
CBI-এর দ্বিতীয় তলবকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘ফেরার” জীবনই বেছে নিলেন রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান রাজীব কুমার। বৃহস্পতিবার আলিপুর কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে CBI গ্রেফতার করতে পারবে রাজীবকে। এর পরই CBI দ্বিতীয়বার নোটিশ পাঠিয়ে CGO কমপ্লেক্সে তলব করে রাজীবকে। তবে CBI-ও জানতো, এই ডাকেও সাড়া দেবেন না রাজীব কুমার। CBI-এর ডাক উপেক্ষা করে শুক্রবার রাজীব ফের বেছে নেন আদালতকেই। এদিন ফের আগাম জামিন বা রক্ষাকবচ প্রার্থনা করে রাজীবের তরফে আর্জি পেশ করা হয় আলিপুর কোর্টে। এই আর্জির শুনানি হবে শনিবার। যদি আদালত রাজীবের আবেদনে সাড়া দেয়, প্রকাশ্যে আসবেন তিনি। কিন্তু এবারও যদি রাজীবের আর্জি খারিজ হয়, সেক্ষেত্রে কী করবেন গোপন ডেরায় থাকা এই IPS অফিসার ? আইনি মহলের অভিমত, সুপ্রিম কোর্ট থেকে আলিপুর কোর্ট, কোনও আদালতেই এখনও পর্যন্ত ন্যূনতম রিলিফ পাননি রাজীব। নিজেই নিজের অবস্থানকে জটিল করেছেন। গায়ে স্পষ্ট একটা ছাপ লাগিয়ে নিয়েছেন, কোর্ট বা CBI, কারো নির্দেশই মানতে রাজি নন এই IPS অফিসার। ফলে কোনও বিচারকই এই মানসিকতার কোনও আবেদনকারীর আগাম জামিনের আর্জি মঞ্জুর করতে, দশবার ভাববেন।
আইনজীবীদের এই অভিমতের অর্থ, বিরাট কিছু অঘটন না ঘটলে শনিবারও সম্ভবত খালি হাতেই ফিরতে হবে রাজীব কুমারকে। তারপর কী করবেন রাজীব কুমার ? এভাবে পালিয়ে থাকা কতদূর সম্ভব ? কতদিন সম্ভব ?
ওদিকে, অনেক আগেই
রাজীব কুমার নবান্নকে জানিয়েছেন, আগামী 25 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ছুটিতে থাকবেন। সেক্ষেত্রে ছুটি কাটিয়ে 26 সেপ্টেম্বর রাজীব কুমারকে ফিরতেই হবে নিজের চেয়ারে। এই ছুটি আরও লম্বা করার অনুরোধ জানিয়ে এর মাঝেই তিনি নবান্নকে চিঠি দিতে পারেন। কিন্তু সেই আর্জি সম্ভবত ফিরিয়ে দেবে নবান্ন। এই জটিল পরিস্থিতিতে নবান্ন নিজেকে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে কখনই চাইবেনা। ফলে ছুটি শেষে রাজীব কুমারকে 26 সেপ্টেম্বরই নিজের দফতরে যেতে হবে।
শনিবারও আগাম জামিনের আর্জি মঞ্জুর না হলে, তাঁর আইনজীবীরা রাজীব কুমারকে হয়তো ‘পরামর্শ’ দেবেন, “হতাশ হবেন না। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো”। কিন্তু সেই উচ্চ আদালত কোনটি ? মাত্র দিনকয়েক আগে কলকাতা হাইকোর্ট রাজীব কুমারের শরীর থেকে রক্ষাকবচ খুলে নিয়েছে। একইসঙ্গে বিচারপতি জানিয়েছেন, “রক্ষাকবচ বহাল থাকলে তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের কাজ বিঘ্নিত হয়। এভাবে বিশেষ সুবিধা রাজীব কুমার আর পেতে পারেননা”। ওই রায়ে
CBI-কে হাইকোর্ট জানায়, “প্রয়োজনে রাজীব কুমারকে হেফাজতেও নেওয়া যাবে”। যে হাইকোর্ট সদ্য এই রায় ঘোষণা করেছে, সেই হাইকোর্টে গিয়ে রাজীব কুমার আগাম জামিন নিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে আসবেন, এটা নিতান্তই দুরাশা। তাঁর আইনজীবীরা এসব বোঝালেই যদি রাজীব তাতেই মাথা নেড়ে হাইকোর্টের পথে পা বাড়ান, তাহলে ফের তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে মুখ পোড়ানোর জন্য। তাছাড়া হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতী মিত্রের সর্বশেষ রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিনি সুপ্রিম কোর্টেও যাননি। তাহলে কোন আর্জি নিয়ে তিনি হাইকোর্ট যাবেন ?
আসলে গোটা বিষয়টিকে রাজীব নিজেই এততো জটিল করে তুলেছেন যে কোনও আদালতেই তাঁর রিলিফ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। CBI-এর সঙ্গে সহযোগিতা করলে আজ এভাবে অতল খাদের কিনারায় রাজীব কুমারকে দাঁড়াতে হতো না।
এসব তো গেলো সমস্যার কথা। সমাধান কোন পথে? সমাধান একটাই, তথাকথিত ‘ইগো’ ঝেড়ে ফেলে রাজীব কুমারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব CBI-এর ডাকে সাড়া দেওয়া।
কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বিশিষ্ট আইনজীবীর বক্তব্য,
পরিস্থিতি এখন একদমই ঘোরালো। প্রথম অবস্থায় ঘটনাচক্রে যদি তদন্তে অসহযোগিতা বা অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে CBI তাঁকে গ্রেফতারও করতো, তাহলে যত দ্রুত তিনি জামিন পেতেন, এখন তা হবে কি’না সন্দেহ। গত কয়েকমাস ধরে রাজীব কুমার নিজের কার্যকলাপে প্রমান করেছেন, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক নন। রাজীব প্রমান করেছেন, তাঁর নাগাল পাওয়া কঠিন। তিনি বুঝিয়েছেন, আদালত বা তদন্তকারী সংস্থা নয়, তদন্ত চলবে তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ভিত্তিতে। আইনজীবীদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজীব কুমারকে যদি হেফাছতে যেতে হয়, তাহলে জামিন কবে মিলবে, তা একমাত্র ঈশ্বরই বলতে পারবেন।
ঘটনাচক্রে রাজীব কুমার গ্রেফতার হলে, IPS-বিধি অনুসারে চাকরি সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়বেন। ঘটনাচক্রে রাজীব কুমার গ্রেফতার হলে, রাজ্য সরকারকে দ্রুত ADG-CID পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হবে। এবং ঘটনাচক্রে রাজীব কুমার গ্রেফতার হলে, শুধু সারদা-তদন্তেই যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, এমন ভাবার কোনও কারনই নেই। রোজ ভ্যালি তদন্তেও যে রাজীব কুমারকে প্রয়োজন, বারাসত কোর্টে CBI সেকথা দীর্ঘ সওয়ালে বুঝিয়েছে। সেক্ষেত্রে রোজ ভ্যালি তদন্তে রাজীব কুমারকে ভুবনেশ্বরেও নিয়ে যাওয়া হতে পারে। ফলে চট করে রাজীবের রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবুও আইন আইনের পথে চলবে। CBI যদি মনে করে তদন্তের জন্যে
রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দরকার, CBI ডাকবেই, ডেকেই যাবে। আজ বা কাল পর্যন্ত রাজীব কুমার এড়িয়ে থাকতেই পারেন। কিন্তু এখন এই ভাবে এড়িয়ে গেলেই রাজীব কুমারকে আর ডাকা হবেনা, বিষয়টা ভুলে যাওয়া হবে, এটা ভাবা বাড়াবাড়ি।
টানা এক বছর ধরে নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট, সর্বস্তরে CBI বুঝিয়েছে, সারদা-সহ একাধিক চিটফাণ্ড মামলায় কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী রাজীব কুমার। সেই সওয়াল থেকে কোন পথে CBI পিছিয়ে আসবে ?
শনিবার আলিপুর কোর্টে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আর্জির শুনানি হওয়ার কথা। আর্জি মঞ্জুর হলে সমস্যা আপাতত মিটবে, তবে রাজীবকে CBI-এর ডাকে সাড়া দেওয়ার শর্ত অবশ্যই দেওয়া হবে। রাজীব কুমার অন্তত গ্রেফতারির হাত থেকে আপাতত রক্ষা পাবেন।
সমস্যা আর্জি খারিজ হলে। সেই মুহূর্তে রাজীব কুমার কানাগলিতে গিয়ে দাঁড়াবেন। গ্রেফতারির প্রক্রিয়া প্রলম্বিত করার কোনও শক্তপোক্ত হাতিয়ার রাজীব কুমারের হাতে থাকবেনা। কি করবেন তখন গোয়েন্দা-প্রধান ?
পথ একটাই। পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢুকে কাউকে গ্রেফতার করার অভিজ্ঞতা CBI বা ED-র আছে। চিদম্বরমের ক্ষেত্রেই তো ঘটেছে।
একজন IPS অফিসার, রাজ্যের ADG-CID-কে একদল CBI অফিসার কোনও ডেরা থেকে গ্রেফতার করে CGO-তে নিয়ে যাচ্ছে, সেই ছবি বড়ই অসম্মানের।
আগাম জামিনের আর্জি শনিবার সকালের দিকেই খারিজ হলে, রাজীব কুমার বরং বিকেলেই CBI বা আদালতের কাছে আত্মসমর্পন করুক। তাতে কিছুটা হলেও রাজীব কুমারের তলানিতে ঠেকে যাওয়া ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।
নাহলে, পরবর্তী নিশ্চিত কিছু ‘খারাপ’ ছবি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দুঁদে IPS রাজীব কুমার এবং তাঁর স্বজনদের কাছে সে বড় সুখের সময় হবে না।































































































































