
প্রতি বছর শরতে মা দুগ্গার ছেলেপুলে নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন। তাঁর বাপের বাড়ি বাংলার গণ্ডী পেরিয়েছে অনেকবছর আগেই। গোটা ভারত তো বটেই, এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই দুগ্গার বাপের বাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
যেখানেই কয়েকজন হুজুগে বাঙালি একসঙ্গে থাকবে, সেখানেই সপরিবারে বিরাজমান হবেন। কোনও শহরে তিনি যান এক-দুদিনের ভিসা নিয়ে। কোথাও আবার পুরো পাঁচ-ছদিনই কাটিয়ে আসেন। সেটা নির্ভর করে সেই শহরের বাঙালিদের সুযোগ-সুবিধার উপর।

আমি যে শহরে থাকি, সেটা টরন্টো থেকে একটু দূরে। এই শহরে দুর্গাপুজো হয় একদিনই। পাঁচদিনের সব আচার-অনুষ্ঠান সারা হয়ে যায় সেদিন। এবার তিথি মেনে পুজো শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে এ শহরে পুজো হয়ে গিয়েছে। টেরাকোটার একচালা দুর্গামূর্তিতে পুজো করা হয়। অধিবাস, কলাবৌ স্নান, সন্ধিপুজো, অষ্টমীর অঞ্জলি, সিঁদুরখেলা, ভোগখাওয়া- সবের জন্য বরাদ্দ ওই একটাই দিন। এই ছোট শহরে যতজন বাঙালি আছেন, সবাই সেদিন জড়ো হন সেখানে। নাই বা হল পাঁচদিনের ভরপুর আনন্দ। একদিনেই পাঁচদিনের উৎসবের স্বাদ নেওয়াটাও মন্দ লাগে না। পুজো শেষ হয়ে গেলে, বাঙালির রীতি মেনে সন্ধেবেলা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সে তো গেল আমার শহরের দুর্গাপুজোর কথা। তবে টরন্টোতে কিন্তু অনেক জায়গায় পাঁচদিন একেবারে নিয়ম মেনে পুজো হয়। প্রায় দেড়লাখ বাঙালির বাস এই অঞ্চলে। তাই দুর্গাপুজোর সংখ্যাও এখানে বেশি। অনেক মন্দির আর আশ্রমে নিষ্ঠাভরে পুজো করা হয়।
টরন্টো কালীবাড়িতে প্রতিদিনই নিয়মমতো পুজো হয়। আর দুর্গাপুজোয় এলাহি আয়োজন। মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর আচার-অনুষ্ঠান। তারপরের দিন থেকে শুরু হয় নবরাত্রি পালন। মহাষষ্ঠীর দিন হয় মায়ের বোধন, আমন্ত্রণ, অধিবাস আর আরও আনুষঙ্গিক আচার। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত সমস্ত রকম বিধি মেনে দুর্গাপুজো করা হয়। অনেক দূরের শহর থেকেও বাঙালীরা আসেন এই কালীবাড়ির পুজো দেখতে। ভোগের জন্য লম্বা লাইন এবছরও চোখে পড়েছে।

ভারত সেবাশ্রমের টরন্টোশাখাতেও পুজো হয় ওই একই রকমভাবে, পাঁচদিন।
এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটা দুর্গাপুজো হয় টরন্টো আর তার আশপাশের এলাকায়। আমরা যারা প্রবাসী বাঙালি, পুজোর সময় বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাই না, তাদের কাছে এই পুজোগুলি বড় পাওনা। বচ্ছরকার দিনে মায়ের মুখটা তো দেখতে পেলাম, এটুকুই মনের কোণে রেখে দেব আর অপেক্ষা করব আগামী বছরের পুজো জন্য।
































































































































