বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর বাকি এক সপ্তাহ। তৃতীয়া থেকেই পুলিশ পথে নামবে নিরাপত্তা-সুরক্ষা ও সাবধানতার স্বার্থে। কারণ, এবার করোনা মহামারীর মধ্যেই এসে গেছে দুর্গোৎসব। আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে শহরের বড় বড় পুজো মণ্ডপগুলির পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ও করোনা আবহে মণ্ডপ তৈরির যে নির্দেশিকা রাজ্য সরকার জারি করেছে, তা খতিয়ে দেখতে নগরপাল অনুজ শর্মা বিভিন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করেন।
দেশপ্রিয় পার্ক, চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সঙ্ঘ, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, মহম্মদ আলি পার্ক ও কলেজ স্কোয়্যার সর্বজনীন পুজো মণ্ডপগুলিতে যান নগরপাল। সঙ্গে থাকবেন বিভাগীয় উপনগরপাল ও সহকারী নগরপালরা। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে কলকাতা পুলিশের।
ভিড়ের ওপর নজর রাখতে এবার ৫২টি ওয়াচ টাওয়ার করা হচ্ছে। ১২টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের এলাকাকে। আমফান ঝড়ে বিধ্বস্ত সিসি টিভিগুলির অধিকাংশই সারানো বা বদলে ফেলা হয়েছে। অতিরিক্ত ৭০টিরও বেশি ক্লোজড সার্কিট টিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার।
পুজোমণ্ডপ ঘুরে দেখে কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা জানান, এই সবকটি পুজো মণ্ডপ প্রত্যেকেই ভালো করে সরকারি গাইডলাইন মেনে কাজ করছে। এবং তাদের পুজো মণ্ডপগুলি সবদিক থেকে উম্মুক্ত রয়েছে। প্রস্থান এবং প্রবেশ পথও উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে, যাতে কোনও কারণে পুজো মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় হলে তাদের অতি সহজেই যেন সেখান থেকে বাইরে বার করা যায়।
এছাড়াও পুজা মন্ডপের মধ্যে স্যানিটাইজার-এর ব্যবস্থা থাকছে। এমনকিযারা মাস্ক পরবেন না, তাদেরকে মাস্ক বিলি করা হবে বলেও এদিন অনুজ শর্মা জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি আর যে সমস্ত সুরক্ষা বিধি আছে সবগুলো মেনেই এই পুজো মণ্ডপগুলির কাজ হয়েছে। কারণ, এই পুজো মণ্ডপগুলি দক্ষিণ কলকাতা এবং মধ্য কলকাতার সব থেকে বড় বড় পুজো মণ্ডপ। প্রতিবছর এই মণ্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় হয়। তাই এ বছর কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও যদি দর্শনার্থীদের ভিড় হয় তাহলে কিভাবে তারা দর্শনার্থীদের সামলাবেন সে বিষয়ে নানা উপায় বাতলে দিয়েছেন এদিন অনুজ শর্মা।
পাশাপাশি তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারাও যেন এই সময় সমস্তরকম সুরক্ষা বিধি মেনে কাজ করেন। এবং দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি জানিয়েছেন, প্রত্যেক দর্শনার্থী যেন মাস্ক ব্যবহার করেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন। এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। তবেই এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ভালোভাবে উৎসব পালন করা যাবে।
এবার লোকাল ট্রেন চালু না থাকায় অন্যান্য বারের মতো লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর ঢল নামবে না বলেই মনে করছে পুলিশ। কিন্তু শুরুর দিকে করোনা আবহে ভিড় তেমন না হলেও মণ্ডপে মণ্ডপে শেষের দিকে ভিড়ের ঢল নামবে বলে পুলিশের ধারণা। সরকারি নির্দেশিকা কঠোরভাবে প্রয়োগ করার জন্য পুলিশ প্রস্তুত। প্রতিটি থানা এলাকার নির্দিষ্ট পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন স্থানীয় থানার অফিসাররা। মোটামুটিভাবে করোনা আবহে দর্শকের ঢল নিয়ন্ত্রণে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার সে ব্যাপারেও পুজো কমিটিগুলিকে একপ্রস্থ নির্দেশিকা জানিয়েছে থানাগুলি।
আরও পড়ুন- বিজেপির দুর্গাপুজো? কড়া প্রশ্ন পরিবার থেকেই
এ বছর কলকাতা পুলিশ এলাকায় নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৬ জন ডিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি সেক্টর ভিত্তিক কন্ট্রোল রুমও খোলা হবে। ২৫টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড শহরে ঘুরবে। ১০ হাজার পুলিশ কর্মী ৩ দফায় নিরাপত্তা ও ভিড় সামলাবেন। ৫০টিরও বেশি সিটি পেট্রোল এবং মোবাইল ভ্যান ঘুরবে শহরে। ১৩টি কুইক রেসপন্স টিম বড় মণ্ডপগুলির চারপাশে থাকবে। দমকল যাতে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছতে পারে, সেজন্য পুলিশের তরফে ১৬টি পাইলট কার মজুত রাখা হয়েছে।

































































































































