
নাম, এ কে এম শামিম ওসমান৷
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ৷ শাসক আওয়ামি লিগের প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০১৪ থেকে এখনও পর্যন্ত টানা সাংসদ৷
আর ওপার বাংলার ওই শামিম ওসমানেরই তৈরি করা স্লোগান ধার করেই একুশের ভোটে উত্তাল এপার বাংলা৷
‘খেলা হবে’।
ছোট্ট এই দুটো শব্দকে একটা সময় মেগাহিট করে ছেড়েছিলেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ডাকসাইটে সাংসদ তথা আওয়ামি লিগ নেতা শামিম ওসমান।
সাংসদ শামিম প্রায় পাঁচ-ছ’বছর আগে এক সভায় একটি ডেডলাইনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “নারায়ণগঞ্জে আওয়ামি লিগ নিয়ে খেইলেন না। আওয়ামি লিগ নিয়ে খেললে তা হবে আগুন নিয়ে খেলা। পুলিশ-পুলিশ খেলা আমরা ছোটবেলা থেইকা খেলতাছি। ২৪ তারিখের পরে আসো, আমরা খেলবো৷ খেলা হবে।”
আরও পড়ুন-‘ওরা আগে জাতীয় শিক্ষানীতি ঠিক করুক’ বিজেপিকে তোপ শিক্ষামন্ত্রীর
মুহুর্তে এই ‘খেলা হবে’ কথাটি বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ড হয়ে যায়, কারণে- অকারণে ব্যবহার হতে শুরু করে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হোক বা পুলিশ প্রশাসন, নাম না করেও শিরদাঁড়ায় হিমস্রোত বইয়ে দেওয়া সুরেই শামিম প্রায় প্রতি ভাষণেই নিয়ম করে বলতেন, ‘খেলা হবে’। বলতেন, “কারে খেলা শেখান? আমরা তো ছোটবেলার খেলোয়াড়৷ আসুন, খেলা হবে”৷ ওই বক্তৃতার ভিডিও আজও ইউটিউব আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে আছে।
একুশের ভোটের আগে এপার বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে৷ নানা কারণে অথবা অকারণে প্রতিপক্ষর উদ্দেশে হুঙ্কার দিচ্ছেন সব দলের নেতারাই। আর সেই পটভূমিতেই “খেলা হবে” সংলাপ সীমান্ত পেরিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় স্লোগান। শুধু স্লোগান নয়, প্রতিবাদী গান তৈরি করা হয়েছে ‘খেলা হবে’-কে কেন্দ্র করে। প্রায় সব রাজনৈতিক দল গানে, মিছিলে, স্লোগানে সবখানে ‘খেলা হবে’-কে সামনে রেখে প্রচার চলছে। বাংলার বিধানসভা নির্বাচন কার্যত এবার ‘খেলা হবে’র দখলে। হঠাৎই এপারের রাজনীতিবিদদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওপারের শামিম ওসমানের সেই ভাইরাল স্লোগান ‘খেলা হবে’। এখন রাজ্যের ডাকসাইটে নেতারা সবাই কথায় কথায় হুমকি দিচ্ছেন ‘খেলা হবে’। এই শব্দ দুটির আগে বা পরে নানা শব্দ বা বাক্যজুড়ে বাঁধা হচ্ছে রাজনৈতিক গান,কবিতাও। মিছিলে ও পদযাত্রায় রুটিন মেনে উঠছে ‘খেলা হবে’ স্লোগান৷ কেউ কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’।
ঠিক কীভাবে ‘খেলা হবে’ বর্ডার পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়লো, তা পরিষ্কার নয়। তবে যতদূর জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বরে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করার পর নিজের খাসতালুক নন্দীগ্রামে প্রথম যে সভা করেছিলেন, সেখানেই তিনি ‘খেলা হবে’ শব্দ দুটি প্রথম ব্যবহার করেন।
তারপরই ওই ‘খেলা হবে’ লুফে নেন বীরভূম জেলার বিতর্কিত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। দলের সভা সমাবেশ থেকে তিনি ঠিক শামিম ওসমানের ঢঙেই নিয়মিত হুঙ্কার দিতে থাকেন, “শুধু খেলা হবে না, ভয়ঙ্কর খেলা হবে”৷
এরপর থেকেই শুধু তৃণমূল বা বিজেপি নয়, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই ‘খেলা হবে’ স্লোগান আওড়াতে শুরু করেছেন। বামপন্থী বা কংগ্রেসিরাও পিছিয়ে নেই। ইদানিং এই শব্দ দু’টির সঙ্গে যোগ হয়েছে কান ফাটানো আওয়াজে ‘খেলা হবে’ গানের সঙ্গে উদ্দাম নাচ। সরস্বতী পুজোর বিসর্জনেও ডিজে’রা ‘খেলা হবে’ বাজাচ্ছেন, এমন ঘটনাও এবার ঘটছে কলকাতায়৷
আরও পড়ুন-ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণেই মন্ত্রীর উপর হামলা? উত্তর খুঁজছে সিট
গত শনিবার বর্ধমানের মঙ্গলকোটে ডিজে দিয়ে ‘খেলা হবে’ গান বাজিয়ে তৃণমূল কর্মীরা উদ্দাম নেচেছেন৷ ওখানে তখন ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দলুই অনুগামীদের সঙ্গে “খেলা-খেলা-খেলা হবে” গানের সঙ্গে কোমর দুলিয়েছেন, সে ছবিও নিমেষে ভাইরাল হয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি বিজেপির উদ্দেশ্যে ডাক দিয়েছেন, “হোক না একটা খেলা৷ আমি গোলকিপার দাঁড়াবো, দেখি ক’টা গোল দিতে পারেন”। শনিবার কুলপিতে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও “মাঠে নেমে খেলবো” বলেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন যে এবার পুরোদস্তুর ‘খেলা’য় রূপান্তরিত হয়েছে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট।
এপারের রাজনীতিকরা ধন্যবাদ জানাতেই পারেন ওপারের শামিম ওসমান’কে।
( ছবিঃ শামিম ওসমানের)