
একজন পূর্ণমন্ত্রী। আরেকজন রাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথম জন হলেন গৌতম দেব। দ্বিতীয় জন ইন্দ্রনীল সেন। দু’জনেই গত কয়েক বছর পর্যটন দফতরের দায়িত্বে থাকার সুবাদে জানেন অনেক কিছুই। হোম স্টে, ভিলেজ ট্যুরিজম, টি ট্যুরিজম ইত্যাদি। করোনার সময়ে সেই ট্যুরিজমের উপরে নির্ভরশীল পরিবার, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা (নাকি দোকানদার বলাই ভাল হবে) কি ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়েছেন সেটা কি বুঝতে পারছেন! যদি বুঝতে পেরে থাকেন তা হলে কিছু করছেন না কেন!!
সমর বর্মন (নাম পরিবর্তিত) উত্তরবঙ্গের একজন ছোট গাড়ির ব্যবসায়ী। জঙ্গলে পর্যটকদের দোরানোর জন্য সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেছিলেন দুটো। একটি নিজের টাকায়। আরেকটি বউয়ের গয়না একটি বেসরকারি ফিনান্স কোম্পানিতে বন্ধক রেখে। জানুয়ারিতে লোন নেওয়ার পর থেকে মার্চের গোড়া অবধি ভালোই চলছিল ওর। কিস্তি দিতে অসুবিধে হচ্ছিল না।
কিন্তু, মার্চের শেষ সপ্তাহে যেই না লকডাউনের থাবা পড়ল অমনি সমরের মাথায় হাত! এখন সমর দ্বিতীয় গাড়িটি বিক্রি করতে চেয়েও খদ্দের পাচ্ছে না। প্রথম গাড়িও বসে বসে জং ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
সমর জানান, সরকারি তরফে কোনও সহযোগিতা পেলে এ যাত্রায় বেঁচে থাকতে পারব। না হলে কী যে হবে জানেন না তিনি।
আচ্ছা, লামাহাটার হোম স্টে, তাকদার ভিলেজ ট্যুরিজম, জয়ন্তীর ছোট মাপের রিসর্ট মালিকদের হাল কি সেটা খোঁজ রাখেন কেউ! প্রায় সকলেই কোনমতে ডালভাত খেয়ে কাটাচ্ছেন। কবে পর্যটকরা অবাধে যাতায়াত করতে পারবেন কেউ জানে না। এঁদের অনেকেরই ধারদেনা রয়েছে। তা কীভাবে শোধ হবে তাঁরা জানেন না। ফলে, মানসিকভাবে অনেকেই বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছেন।
সিকিমের কথা মনে করিয়ে দেওয়া যাক। সেখানে সরকারি তরফে এমন হোম স্টে, ভিলেজ ট্যুরিজমে যুক্তদের খবারখবর নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আশ্বাস দিয়েছে সেখানকার রাজ্য সরকার। তা হলে উত্তরবঙ্গর কিংবা দক্ষিণবঙ্গ, পর্যটন ব্যবসা না হওয়ার কারণে যাঁরা ভাতে মরার উপক্রম তাঁদের পাসে দাঁড়াতে গৌতমবাবু, ইন্দ্রনীলবাবুরা কেন উদ্যোগী হবেন না সেটাই তো ভুক্তভোগীদের অনেকেরই প্রশ্ন।
ঘটনাচক্রে, দুই মন্ত্রীই এখন করোনা মোকাবিলায় নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। কিন্তু, ভুক্তভোগীরা অনেকেই মনে করেন, শত ব্যবস্তা সত্ত্বেও পর্যটন ব্যবসায় যুক্তদের সমস্যার সমাধানের জন্য দুই মন্ত্রীকেই সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে প্রস্তাব পেশ করতে হবে।
এটা মনে রাখতে হবে, কয়েক লক্ষ লোক পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সুন্দরবন থেকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে কুলিক, পাহাড় থেকে সমতল, সর্বত্র পর্যটকদের অনুপস্থিতিতে একটা বড় মাপের জনসংখ্যা অর্থোপার্জন থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। সেটা মাথায় রেখে একটু উদ্যোগী হলে ক্ষতি কি!
সরকারি টাকা তো কতভাবেই খরচ হয়। না হয়, পর্যটনে যুক্ত ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বেঁচে থাকার রসদ হিসেবে কিছু টাকা না হয় সরকারি খাত থেকে দেওয়াই হল। সে জন্য প্রয়োজনে প্রকল্প তৈরি হোক। মনে রাখতে হবে, এই করোনা-কালে বিপন্ন মানুষেরা কিন্তু হিসেব বুঝে নেওয়ার জন্য আগামী ভোট অবধি যে ভাবেই হোক বেঁচে থাকার জন্য দাঁতে দাঁত চিপে সব কিছু সহ্য করে যাবে।