ডায়মন্ডের ২৫ তম বর্ষপূর্তি

0
2

ডায়মন্ড ম্যাচ। শুনলেই শিহরণ বয়ে যায় আজও। আজ ২৫তম বর্ষপূর্তি সেই ঐতিহাসিক দিনের। সেদিন মাঠে থাকা এই লেখকের কিছু আবেগ আজ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে মন চাইলো।

এই যুদ্ধের শুরু ৬ জুলাই ১৯৯৭ মহামেডান স্পটটিং-কে ৪-০ গোলে ইস্ট বেঙ্গল হারানোর পর থেকে। ইস্ট বেঙ্গলের কোচ ছিলেন প্রবাদ প্রতিম প্রদীপ ব্যানার্জী বা পি. কে। অপরদিকে মোহনবাগানের প্রশিক্ষক অমল দত্ত যিনি চমক ও উদ্ভাবনী শক্তিতে পারদর্শী। এই অমল দত্তই নিয়ে এলেন কলকাতা মাঠে এক অদ্ভুত দৃষ্টিনন্দন খেলার স্ট্রাটেজি যার নাম ডায়মন্ড। অর্থাৎ একসঙ্গে ৮ জন আক্রমনে উঠবে আবার ৭ জন একসঙ্গে নামবে এভাবে মাঠে যেন একটা হীরের মতো আকার হবে এবং বিপক্ষ ধরতেই পারবে না বিষয়টা।

বলা বাহুল্য এই নতুন ধারায় খেলে মোহনবাগান সেমিফাইনাল অবধি এসেছিলো। স্বাভাবিকভাবেই তারা ইস্ট বেঙ্গল দলকে খুব গুরুত্ব দেয়নি। এবং সেটা পরিষ্কার হয়েছিল তাদের প্রশিক্ষক অমল দত্তর কথায়। সেইসময় ইস্ট বেঙ্গল দল মূলত নতুন অনামী কিছু দেশি বিদেশী নিয়ে তৈরী ছিল যার মধ্যে ছিল বাইচুং ভুটিয়া, সোমাটাই সাইজা অর্থাৎ সোসো, ওমোলো, এজেন্ডা, নাজিমুল হক প্রভৃতি। তাই অমল দত্ত খেলা শুরুর কদিন আগে বলে বসলেন ওমোলো ক ওমলেট, সোসো কে শসা, বাইচুং কে চুংচুং। স্বাভাবিকভাবেই ইস্ট বেঙ্গল খেলোয়াড়রা ক্ষুব্ধ হলেন এতে‌। অবশেষে এলো সেই দিন। টিকিটের জন্য হাহাকার চারদিকে। মাঠে রেকর্ড ১,৩৩,০০০ এর বেশি লোক হয়েছিল যা ভারতবর্ষে রেকর্ড তো বটেই আজও। আমি ৫ নম্বর গ্যালারিতে পুরো খেলা ১ পায়ে দেহের ভারসাম্য রেখে মূলত দেখেছিলাম কারণ দ্বিতীয় পা রাখার জায়গা পাওয়া যায়নি। দর্শকাসনের চাইতে বহু সংখ্যক বেশি মানুষ এসেছিলেন সেদিন  মহারণ প্রত্যক্ষ করতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। খেলা শুরুতেই আক্রমণের ঝড় তোলে মোহনবাগান কিন্তু খেলার গতির বিরুদ্ধেই গোল করে ইস্ট বেঙ্গলকে এগিয়ে দেয় নাজিমুল হক। এরপর প্রবল চাপ দিলেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি মোহনবাগান বরং বাইচুং অসামান্য নৈপুণ্যে তার দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেয়। বিরতির পর খেলায় ফেরে মোহনবাগান। একক দক্ষতায় গোলার মতো শট-এ গোল করে ২-১ ফলাফল করে সমতা ফেরানোর জন্য মরিয়া হয় চিমা ওকরি সহ মোহনবাগান দল। কিন্তু সেদিন ইতিহাস অন্যভাবে লেখার কথা ভেবেছিলেন ফুটবল দেবতা। অসামান্য নৈপুণ্যে ৩-১ গোলে ইস্ট বেঙ্গল কে এগিয়ে দেন সেই বাইচুং যাকে যোগ্য সহায়তা করেন সোসো। এর সঙ্গে যোগ হয় লম্বা ঝাঁকড়া চুলের নৌসাদ মুসা যিনি বিরাট লম্বা থ্র্রো করতে পারতেন। রক্ষণে ওমোলো ছিল স্তম্ভ ।

গোলকিপার এজেন্ডা যেন দুর্ভেদ্য দুর্গ। তার মধ্যেই বাইচুং তার হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করলেন ৪-১ গোলে ইস্ট বেঙ্গলকে এগিয়ে দিয়ে।‌অসামান্য ফুটবল খেলেও সেদিন হীরকখন্ড ম্লান হয়ে গিয়েছিলো। ডার্বি তে প্রথম হ্যাটট্রিককারী হিসাবে নিজের নাম তুলেছিল বাইচুং। ভারত বাসি জেনেছিলো এক নতুন তারার উদ্ভব। আজ ২৫ তম বছরেও এতটুকুও মলিন হয়নি সেদিনের স্মৃতি। আজ ও নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় সেদিন মাঠে থাকতে পেরে। তবে সবশেষে বলি নিজে ইস্ট বেঙ্গল সমর্থক হলেও বলবো সেদিন জিতেছিল ফুটবল।  নইলে রেকর্ড লোক সেদিন হয়না। আমার এই লেখা আজ উৎসর্গ করলাম স্বর্গীয় পি কে ব্যানার্জি স্যার ও অমল দত্ত স্যারকে যাদের জন্য ওই উন্মাদনায় পৌঁছেছিল সেদিনের সেই মহারণ। আজ ওনাদের অভাব খুব খুব অনুভূত হয়।

(লেখক ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব সদস্য ও সমর্থক)

আরও পড়ুন- টোকিও অলিম্পিক অভিযানের সঙ্গে সরকারের ‘নিউ ইন্ডিয়া’ দৃষ্টিভঙ্গি মিলে যায়: প্রধানমন্ত্রী