
আওয়াজ ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। প্রথমে জাতীয় মিডিয়ায় দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আগের সেই ঔদ্ধত্য নেই তাঁর জবাবে। একটু যেন মোলায়েম। তার একদিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী রামলীলা ময়দানে। আক্রমণ, কটাক্ষ আর অভিযোগে বিরোধীদের ধুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এক ঘন্টা বারো মিনিট ধরে ভাষণ দিলেন নরেন্দ্র মোদি। রেকর্ড! কিন্তু তাতে ভাবনার চাকা তো ঘোরেইনি, বরঞ্চ এনআরসি-সিএএ বিরোধী বেঞ্চে বাড়ছে মাথার সংখ্যা।
সংসারে ফাটল। আর তাতে নির্বিকল্প থাকার যতই বিজ্ঞাপন দিন না কেন মোদি-শাহ, চিন্তার ভাঁজ কিন্তু দুই কপালেই।
শরিকদের মধ্যে কারা বিজেপিকে হতাশ করলেন? প্রথম বেঁকে বসে নীতীশ কুমারের জেডিইউ। যদিও তারা পক্ষেই ভোট দিয়েছে সংসদে। কিন্তু চাকা ঘুরতে শুরু করে দলের অন্যতম থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ভোটকুশলী প্রশান্ত কুমার এই বাংলায় বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মেলানোয়। ডেকে পাঠানো হয়। প্রশান্ত সম্ভবত বোঝাতে সমর্থ হয়েছেন। তারপরেই এনআরসি-সিএএ বিরোধী বেঞ্চে নীতীশ। নীতীশকে দেখে পাশা ওল্টাতে বিশেষ সময় নেয়নি রামবিলাস পাশোয়ানার এলজেপি। শিরোমনি অকালি দলের সংসদে ভোট দেওয়ার পরে বোধহয় সম্বিত ফেরে। কারণ রাজ্যে চণ্ডীগড়ে পরপর বিরোধী মিছিল। এবার অকালি দল বলল, মুসলিমদেরও শরণার্থী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই তালিকায় আগেই ঢুকে বসেছিল অসম বিজেপি। সেখানে তো গোঁড়াতেই গলদ। সেখানে দলেই প্রবল বিরোধিতা। ওড়িশার নবীন পট্টনায়েক স্টেটমেন্ট দেন কম, সিদ্ধান্ত নেন পাবলিক পালস বুঝে। জ্যোতি বসু এবং পবন চামলিংয়ের পর তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী যিনি পরপর পাঁঁচবার জিতে রাজ্যে ক্ষমতায়। ফলে মানুষের আবেগ বুঝতে তাঁর এতটুকু অসুবিধা হয়নি। তাই সংসদে বিজেপির সঙ্গে থেকেও মানুষের মন বুঝে বিরোধী আসনে। উত্তর-পূর্বের আঞ্চলিক দলগুলি তো জানিয়েই দিয়েছে, তাদের পরিস্থিতি আলাদা।
আর বিরোধী দলের হাতে থাকা রাজ্যগুলি? পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে তুষের আগুন ধিকিধকি জ্বলা শুরু হয়েছিল। যার কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ রাজ্য দিয়ে শুরু হওয়ার পর বাম রাজ্য কেরল, কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই রয়েছে। কেজরিওয়ালের দিল্লি তো আছেই। রবিবার বিজেপির শিরঃপীড়া বাড়িয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, তাঁরা নেই এনআরসি-সিএএ-র পক্ষে। দক্ষিণে ক্ষমতায় না থাকলেও ডিএমকে বিরোধী মঞ্চে।
বড়দিনের আগের পরিস্থিতি বলছে, এনআরসি-সিএএ বিরোধী মঞ্চে এখনই প্রায় এক ডজন অর্থাৎ ১২টি রাজ্য। মোদি-শাহ জুটি অনড় থাকলে এই তালিকা যে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশ্ন, তবু সরকারের একবগগা লড়াই চলবে, কিংবা বিজেপি তাদের অস্তিত্ব দাঁওতে লাগাতে তৈরি কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু এই সঙ্কেত যে খুব একটা মধুর নয়, তা বিজেপি হেড কোয়ার্টার নিশ্চিত বুঝতে পারছে।





























































































































