পরিযায়ী বিভ্রান্তি! রাজনীতির নামে ফাজলামি হচ্ছে? কুণাল ঘোষের কলম

0
2
কুণাল ঘোষ

ক) কেন্দ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সময় না দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করল। পরিযায়ীরা বিপদে পড়লেন। বিরোধীরা বলল, কেন পরিযায়ীদের ফেরার সময় দেওয়া হল না?

খ) অচলাবস্থা চলল। পরিযায়ীরা বাড়ি ফিরতে মরিয়া হলেন।
কেন্দ্র বলল, রাজ্যগুলি নিচ্ছে না। রাজ্যগুলি বলল, কেন্দ্র নিষ্ক্রিয়।

গ) মর্মান্তিক দৃশ্য দেখা গেল। কাজ নেই। খাবার নেই। পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা। রাস্তায় মৃত্যু। কেন্দ্র নীরব দর্শক। রাজ্যগুলি বলল কেন্দ্রের দোষ।

ঘ) চারদিকের প্রবল চাপে কিছু ট্রেনের ব্যবস্থা হল। কেন্দ্র বলল আমরা করছি। রাজ্যগুলি প্রচার করল আমাদের কৃতিত্বেই সকলকে ফেরাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কৃতিত্বের দড়িটানাটানির প্রচারে ছয়লাপ। কার উদ্যোগে ট্রেন আসছে, তার নামে জয়ধ্বনি।

ঙ) করোনা বাড়তেই উল্টোসুর। কেন্দ্র ঢালাও ট্রেন দিয়ে দায় সারছে। আর রাজ্যগুলো সাতদিনের মধ্যেই ট্রেনের কৃতিত্বের দাবি থেকে পাল্টি খেয়ে বলছে কেন্দ্র পরিযায়ীদের পাঠিয়ে করোনা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

চ) রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কোনো হিসেব ছিল না। 34 বছরের তালিকা নেই। সেটি আপডেট বা আপগ্রেড করার চেষ্টাও হয়নি। এই রাজ্য থেকে অন্য কোন রাজ্যে কতজন আছে, তার কোনো হিসেব বা ধারণা ছিল না। তাই শুরুতে ফেরানোর কৃতিত্বের দড়ি টানাটানি শেষে আর্তনাদে পরিণত হয়েছে। সরকার দূরের কথা, বাতেলাবাজ শ্রমিক সংগঠনগুলোর দপ্তরেও এমন রেকর্ড এতদিনেও নেই।

ছ) তাহলে পরিযায়ী শ্রমিকরা করবেন কী? যেখানে গিয়েছিলেন সেখানে কাজ চলে গিয়েছে। খাবার নেই। বহুক্ষেত্রে বাসস্থান নেই। ফিরতে চাইলে বলব, ফেরানো যাবে না। করোনা ছড়াবে।
আবার আমরাই স্টেশনে মায়ের মৃতদেহের পাশে অবোধ শিশুর খেলা দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় মায়াকান্নার ঝড় তুলব। বিপ্লবী সাজব ।

তাহলে এরা, এই পরিযায়ী শ্রমজীবীরা করবে কী?
আমরাই বা এতদিন করলাম কী? কী করল রাষ্ট্র?
শুধু রাজনীতি ছাড়া।

লজ্জা লাগল, এর মধ্যেও একাধিক মিডিয়ায় দেখলাম তারকাদের জামাইষষ্ঠী পালন। ক্যামেরা ক্লোজ আপ করল খাবার সাজানো প্লেটে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কিছু খাদ্যসহ দাঁত ক্যালানো ছবি, এবার ঘরে বসেই !!

গা ঘিনঘিন করছে।

রাষ্ট্রে চলছে বহুদলীয় রাজনীতির টানাটানি।
আমরা আছি আমাদের তালে।

পরিযায়ী শ্রমিক উচ্ছন্নে যাক।