হার নিশ্চিত বুঝেই সম্ভবত ‌মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন শাহ! কণাদ দাশগুপ্তর কলম

0
4
কণাদ দাশগুপ্ত

‘আর কোনও আশা নেই’, এটা বুঝেই সম্ভবত মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন বাংলার বিরুদ্ধে ‘খেলতে’ নামা গেরুয়া টিমের ‘ক্যাপ্টেন’ অমিত শাহ( amit shah) ৷

কমিশনের নতুন জারি করা সভা- বিধি অনুসারে শনিবার কোনও প্রচার সভা করতে শাহ কার্যত অস্বীকার করেছেন৷ জানিয়েছেন, বাংলায় আর কোনও সভা করবেন না৷ এদিন ভার্চুয়াল সভা অন্তত করতে পারতেন তিনি, প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার যেমন করেছেন৷ সে পথেও শাহ যাননি৷

আরও একটি কাজ করেছেন৷ বাকি দু’‌দফার ভোট শাহ ছেড়েছেন রাজ্য নেতৃত্বের হাতেই৷ বাংলা-দখলের খেলায় বঙ্গ-বিজেপিকে এতদিন ‘দুধে-ভাতে প্লেয়ার’ হিসাবে মোদি- শাহ গণ্য করেছেন৷ এর কারন, দিল্লি জানে, বাংলায় তাঁদের দলের ‘প্লেয়ার’ -দের দৌড় কতখানি৷ জানে বলেই ‘বড়’ ম্যাচে স্রেফ দর্শক হিসাবে রাখা হয়েছে বঙ্গ-বিজেপিকে৷ প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচারের ধরন, কমিশন থেকে টাকা, সবকিছুই দিল্লির হাতে, বঙ্গ-টিম শুধু দেখেছে৷ এ সব জানার পরেও শেষ দু’দফার ৭১ আসনের ভোটের দায়িত্ব রাজ্য নেতাদের হাতে ছাড়ার অর্থ একটাই, দিল্লি নিশ্চিত হয়েছে, এই ‘ম্যাচ’ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে, আর ঘাম ঝরিয়ে লাভ নেই৷

২০২০ সালের দিল্লি বিধানসভা ভোটেও বিজেপি এমন তেড়েফুঁড়েই নেমেছিলো এবং শেষভাগে এসে মিইয়েও গিয়েছিলো৷ এখানেও প্রায় একই ছবি৷ শেষপর্যন্ত দিল্লিতে বিজেপির দখলে যায় মোট ৭০ আসনের মধ্যে ৮টি৷ আর রাজনৈতিক মহলের ধারনা বিজেপি বাংলায় ৭০-এর বেশি আসন পাওয়ার জায়গায় নেই৷ ২০১৬-র ভোটে ৩ আসন পাওয়া দলের কাছে ২০২১-এর এই ‘গ্রোথ’ চমকপ্রদ ৷

ওদিকে, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আর কেন্দ্রীয় বাহিনী একসঙ্গে বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে ভোটের প্রতিটি পর্বে। তবে সেই সুবিধা নিয়ে বিজেপি ৮ থেকে ১০টি আসন খুব বেশি হলে পেতে পারে। সব মিলিয়ে গেরুয়া শিবির এবার ৭০টির বেশি আসন পাবে না বলেও দাবি করেছেন তিনি। দীর্ঘদিনের রাজনীতিক মমতা৷ অসংখ্য নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ নেত্রীর এই ‘অ্যাসেসমেন্ট’ প্রায় পুরোটাই মাটির কাছাকাছি৷ তার ভিত্তিতেই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তৃণমূলকে রোখার ক্ষমতা নেই বিজেপির৷ একইসঙ্গে দলীয় কর্মীদের জন্যও বার্তা দিয়েছেন মমতা৷ বলেছেন, “শেষ দুদফায় মরিয়া হয়ে উঠবে বিজেপি। ফলে দলের কর্মীদের EVM-এর দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। প্রথমে EVM পরীক্ষার সময় ৩০টি ভোট দেওয়া হলেও, পরে অন্তত দুবার মেশিন অন-অফ করে দেখে নেওয়ার পরামর্শ তিনি দিয়েছেন।
আর এসবের পাশাপাশি এমন কথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যা বিজেপির ঘুম ওড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট৷ প্রকাশ্যেই তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি’র অন্দরে তাঁর লোক আছে। তারাই তাঁকে বিজেপির অন্দরমহলের খবরের জোগান দেন’। বঙ্গ-বিজেপি শীর্ষস্তরের সব লোকজনই যে বিশ্বস্ত, তা নয়৷ প্রায় সব দলের উপরের দিকেই দু-একজন এমন লোক আছে৷ তাঁরা দলে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকায় সব ধরনের খবরই পান৷ সেই খবর সঠিক সময় তুলে দেন অন্য দলের কাছে৷ তেমন লোকজন মারফতই তৃণমূলনেত্রী বিজেপির একাধিক কৌশল আগাম জেনেছেন৷ কারা ওই লোক, তা আন্দাজ করতে পারলেও এই মুহুর্তে বিজেপির কিছু করার নেই, সহ্য করা ছাড়া৷

মোটের উপর, এখন আর ‘ভালো’ নেই বিজেপি৷ বাকি দু’দফার ভোট করতে হবেই বলে ভেসে আছে বিজেপি৷ কথা বলতে হবে বলেই সেই পুরোনো কথাবার্তা এখনও চালায়ে যাচ্ছেন গেরুয়া নেতারা৷ খেলা হাতের বাইরে চলে গিয়েছে৷ বাকি দু’দফার ৭১ আসনের নির্বাচনে বিজেপি ১০-১৫টি আসন পেলে, তা হবে দুর্দান্ত ফল৷

ভোটপর্বের শুরুতে তৃণমূলের ভোট- স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, বিজেপির আসনসংখ্যা তিন অঙ্ক, পেরোবে না৷ নির্বাচনের শেষলগ্নে বিজেপির ‘বডি- ল্যাঙ্গুয়েজ’-ই বলছে, সেদিন ঠিকই বলেছিলেন প্রশান্ত কিশোর ৷

বিজেপি বরং এখনই ময়না তদন্তে নামুক, কেন এমন হলো ? খতিয়ে দেখুক, দলের বিশ্বস্ত আদিকর্মীদের ঘরে তুলে দিয়ে দলবদলু-দের সুয়োরানি বানানোর তথাকথিত ‘মাস্টারস্ট্রোক’ কতখানি আত্মঘাতী হলো !

আরও পড়ুন:দেশজুড়ে অক্সিজেনের হাহাকার , দেবদূত রতন টাটা

Advt