
“মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়” টিজার আর কাজ করছে না৷
ইঙ্গিত মিলেছিলো প্রধানমন্ত্রীর শেষ ‘মন কি বাত’-এর দিনেই৷ একদিকে যখন ‘মন খুলে’ কথা বলছেন মোদি, অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ডিসলাইকের জোয়ার৷ একটা সময় এমন ছিলো, যখন মোদির ভাষন পছন্দ করছেন ১৯ হাজার মানুষ, তখন ‘ডিসলাইক’ বাটনে পড়েছিলো ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষের হাত৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শেষমেশ তো প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় মোদির ওই ‘মন কি বাত’- এর কমেন্ট সেকশনই বন্ধ করে দেয়৷
দু’দিন আগে শিক্ষানীতি নিয়ে ‘জাতির উদ্দেশ্যে’ প্রধানমন্ত্রীর ভাষনেও এক ছবি৷ বিজেপির সেই ‘দক্ষ’ আইটি সেল, যে সেলটিকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এক টুইটে বলেছেন, “দুর্বৃত্তের আখড়া”, সেই সেলের প্রধান অমিত মালব্যও সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদির পতন ঠেকাতে পারেননি৷
দেশের অর্থনৈতিক অধঃপতন, জিডিপির সঙ্কোচন, মহামারি মোকাবিলায় লজ্জাজনক ব্যর্থতা, গুজরাটি বেনিয়ার মানসিকতায় চালিত হয়ে একের পর এক দেশের সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠানগুলি বেচে দেওয়া, দেশজুড়ে আকাশছোঁয়া বেকারত্ব ইত্যাদি বেশ কিছু ইতিবাচক কারনে দেশবাসী স্পষ্টই বার্তা দিচ্ছেন, নরেন্দ্র মোদি আর পছন্দের তালিকায় নেই৷ সরকারে থাকার সুযোগ নিয়ে নানাভাবে পপুলারিটি অর্জন করার ফিকির চালিয়ে যাচ্ছেন মাত্র৷

অথচ এই তো সেদিন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন নরেন্দ্র মোদি৷ মাঝের এই ক’টা দিনেই তাঁর এই বেহাল অবস্থা৷ রতনে যেমন রতন চেনে, তেমনই মোদি পাশে রেখেছেন দেশওয়ালা- ভাই অমিত শাহকে৷ বিরোধী বলছেন, বিজেপি নয়, কেন্দ্রে এখন ক্ষমতাসীন “এম অ্যাণ্ড এস কোম্পানি ৷
বিজেপি’র শীর্ষ স্তর এই পরিস্থিতি যে অনুধাবন করতে পারছেন না, একেবারেই তা নয়৷ প্রতিবাদ করতে না পারলেও কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি সমর্থন করতে পারছেন না গেরুয়া শিবিরের প্রভাবশালী অনেকেই৷ এই অংশের বক্তব্য, মোদির নামে ভোট পাওয়ার দিন আর নেই৷ উল্টে, মোদির নাম বেশি ব্যবহার করলে ব্যুমেরাং হবে৷
সম্ভবত এই কারনেই ‘এম অ্যাণ্ড এস কোম্পানি’-কে পিছনের বেঞ্চে পাঠিয়ে বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ বিহারের প্রয়াত ভূমিপুত্র ‘সুশান্ত সিং রাজপুত’৷ রহস্যমৃত এই অভিনেতাকে ‘পোস্টার বয়’ বানিয়ে, সেই আবেগকে ইভিএম-বন্দি করে বিহারের ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে বিজেপি৷ বিহারে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত মোদির নামে পরিচিত, বহুচর্চিত ফাঁপা সেই সব জয়ধ্বনি শোনা যায়নি৷ বরং প্রয়াত অভিনেতাকে নিয়ে বিজেপির ভোটের স্লোগান, ‘না ভুলে হ্যায়, না ভুলনে দেঙ্গে’। গোটা দেশের সর্বস্তরে বিজেপির সামগ্রিক ব্যর্থতা এবং বিহারে নীতিশ কুমারের জেডিইউ-বিজেপি
সরকারের রাজ্যস্তরের ব্যর্থতা ঢাকতেই প্রয়াত সুশান্ত সিং রাজপুতকে ঢাল বানানো হয়েছে৷ তাই ভোটমুখী বিহার ছেয়ে গিয়েছে সুশান্তের পোস্টারে। বিহারে বিজেপির ত্রাতা আজ আর মোদি নন, দল বাচাঁতে মৃত সুশান্ত রাজপুত-ই আজ গেরুয়া শিবিরের কাছে ভেন্টিলেশন৷

ওদিকে, সুশান্তের রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে CBI তদন্ত শুরু করলেও, বিষয়টি এখন পরিকল্পিতভাবেই হত্যা-তদন্ত থেকে সরে এসেছে৷ CBI নয়, এখন NCB তদন্ত করছে মাদক- যোগের আর ED আর্থিক তছরূপের তদন্ত চালাচ্ছে৷ NCB মঙ্গলবার ওই মাদক-চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারও করেছে৷ কিন্তু, NCB বা ED-র কারো কাজই হত্যা-তদন্ত নয়৷ সুশান্ত খুন হয়েছেন, না’কি আত্মঘাতী, সে বিষয়ে এখনও CBI মুখ খোলেনি৷ বোঝাও যাচ্ছে না, CBI মৃত্যু-তদন্ত শেষ করে ফেলেছে কি’না৷ ওদিকে, রিয়া ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আনা সুশান্তের ১৫ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে গেলেও এখনও ED নির্দিষ্ট কোনও কথা বলেনি৷
সম্ভবত বিহারের ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলবে৷ ঝুলে থাকবে হত্যা না খুনের তদন্ত৷ বিজেপি-মদতপুষ্ট সংবাদমাধ্যম এখন মাদক-যোগ নিয়েই গলা ফাটাচ্ছে৷ রিয়া চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবারকে মাদক-পাচারকারী এবং আর্থিক তছরূপকারী বানানো হচ্ছে ৷ গ্রেফতারও হয়েছেন রিয়া৷ অথচ, ত্রিসীমানাতেও নেই খুনের তদন্ত৷ এইভাবে তিনটি এজেন্সি তিন ধরনের তদন্ত চালালে, স্বাভাবিকভাবেই সময় বেশি লাগবে তদন্তের জাল গুটিয়ে আনতে৷ বিজেপিও চায় তদন্ত দীর্ঘায়িত করতে৷ নির্বাচন কমিশন আগেই জানিয়েছে, বিহারের ভোট সেরে ফেলা হবে নভেম্বরের মধ্যে৷ মাঝে মাত্র দু’মাস৷ এই দু’মাসের মধ্যে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্য রহস্যের কিনারা হয়ে গেলে, বিজেপির ভোটে জেতার বারোটা বাজবে৷ সে কারনেই আপাতত ৩টি কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে মাঠে নামিয়ে অযথা কালক্ষেপ পর্ব চালানো হচ্ছে৷ তদন্ত রিপোর্ট ভোটের আগে প্রকাশ হলে এবং সেই রিপোর্টে আত্মহত্যার তত্ত্বেই CBI সিলমোহর দিলে, বিহার ভোটে মুখ থুবড়ে পড়তে পারেন এই মুহুর্তে ‘ইমেজহীন’ প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর টিম৷ তাই বিষয়টিকে নানাভাবে জটিল করা হচ্ছে, যাতে সুশান্তের মৃত্য তদন্তের কাজ বিহার ভোট না হওয় পর্যন্ত শেষ না হয়৷ বিরোধীরা বলেছেন, ব্যর্থতা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই সুশান্ত-আবেগ জিইয়ে রাখা হয়েছে৷ ভোটে যাতে সুশান্তের ছবি ব্যবহার করতে পারে মোদি-শাহের দল৷

কতখানি হতাশজনক পরিস্থিতিতে আজ দাঁড়িয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ সাহসে কুলোচ্ছে না, নিজের ভাবমূর্তি অথবা দলের সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে বিহার ভোটে জেতার৷ দেশের ‘বিকাশ-পুরুষ’ নরেন্দ্র মোদি তাই আজ নির্লজ্জভাবে নিজেকে এবং নিজের দলকে প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের ছবির তলায় টেনে নামিয়েছেন৷
নিজের ক্যারিশমায় ভোটে জেতার সাহসের আজ বড়ই অভাব ঘটেছে ওই ৫৬ ইঞ্চি বুকে ?
আরও পড়ুন : নিজেরা গুলি চালিয়ে দায়ী করছে ভারতকে! ফের চিনের মিথ্যাচার ফাঁস করল সেনা



































































































































