটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় ডাঃ জ্যোতিপ্রকাশ বসুর(Jyatiprakash Basu) ক্ষেত্রেও। কলকাতা শহরে বসে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এ প্রথম কোন ডায়াবেটিস রোগীকে ইনসুলিন(Insulin) দিয়েছিলেন এই ঘরের ছেলেই। এই ঘটনা ঘটেছিল ১৯২৩ সালে পৃথিবীতে ইনসুলিন আবিষ্কারের মাত্র দু’বছর পর। দেশের মধ্যে প্রথম ডায়াবেটিস(Diabetes) ক্লিনিক চালু করেছিলেন এই বাঙালি। এতকাল উপেক্ষিত থাকার পর অবশেষে প্রকাশ্যে এলো সেই তথ্য।
চলতি আগস্ট মাসে দেশের তাবড় তাবড় সুগারের চিকিৎসকদের সম্মিলিত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আর সেখান থেকেই উঠে এলো কলকাতায় বসে প্রথম সুগারের আধুনিক চিকিৎসার জনক ডাঃ জ্যোতিপ্রকাশ বসুর কৃতিত্বের কথা। গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো জ্যোতিপ্রকাশ বসুর মৃত্যুর (১৯৭০) অর্ধশতাব্দীরও পর! ইনসুলিন আবিষ্কারের শতবর্ষ পর, আর তাঁর ইনসুলিন প্রয়োগের ৯৮ বছর পর। ভারতে ডায়াবেটিস চিকিৎসা অন্যতম হিসেবে পরিচিত চেন্নাইয়ের ডাঃ এম বিশ্বনাথনের ছেলে দিকপাল ডায়াবেটোলজিস্ট ডাঃ ভি মোহন নিজের গবেষণাপত্রে সওয়াল করলেন বাঙালি চিকিৎসক ডাঃ জে পি বসুর প্রতিষ্ঠার জন্য। শুধু তিনিই নয়, তাঁর পাশাপাশি ডাঃ রঞ্জিত উন্নিকৃষ্ণন, ডাঃ রঞ্জিতমোহন আস্থানা, ডাঃ মঙ্গেশ তিওয়াসকার সহ দেশের ছ’জন ডায়াবেটোলজিস্ট ‘জার্নাল অব দি অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব ইন্ডিয়া’-তে এ মাসে প্রকাশ করেছেন তাঁদের গবেষণাপত্র ‘ডায়াবেটিস ইন প্রি-ইনডিপেডেন্স ইন্ডিয়া: রিডিসকভারিং এরা’।
আরও পড়ুন:৭৫তম স্বাধীনতা দিবসেও কেন্দ্রীয় সাহায্যের আশায় শ্রীরামপুরের বিপ্লবীর পরিবার
যে গবেষণাপত্রে সকলে এক বাক্যে জানিয়েছেন, ভারতবর্ষে প্রথম কলকাতা শহরে বসে ইনসুলিন প্রয়োগ করেন ট্রপিক্যালের দিকপাল চিকিৎসক ডাঃ জে পি বসুই। তাঁরই হাত ধরে প্রায় ১০০ বছর আগে বাচ্চাদের টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা হয়েছিল এ শহরে। কুমুদিনী নামে এক ১২ বছরের বালিকাকে ইনসুলিন দেওয়ার আগে এবং পরের ছবি তিনি প্রকাশ করে গিয়েছেন বর্তমানে ট্রপিক্যালের লাইব্রেরিতে রাখা বইয়ে। এ প্রসঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালে অধ্যাপক ডায়াবেটোলজিস্ট ডাঃ সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনা আমাদের কাছে সত্যিই লজ্জার যে ঘরের লোককে এতদিন পর চিন্তা হচ্ছে। ট্রপিক্যালে অনেক সাধ্যসাধনা করে ওঁর লেখা বই ও গবেষণাপত্রগুলি খুঁজে বের করায় এই সত্য উদঘাটিত হয়েছে।” পাশাপাশি এই স্বীকৃতিদান পর্বে ডাঃ মোহন বলেন, বাঙালি চিকিৎসক ডাঃ জে পি বসুই ভারতে ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসার জনক। এতদিন ধরে এই স্বীকৃতি ছিল আমার বাবা অধ্যাপক বিশ্বনাথনের। ঘরের রত্নকে এবার অন্তত চিনুন আপনারা! ডাঃ বসুর নাত-বৌমা সঞ্চিতা বসু বলেন, “আমাদের বাগবাজারের বাড়িই ছিল ওঁর চেম্বার-ল্যাবরেটরি। শাশুড়ির কাছে শুনেছি উত্তমকুমার পর্যন্ত ওঁর কাছে চিকিৎসা করাতে আসতেন। মেয়ে মুনমুনকে নিয়ে এসেছিলেন সুচিত্রা সেনও। অবশেষে সারা দেশ ওঁকে স্বীকৃতি দিল, এর চেয়ে বড় গর্বের কিছু হয় না।”














































































































































