
এটাই রাজনীতি ! কার্যত পথভ্রষ্ট হয়ে এখন এই স্তরেই ঘোরাঘুরি করছে৷
দিল্লিতে যেটা যথার্থ, বাংলায় তা ‘দ্বিচারিতা’৷ আবার বাংলায় যা স্বাস্থ্য-সচেতনতা, দিল্লির বেলায় তা ‘গণতন্ত্র হত্যা’৷
লোকসভার বাদল অধিবেশনে এবার
প্রশ্নোত্তর-পর্ব থাকছে না বলে জানানো হয় দু’দিন আগে৷ ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল-সহ বিরোধী সাংসদরা৷ তাদের মন্তব্য, “গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে৷ সাংসদদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছে”৷ শাসক দল যথারীতি মহামারির উল্লেখ করে এই কাজকে সমর্থন করেছে৷
এর দু’দিন পর বঙ্গ- বিধানসভায় স্পিকার জানিয়েছেন, ” করোনা- বিধি এবং সময়ের অভাবে এ বার প্রশ্নোত্তর-পর্ব রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে”।
আরও পড়ুন : নিউ নর্মালের জের! একজন যাত্রীকে নিয়েই ছুটল রাজধানী এক্সপ্রেস
এ বার রে রে করে উঠেছে কেন্দ্রের শাসক দল৷ বিজেপি পরিষদীয় দলনেতা মনোজ টিগ্গা সংসদের ক্ষেত্রে ভূমিকা উল্লেখ করে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’-র অভিযোগ এনেছেন৷ ফলে সঙ্গত কারনেই কোন কাজটি গণতন্ত্রকে পুষ্ট করছে, আর কোনটাই বা হত্যা করছে, তা বুঝতে
সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত ৷
মহামারি’র কারণ দেখিয়ে
লোকসভার পর বঙ্গ- বিধানসভার বর্ধিত বাজেট অধিবেশনে এবার থাকছেনা প্রশ্নোত্তর-পর্ব৷ এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিধানসভার স্পিকার৷ এই অধিবেশন চলবে দু’দিন। শোকপ্রস্তাবের পর প্রথম দিন সভা মুলতুবি, পরে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হবে কার্যত এক দিনের।
‘এ ভাবে লোক-দেখানো বিধানসভা বসিয়ে লাভ কতখানি’, সেই প্রশ্ন তুলে বিজেপি-সহ বিরোধীরা সরব হয়েছে এই নির্ঘন্ট বদল করে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে অধিবেশন এবং প্রশ্নোত্তর-পর্ব রাখার দাবিতে৷ ঠিক একই দাবি সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের ক্ষেত্রে তুলেছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা৷
দিল্লিতে যারা বিরোধী আসনে আছেন, তাঁরা সরব হয়েছেন, মহামারি এবং লকডাউনের জেরে জনজীবনে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে লোকসভায় আলোচনার সুযোগ দিতে হবে৷ প্রশ্ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবেনা৷” মজার বিষয়, রাজ্য বিধানসভার ক্ষেত্রে হুবহু একই কথা বলছেন রাজ্যের বিজেপি পরিষদীয় দল৷ তবে যেহেতু দু’ক্ষেত্রেই তারা বিরোধী আসনে, তাই এই ইস্যুতে দু’ক্ষেত্রেই এক কথা বলছে কংগ্রেস ও বামেরা৷
লোকসভায় বিরোধীরা গলা ফাটিয়ে বাইট দিচ্ছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন, টুইট করে বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনা, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা, দেশজুড়ে ভয়াবহ অর্থনীতির সঙ্কট, এ সব বিষয়ে আলোচনা এবং
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে আলোচনা ও প্রশ্ন করার অধিকার চাই৷ ওখানে বিজেপি নেহাতই শ্রোতা৷
আরও পড়ুন : শান্তির জন্য দরকার বিশ্বাসের সম্পর্ক, চিনকে বার্তা রাজনাথের
এখানেও ঠিক একই দাবি উঠেছে৷ এখানেও প্রশ্নোত্তর- পর্বের সুযোগ দেওয়ার দাবিও উঠেছে৷ শুধু “কেন্দ্রীয় সরকার”-এর পরিবর্তে “রাজ্য সরকার” কথাটি ব্যবহৃত হচ্ছে৷ বাকিটা একদম এক৷ দিল্লি এবং কলকাতায় বক্তা এবং শ্রোতার আসন বদলাবদলি হয়েছে৷ সংসদে এই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েও রাজ্যে কেন প্রশ্নোত্তর পর্ব নেই, তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে
বিজেপি৷ আবার গেরুয়া- বিধায়কদের কাছে রাজ্যে এ কাজ ‘অগণতান্ত্রিক’ মনে হলেও, সংসদের ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন৷ ওদিকে কংগ্রেস ও বামেদের বক্তব্য, সংসদে প্রশ্নোত্তর বাদ দেওয়া যেমন অন্যায়, বিধানসভায় তেমন হলে সেটাও একই রকম অন্যায়। আর বিজেপি-র পরিষদীয় দলনেতা মনোজ টিগ্গা তো সংসদ ও বিধানসভার উদাহরণ টেনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগই এনেছেন। এক্ষেত্রে দিল্লিতে নিজেদেরও যে সেই একই দ্বিচারী ভূমিকা, তা নিয়ে বিজেপি একটি শব্দও খরচ করেননি৷
সোশ্যাল মিডিয়া উপচে দিয়ে বিরোধী সাংসদরা বলছেন যে প্রশ্নোত্তর পর্ব না হওয়া গণতন্ত্রের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত। এই রাজ্য বিধানসভার একই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনও কাউকে, বিশেষত তৃণমূলকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি৷
ওদিকে, বিরোধীদের চাপে কেন্দ্র জানিয়েছে, বাদল অধিবেশনে সাংসদরা লিখিত প্রশ্নের সুযোগ পাবেন৷ আগামী ৮ তারিখ সর্বদলীয় বৈঠক করবেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার। এখন দেখার কেন্দ্রের পথ ধরে রাজ্যও কোনও বদল ঘটায় কি’না৷
দেশ বা রাজ্যের শাসক বা বিরোধীদের ভূমিকা প্রতিদিনই হাস্যকর হয়ে উঠছে৷ রাজনীতিও আজ সত্যিই কানাগলিতে ঢুকে পড়েছে৷
আরও পড়ুন : অরুণাচলপ্রদেশ থেকে পাঁচ ভারতীয়কে অপহরণ করেছে চিনা সেনা!



































































































































