শহরে পান প্রেমীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। অনুষ্ঠান বাড়ির ভুরিভোজের পর নিতান্ত শখের বসে কেউ কেউ মুখে তুলে নেন আদুরে পান। কারও কাছে এটা আবার নিয়মিত অভ্যাস। তবে যাই হোক না কেন এক খিলি পানের দাম কত হতে পারে বড়জোর? ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা। মধ্যবিত্ত বাঙালির সচেতন ভাবনায় এক খিলি পানের মূল্য বড়জোড় উঠবে এতদূর। তবে শহরে এমন এক দোকানও রয়েছে যেখানে এক খিলি পানের(special pan) দাম ১০০১ টাকা। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। বহু বছরের পুরনো ঐতিহাসিক এই পানের দোকান রয়েছে এই শহরেই। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় অবস্থিত এই দোকানের নাম কল্পতরু ভান্ডার(Kalpataru Bhandar)। দোকানের মালিক শ্যামল দত্ত(Shyamal Dutta)। গত ৮০-৮৫ বছর ধরে চলছে তাদের এই পানের ব্যবসা।

জানা যায় স্বাধীনতার ১০ বছর আগে ১৯৩৭ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশের ঢাকায় জন্ম এই পানের দোকানের। সেই সময় ব্রিটিশ প্রশাসক থেকে শুরু করে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালের মত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিশেষ এই পান খেয়ে ঢালাও প্রশংসা করে গিয়েছেন। জানা যায়, রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডু থেকে শুরু করে পিসি সরকার (সিনিয়র), ইন্দিরা গান্ধী, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, উত্তম কুমার, মান্না দে কে না ছিলেন সেই তালিকায়! নীল আর্মস্ট্রং নাকি চাঁদে পা রেখেই মুখে ভরছেন কল্পতরুর পান! এমন বিজ্ঞাপনও লাগানো ছিল দোকানের দেওয়ালে। এরপর থেকেই উত্তরোত্তর বাড়ে এই দোকানের জনপ্রিয়তা। পরে দেশভাগের পর কলকাতায় চলে আসে এই দোকান।
দোকানটিতে এক খিলি পানের সর্বনিম্ন দাম ৫ টাকা। পানের নাম মুখ রঞ্জন। এরপর রয়েছে ১১ টাকা দামের মুখ বিলাস। তালিকায় এরপর যথাক্রমে দিলখোশ ২১ টাকা, মন মাতোয়ারা ৫১ টাকা, বেনারসি রুচী ১০১ টাকা, বাদশাহী ৫০১ টাকা। এবং এরপরই কল্পতরু যার মূল্য ১০০১ টাকা। অবশ্য দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপকরণও কিছু কম নয়। পানটি সাজানো হয়, নেহরু পাতি, জাফরানে সংরক্ষিত সুপুরি, লং কেশর, জনকপুরী খয়ের, মুক্তাভস্ম চুন, বিশেষ মিক্সচার এবং আসল রুপোর তবক- এই সব উপকরণ মিলে মিশেই তৈরি হয় কল্পতরু স্পেশাল। যার গুণগত মান নিয়ে কোনও রকম আপস করাই চলে না একেবারেই। এলাহাবাদ, লখনউ, চেন্নাইয়ের মতো বিভিন্ন জায়গা বাছাই করা সেরা উপকরণগুলিই আনা হয় একটি পান সাজার জন্য। আর এই পানের প্রেমে শুধু কলকাতাই নয় দশকের পর দশক ধরে মুগ্ধ হয়েছে দেশের বহু মানুষ। ভিন রাজ্য থেকে কলকাতায় পাওয়া বহু মানুষ একবার পরখ করে যান কল্পতরুকে।
আরও পড়ুন:২০২০ অনেক শিক্ষা দিয়েছে, নববর্ষের শুভেচ্ছাতেও রাজ্য সরকারকে তোপ রাজ্যপালের
যদিও বর্তমানে এই হাজার টাকার পানে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে বলেই জানালেন দোকানের মালিক শ্যামল দত্ত। পাশাপাশি কলকাতা বাসীর পানের প্রতি আগ্রহ কমেছে আগের চেয়ে। যদি এসব কিছুর মাঝেই এমন বহু মানুষ আছেন যারা কলেজ স্ট্রিটে এসে খোজ করেন কল্পতরুর। পছন্দ মত সাজিয়ে নিয়ে যান পান। আজও এই গুটিকয় মানুষকে তৃপ্ত করেই আগামীর আশায় দিন গোনে ঐতিহ্যবাহী কল্পতরু।


































































































































