এই লকডাউনে যখন উড়ান বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, ঠিক তখনই, বুধবার ফেসবুকে একাধিক ছবি পোস্ট করেছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খানের স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খান৷ ছবির সঙ্গে লিখেছেন, “ঘরে ফেরার মজাই আলাদা, THE CITY OF JOY & DELHI দিলওয়ালো কি”৷ এই দু’লাইন লেখার মাঝে এই কঠিন সময়ে কেন্দ্রের শাসক দলের এক সাংসদের স্ত্রীর আনন্দের বহিঃপ্রকাশে রয়েছে একাধিক ♥, যা দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন, “feeling lovely” ৷ দেশ গোল্লায় যাক, ওনার চিত্তে এই মুহুর্তে সীমাহীন প্রেম৷

২২ এপ্রিল, বুধবার এই পোস্ট করে সুজাতা মণ্ডল খান বুঝিয়েছেন, লকডাউনে উড়ান বন্ধ থাকলেও তিনি spicejet-এর বিমানে দিল্লি থেকে ফিরেছেন৷ ৯-১০টি ছবি পোস্ট করেছেন৷ এই পোস্টে অজস্র কমেন্ট আছে৷ কমেন্টগুলো পড়লেই বোঝা যায় সুজাতা মণ্ডল খানের এই পোস্টকে ঠিক কী নজরে দেখা হচ্ছে৷ অনেকে এমন কথাও বলেছেন, “গালাগালি খাওয়ার পর সুজাতা মণ্ডল খান আর একটি পোস্ট করে নাটক করতে পারেন, ” আমি এই পোস্ট করিনি, আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কেউ এ কাজ করেছে”৷

সে যে হাস্যকর সাফাই-ই ওই মহিলা দিন, প্রশ্ন উঠেছে একাধিক৷
১) উড়ান বন্ধ, সুজাতা মণ্ডল খান দিল্লি থেকে কোন বিমানে কলকাতায় এলেন ?
২) যদি কোনও বিশেষ বিমানে উনি এসে থাকেন, তাহলে কোন অধিকারে তিনি এই মহা-সংকটকালে বিশেষ বিমানে ওঠার সুযোগ পেলেন ? তিনি তো সাংসদ নন৷
৩) একজন সাংসদের স্ত্রী তিনি৷ ওই সাংসদটি বিজেপি’র৷ কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশে লকডাউনের ডাক দিয়েছেন৷ যে যেখানে আছেন, তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেছেন৷ তাহলে প্রধানমন্ত্রীর দলের একজন সাংসদের স্ত্রী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে কোন অধিকারে বুড়ো আঙুল দেখালেন ?

৪) এই পরিস্থিতিতে দিল্লি থেকে রাজ্যে এসেছেন এই মহিলা৷ বাড়ি নয়, তাঁর সরাসরি কোয়ারান্টাইন সেন্টারে যাওয়ার কথা৷ তিনি গেলেন না কেন ? তিনি যে এ রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়িয়ে দেবেন না, তার গ্যারান্টি কে দেবে ? প্রধানমন্ত্রী ? না বিজেপি ?
৫) এবং সব থেকে বড় কথা, যে কেন্দ্রীয় সরকার দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা লাখো পরিযায়ী শ্রমিককে তাদের নিজেদের বাড়িতে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ওই একই সরকার একজন সাধারন মহিলাকে বিশেষ বিমানে কলকাতা উড়িয়ে আনলো কোন আক্কেলে ?

৬) আরও মর্মান্তিক কথা আছে৷ বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদের স্ত্রী’কে আজ উত্তর দিতেই হবে,
লকডাউনে যখন কোটি কোটি মানুষ আজ অনাহারে, অর্ধাহারে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে
অসহায় অবস্থায় আটকে আছে, তখন কোন “জাতীয় স্বার্থে” এই মহিলাকে দিল্লি থেকে কলকাতায় পৌঁছে দিতে স্পেশাল ফ্লাইটের ব্যবস্থা করলো মোদি সরকার?

হাসি হাসি মুখে সুদৃশ্য আধুনিক ড্রেস পরিহিতা
সুজাতা মণ্ডল খানের ছবি পোস্ট করার আগে মনে রাখা উচিত ছিলো, সেই হাজার হাজার অসহায় মানুষ ও পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের মুখগুলির কথা৷ এই মানুষগুলি হাজার কিমি পথ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন৷
এই মরিয়া চেষ্টা করতে গিয়ে অনেকেই রাস্তায় মারা গিয়েছে।
সুজাতা মণ্ডল খানের মনে রাখা উচিত ছিলো, ১২ বছরের ওই মেয়েটির কথা, যে ৫০০ কিমি পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে খিদে- তৃষ্ণায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলো৷ মনে রাখা উচিত ছিলো, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একধরনের আইন আর সাংসদের স্ত্রী’র জন্য অন্যরকম আইন, এমন প্রতিশ্রুতি কিন্তু ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী দেননি৷

সুজাতা মণ্ডল খান এখন সাফাই দিতে পারেন, ছবিগুলো পুরনো, তিনি বুধবার পোস্ট করেছেন মাত্র৷ তাহলেও প্রশ্ন উঠছে, এই সংকটে এমন কুরুচিকর ইচ্ছা ওনার হলো কেন ?






























































































































