করোনা আবহেই পত্রযুদ্ধের জেরে নবান্ন ও রাজভবনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে৷ এবং তা জেনে গিয়েছে গোটা দেশ৷ মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাবে রাজ্যপাল যে উত্তর দিয়েছেন, তার একটি অংশের বয়ানে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্দরে৷
রাজ্যপাল তাঁর উত্তরে উল্লেখ করেছেন, রাজ্য সরকারের ‘সংখ্যালঘু তোষন’-এর কথা। চিঠিতে বলা হয়েছে, দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজের তবলিগি জমায়েতের কথাও৷ মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে রাজ্যপাল বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজামুদ্দিন মার্কাজ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন “সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন করবেন না”৷
ঠিক এইখানেই কড়া আপত্তি জানিয়েছে রাজ্যের ইমামদের সংগঠন, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন’৷
রাজ্যপালের অস্বস্তি শতগুন বাড়িয়ে এই সংগঠন সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ তুলে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক পদে থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল৷
বাংলার ইমামদের বক্তব্য, দিল্লির নিজামউদ্দিন মার্কাজের নিয়ে রাজ্যপাল যে মন্তব্য করেছেন, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে৷রাজ্যপাল তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু হবে। রাজ্যের প্রায় ৪০ হাজার মসজিদের ইমাম এই আন্দোলনে অংশ নেবেন৷
সূত্রের খবর, ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সোমবার রাজ্যপালকে লেখা এক চিঠিতে এই ইস্যুতে চরম অসন্তোষের কথাই বলা হয়েছে৷ সংগঠনের চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া সোমবার রাজ্যপালকে পাঠানো চিঠির প্রসঙ্গে বলেন, “নিজামুদ্দিন মার্কাজের ঘটনা দিল্লি পুলিশ এবং বিদেশমন্ত্রকের আওতাধীন৷ এর সঙ্গে বাংলা এবং বাংলার সরকার আদৌ যুক্ত নয়৷”
মহম্মদ ইয়াহিয়া বলেছেন, “দেশের মানুষের মার্কাজের ঘটনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।নিজামুদ্দিন কর্তৃপক্ষ কোনও আইন লঙ্ঘন করে থাকলে দেশের আইন তার ব্যবস্থা নেবে। একজন আইনজীবী হিসেবে রাজ্যপালের এটা জানা উচিত ছিলো৷”
ইমাম-সংগঠন রাজ্যপালকে বলেছে,
এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমকে সেদিন বলেছিলেন, “সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন করবেন না”, এই উত্তরের কোথায় ভুল রয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় সংখ্যালঘু সমাজকে টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোষনের অভিযোগ এনে
সংবিধানবিরোধী কাজ করেছেন৷ এই বক্তব্য রাজ্যপালকে প্রত্যাহার করতে হবে৷”
চিঠিতে ইমামদের সংগঠন বলেছে, এখন যেহেতু লকডাউন চলছে, তাই রাজভবনে তারা বিক্ষোভ দেখাতে যেতে পারছে না। তবে তাদের এই দাবি মানা না হলে, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে ইমামরা৷” ইমামদের সংগঠনের এই মনোভাবে স্পষ্ট হয়েছে, রাজ্যপালের বক্তব্যে তারা মোটেই সন্তুষ্ট নয়। ইমাম- সংগঠনের তরফে পাঠানো এই চিঠির প্রতিক্রিয়ায় রাজভবন এখনও কিছু জানায়নি৷