“দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ” একটি কাজ হাতে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার৷
মোঘল-সম্রাট ঔরঙ্গজেবের ভাই দারা শিকোহ কতখানি ‘সাচ্চা মুসলমান’ ছিলেন, তা প্রমাণে মরিয়া হয়ে নেমেছে মোদি সরকার!
এজন্য কেন্দ্র এখন ঝাঁপিয়েছে ঔরঙ্গজেবের ভাই এবং শাহজাহানের পুত্র দারা শিকোহর কবর খুঁজে বের করার কাজে!
গোটা দেশে লাখো সমস্যা থাকলেও, সব ছেড়ে কারো কবর খুঁজে বের করার কাজে মোদিজি নামলেন কেন ?
কারন একটাই, সেই হিন্দুত্ববাদ৷ এই দারা শিকোহ ভগবত গীতার ফারসি অনুবাদ করেছিলেন। তিনি উপনিষদেরও অনুবাদ করেছিলেন। তাই মোদি সরকারের নয়া উদ্যোগ, দারা শিকোহর কবর খুঁজে বের করে তাঁর জীবনধারা ও কর্ম তুলে ধরে ওই দারাকে হিন্দুস্তানের ‘সাচ্চা মুসলমান’ প্রমাণ করা। প্রমান করা, দারা শিকোহ ছিলেন এমন এক মুসলমান, যিনি ভারতীয় সংস্কৃতি ও হিন্দু ধর্মগ্রন্থে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
হুমায়ূনের কবরের পাশেই মোঘল শাসকদের প্রথম কবরস্থান। এখানে ১৪০টি কবর রয়েছে৷ এর মধ্যে কোনটি দারা শিকোহর তা খুঁজে বের করা এক কথায় অসম্ভব। সেই অসম্ভব কাজ সম্ভব করতে মোদি- সরকার ৭ সদস্যের এক কমিটি গড়েছে। এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে দারা শিকোহর কবর অনুসন্ধান করবে। যদিও কাজটা মোটেই এত সহজ নয়। এখানে এমন কবরের সংখ্যাই বেশি যেখানে কোনও নাম লেখা নেই।
শাহজাহান-নামাতে লেখা আছে, ঔরঙ্গজেবের কাছে হেরে যাওয়ার পরে দারা শিকোহর মাথা কেটে আগ্রায় পাঠানো হয়। দেহের বাকি অংশটা হুমায়ূনের কবরের আশেপাশেই কোথাও কবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে বেশিরভাগ কবরেই কোনও পরিচিতি লেখা নেই। এই সমস্ত কবর মোঘল শাসকদের আত্মীয়স্বজনের। এর মধ্যে কোনটি দারা শিকোহর তা অনুসন্ধান করা সহজ নয়।
পদ্মশ্রী-প্রাপ্ত পুরাতত্ত্ববিদ কে কে মহম্মদ বলেছেন, “দারা শিকোহর কবরের সন্ধান করা বেশ মুশকিল। ১৬৫২ সালের কাছাকাছি এক স্থাপত্যশৈলীর ভিত্তিতে একটি ছোট কবর চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু কবরের গায়ে কিছুই লেখা নেই৷ তাই এটাই সেই কবর কিনা বলা মুশকিল”।
দারা শিকোহর কবর অনুসন্ধানের জন্য দল গঠন করা হয়েছে, সেখানে রয়েছেন ডাঃ আরএস ভট্ট, কে. কে মহাম্মদ, ডাঃ বিআর মণি, ডাঃ কেএন দত্ত, ডাঃ বি.এম. পান্ডে, ডাঃ জামাল হাসান এবং অশ্বিনী আগরওয়াল।
কেন্দ্রীয় পর্যটন কেন্দ্র প্রহ্লাদ প্যাটেল নিজে হুমায়ূনের কবর খোঁজার দায়িত্বে৷ তিনি একাধিকবার পরিদর্শনও করেছেন চিহ্নিত স্থান৷
১৬৫৯ সালের ৩০ আগস্ট দারা শিকোহর মৃত্যু হয়। শাহজাহান নিজের ৪ পুত্রের মধ্যে দারা শিকোহ-কেই খুব পছন্দ করতেন। দারা শিকোহ নাকি উদার মনের মানুষ ছিলেন বলে শোনা যায়। শাহজাহানের মৃত্যুর পরে চার ভাইয়ের মধ্যে সিংহাসনের লড়াই শুরু হয়। দারার কাছে ঔরঙ্গজেবের থেকেও বড় সেনাদল ছিল, কিন্তু দারা শিকোহর রণনীতি বেশ দুর্বল থাকায় এবং নিজের লোকজনের বিশ্বাসঘাতকতায় দারা হেরে যান এবং ঔরঙ্গজেব জিতে যান। দারাকে তার পুত্রদের সঙ্গেই বন্দি করা হয়। কিছু দিন পরে ঔরঙ্গজেবের এক সেনাপতি দারা শিকোহর গর্দান ধড় থেকে পৃথক করে তা আগ্রাতে ঔরঙ্গজেবের কাছে নিয়ে গিয়ে পুরস্কৃত হন৷
আরও পড়ুন-নারকীয় আক্রমণ পুলিশের, ফের জামিয়ার ভিডিও নিয়ে তুলকালাম