ব়্যাপার বাদশা ও পায়েল দেবের গাওয়া নয়া মোড়কে “বড় লোকের বিটি লো” গানটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কিন্তু বাংলার মাটির গন্ধ লেগে থাকা এই গানের স্রষ্টা আজও আড়ালেই। মিউজিক ভিডিওর কোথাও তাঁর নামের উল্লেখ নেই। তিনি প্রচারের আলো থেকে শতহস্ত দূরে থাকা শিল্পী রতন কাহার। লকডাউনে অশীতিপর শিল্পী গৃহবন্দি। সংসারে অর্থাভাব। তবু আজও তাঁর গান আবার এত প্রিয় জনপ্রিয় হওয়ায় চোখ ছলছল করে উঠল অভিমানী লোকগানের শিল্পী রতন কাহারের। বীরভূমের সিউড়ি পুরসভার সোনতোড় পাড়ার বাসিন্দা রতন কাহারের ভাদু গানে অবাধ বিচরণ। পাশপাশি, ঝুমুর, প্রভাতী কীর্তন বা লোকগানে- রতন কাহারের জুড়ি মেলা ভার। ১২শোর বেশি লোকগানের রচয়িতা তিনি। কিন্তু নিজে রয়ে গিয়েছেন প্রচারের আড়ালে।
১৯৭৬ সালে যে গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী, সেই “বড়োলোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল….” ১৯৭২ সালে লিখেছিলেন বীরভূমের ভূমিপুত্র রতন কাহার। গেয়েছেন বহু অনুষ্ঠানেও। সম্প্রতি সোনি মিউজিক ইন্ডিয়া তাঁদের ইউটিউব চ্যানেলে বাদশা ও পায়েল দেবের গাওয়া একটি গান পাবলিশ করেছেন, যার নাম দিয়েছেন, ” গেঁদা ফুল ” । মুক্তির প্রথম দিনেই এক কোটি মানুষ এই গান শুনে ফেলেছেন। এখন গানটি ভারতে ইউটিউবে ১ নম্বরে ট্রেন্ডিং চলছে। অথচ প্রাপ্য সম্মান ও অর্থ থেকে বঞ্চিত স্রষ্টা। নামটুকুও সৌজন্যমূলক ভাবে উল্লেখ করা হয়নি ভিডিওতে!
কিন্তু কেন? প্রশ্ন তুলে নিন্দার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যখন তাঁর প্রতি বঞ্চনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় তখন প্রচারের আলো থেকে শতহস্ত দূরে রতন কাহার বললেন, “আমাকে মনে রাখেনি, তো কি হয়েছে? আমরা গানটা তো ‘জাগল’। একদিন অভাব অনটন নিয়েই চলে যাব। তবুও কাউকে প্রতিদান চাইব না।”
সিউড়ির সোনতোড় পাড়ার এক চিলতে বাড়িতে গত ১৫ দিন ধরে গৃহবন্দি তিনি। করোনা আতঙ্কের মাঝে দারিদ্র্যের ছাপ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এক ছেলে প্রভাত লটারি বিক্রি করেন রাস্তা ধারে। আজ তাঁর কাজ নেই। ছোট ছেলে শিবনাথ মাছের আড়তে কাজ করতেন। লকডাউনের জেরে মালিক আডড় বন্ধ করে দেওয়ায় কাজ গিযেছে। এখন নুন আনতে পান্তা ফুরনো অবস্থা। এককালে দু’মুঠো ভাত জোগাড় করার জন্যে বিড়ি বেঁধে সংসার চালাতেন এই লোকশিল্পী। আর এখন ভরসা বলতে, এদিক-ওদিকে দু’-চারটে অনুষ্ঠান। করোনার প্রভাবে বাড়িতে বন্দি, অনুষ্ঠান তো দূরের কথা।
অথচ, এমন কি হওয়ার কথা ছিল? সম্মান ও প্রাচুর্য কি প্রাপ্য নয় শিল্পী রতন কাহারের? তাঁর লেখা আরও গান পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল দেশ-বিদেশের প্রান্তে।কিন্তু বাংলার মাটির সেই শিল্পী বিস্মৃতির আড়ালেই রয়ে গেলেন।





























































































































