
জেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এক মায়ের মৃত্যু; এবং তারপর..
26/5 মঙ্গলবার সন্ধের পর উত্তরপূর্ব কলকাতার শহরতলীর এক নার্সিংহোমে পারুলবালা মন্ডল নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। ইএসআই হাসপাতালগুলিতে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সেই হাসপাতালই চিকিৎসার জন্য তাঁকে এই বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করেছিল। টাই আপ থাকার সূত্রে। সেখানেই মৃত্যু।
ঘটনা হল, প্রয়াত পারুলবালার একমাত্র সন্তান মধুসূদন মণ্ডল ( নারায়ণ) মাওবাদী নেতা হওয়ার অভিযোগে এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্সি জেলে বিচারাধীন বন্দি। সেল ওয়ার্ডে আছেন।
মধুদার স্ত্রী ও পুত্র,কন্যা হাসপাতালের পরামর্শমত হলদিয়ার বাড়িতেই রয়েছেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, লকডাউনে কলকাতায় না থাকতে। দরকার হলে খবর দেওয়া হবে।
সন্ধেয় ফোন পেয়েছে প্রয়াত বৃদ্ধার নাতি: মৃত্যুসংবাদ।
সদ্যযুবা ছেলেটি এই কঠিন পরিস্থিতিতে বিভ্রান্ত।
ঠাকুমার মৃতদেহ কলকাতায়। যে এলাকায়, সে তা চেনেও না।
বাবা কারাগারে।
সে তার মা আর বোনকে নিয়ে হলদিয়ার বাড়িতে।
টেলিফোন বিভ্রাটে বাবার আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলতে পারছে না।
আইন বলছে: মধুসূদন মন্ডলকে মায়ের মরদেহের শেষকৃত্যে যেতে হলে হয় কোর্টের অনুমতি চাই। অথবা জেল কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি। মধুসূদন শাস্তি পানি। গত কয়েকবছর ধরে বিচারাধীন।
সদ্যযুবাটির ফোন পেয়েছি।
আমি যখন বন্দি, যাঁদের সঙ্গে আলাপ, যাঁদের কাছ থেকে দেখেছি এবং যাঁরা আমাকে আগলে রেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে মধুদা অন্যতম।
মধুদার কাছ থেকে তাঁদের দর্শন শুনতাম।
তিনি হত্যার রাজনীতির বিপক্ষে। তিনি গানবাজনা, সংস্কৃতিচর্চা, সমাজে মিশে চিন্তাবদলের পক্ষে।
জেলে গান লেখেন। গান করেন। কিষাণজিকে তিনিই চিঠি দিয়ে রণনীতি সম্পর্কে ভিন্নমত জানিয়েছিলেন।
আমার জ্বর হলেও তিনি জেল প্রশাসনের সঙ্গে ঝগড়া করতেন কেন অত্যাচার, অযত্ন হবে!!
দেখতাম, বাড়ি ফেরার কী আর্তি। মায়ের জন্যে, ছেলে মেয়ে বড় হচ্ছে, তাদের চিন্তা।
আমার অসুস্থ মায়ের খোঁজ নিতেন বারবার।
আমার এই মানুষটাকে ভালো লেগেছিল।
এখন, এই পোস্ট যখন করছি, তখনও মধুদা জানেন না তাঁর মা আর নেই।
বছর দুয়েক আগে কঘন্টার প্যারোলে অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে বাড়ি গিয়েছিলেন।
ফেরার সময় পুলিশের গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর মা। ভিড়ের মধ্যে
মধুদা গাইছিলেন,” একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।” ভিডিওটা চোখে ভাসছে।
কিন্তু এখন কী করা যায়?
প্রথম কাজ, মৃতদেহ নার্সিংহোমে রাখতে হবে। ওরা হলদিয়া থেকে আসবে।
আর মধুদা যদি অনুমতি পেয়ে পুলিশ প্রহরায় মায়ের শেষকৃত্যে যেতে পারেন।
মধুদার ছেলের পক্ষে ওখান থেকে এই কাজ করা খুবই কঠিন। ফোন বিভ্রাটে সমস্যা বেড়েছে। জেলের ল্যান্ডলাইনও অমিল।
ছেলেটি বলেছে,” বাবার ইচ্ছে ছিল ঠাকুরমার চক্ষুদান হোক। একটু দেখবেন?”
চেষ্টা করেছি। পারিনি।
একটি সংগঠন বলল এখন সংগ্রহ করছে না। অন্য দুটিকে ফোনেই পেলাম না। পরে এক যুবনেতার উদ্যোগে আবার চেষ্টা শুরু করা গিয়েছে। জানা নেই কী হবে।
তবে আমি ধন্যবাদ দেবো এক তরুণ আইনজীবীকে, একবার বলতেই সে মধুদার উকিলবাবুকে খুঁজে বার করে বিষয়টি জানিয়েছে। তিনি কাল বা পরশু কোর্টে আবেদন করবেন।
ধন্যবাদ দেব এক মন্ত্রীকে, বিষয়টি জানা মাত্র মানবিক কারণে নার্সিংহোমকে বলেছেন দেহ আপাতত সংরক্ষণে রাখতে।
ধন্যবাদ দেবো এক সিনিয়র সাংবাদিককে, যাঁকে বলার পরেই পরিচিত এক শীর্ষকর্তাকে বলে নিয়মের প্রক্রিয়া এগিয়ে রেখেছেন।
এখন, অপেক্ষা, দুএকদিনের মধ্যে মধুদা যদি জেল থেকে বেরিয়ে মায়ের মরদেহের সামনে দাঁড়াতে পারেন।
আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করবেন।
আইনের জটিলতায় এক পুত্র তাঁর মায়ের শেষকৃত্যে যেতে পারবেন না, এমন যেন না হয়।
মধুদার ছেলে বুধবার সকালে আবেদন নিয়ে হলদিয়া থেকে প্রেসিডেন্সিতে আসছে। ফোন যোগাযোগ কঠিন। সংশ্লিষ্ট কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। হচ্ছে। দয়া করে বিষয়টি দেখুন তাঁরা।