মহামারির আবহে থমকে গিয়েছে চিৎপুর৷ ফের কবে হবে যাত্রাপালা, আদৌ আর হবে কি’না, চিৎপুর জানে না৷ রথের দিন নতুন যাত্রাপালা আত্মপ্রকাশ না করার ঘটনা চিৎপুর যাত্রা পাড়ায় এটাই প্রথমবারের অঘটন।
অনিশ্চয়তার মেঘ আর অনাহার এখন চিৎপুরের সঙ্গী৷ সব থেকে খারাপ অবস্থা যাত্রাপালার সঙ্গে যুক্ত দিন মজুরি-র ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীরা। অনামী শিল্পী, মিউজিক বা লাইট বয়, যাত্রা দলগুলির ম্যানেজারদের৷ যাত্রা দলগুলির সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা বেশিরভাগই গ্রাম থেকে আসেন কাজ করতে। এখন তারা গ্রামে ফিরে অর্থকষ্টে ভুগছেন। সাম্প্রতিক মহামারি সম্ভবত পাকাপাকিভাবেই তুলে দিলো বিনোদন শিল্পের অন্যতম স্তম্ভ, যাত্রাশিল্পকে৷
রথযাত্রার সঙ্গে যাত্রাশিল্পের নাড়ির যোগ৷ রথের দিনের খবরের কাগজের পাতাজুড়ে থাকতো বিভিন্ন অপেরার বড় বড় বিজ্ঞাপন৷ একাধিক সংবাদপত্র যাত্রা নিয়ে আলাদা সাপ্লিমেন্টও প্রকাশ করতো৷ এসব এখন অতীত৷ মঙ্গলবার কোনও খবরের কাগজেই যাত্রার বিজ্ঞাপন নেই, আলাদা সাপ্লিমেন্ট তো দূরের কথা৷
চিৎপুরের রাস্তার দু’পাশ জুড়ে যাত্রা কোম্পানির পর পর অফিসঘর খাঁ খাঁ করছে৷ দেখা যেতো, রংচঙে ফ্লেক্সে- এ নতুন পালার ঘোষণা৷ চমক দেওয়া পালার নাম৷ এ বছর সব ফাঁকা৷ রথযাত্রার দিনই মোটামুটি গোটা বছরের বায়না হয়ে যেতো৷ এবার তাও ঢুকে গিয়েছে ইতিহাসের গর্ভে৷ চিৎপুর বা রবীন্দ্র সরণীর মেজাজটাও এবার হারিয়ে গিয়েছে৷ মহামারি আর সামাজিক দূরত্ববিধির ফাঁসে যাত্রাপাড়া হারিয়েছে চেনা ছন্দ।
রথযাত্রার দিনকে শুভ মহরত হিসেবে এতদিন মানতো চিৎপুরের যাত্রা সংস্থাগুলি। রথযাত্রার দিন থেকেই প্রস্তুতিও শুরু করতেন শিল্পী, প্রযোজক, পালাকার, কলাকুশলীরা। এবারের রথের দিন চিৎপুরে গিয়ে বোঝার উপায় নেই৷ সেই গমগমে পরিবেশ উধাও৷ অধিকাংশ যাত্রা সংস্থার অফিসই বন্ধ৷ এবার সব শুনশান। এ বছর বুকিং তো দূরের কথা, যাত্রাপালা আর কোনওদিন মাথা তুলতে পারবে কি’না, রথের দিন সেই উত্তরই খুঁজছে চিৎপুর৷