দেশের রাজধানী শহরে চূড়ান্ত অব্যবস্থার শিকার হয়ে মৃত্যু ১৮ জনের। মহাকুম্ভ ঘিরে যে প্রচারসর্বস্বতা, তার টানে প্রয়াগরাজ (Prayagraj) রওনা দিয়ে ঘরে ফেরা হয়নি বহু পুণ্যার্থীর। তার মধ্যে নিত্যযাত্রী হয়রানির ছবি সামনে আসার পরেও চূড়ান্ত অসতর্ক রেল। রেলের অব্যবস্থাতেই শনিবারের নিউ দিল্লি স্টেশনে (NDLS) পদপিষ্টের (stampede) ঘটনা, উঠে এলো তদন্তে। এরপরেও নৈতিক দায় নিয়ে কেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) পদত্যাগ করবেন না, প্রশ্ন রাজ্যের শাসকদলের।
রেলমন্ত্রকের তরফে দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল রবিবার দুপুরে নিউ দিল্লি স্টেশনে (NDLS) পদপিষ্টের ঘটনার তদন্তে যায়। পাশাপাশি দিল্লি পুলিশও এই ঘটনার তদন্ত করছে। সেখানেই উঠে এসেছে, ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রয়াগরাজের ট্রেন ঘোষণা (announcement) হওয়াতেই বিপত্তি হয়। সেই সময় ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আরও একটি প্রয়াগরাজের (Prayagraj) ট্রেন ছিল। দুই প্ল্যাটফর্মে মহাকুম্ভ (Mahakumbh) পৌঁছানোর জন্য পুণ্যার্থীদের মধ্যে ব্যস্ততা তৈরি হয়। কিছু মানুষ ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ও কিছু মানুষ ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে চাইলে ফুটব্রিজে (footbridge) বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
সেখানেই বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিউ দিল্লির মতো রাজধানী শহরের রেলস্টেশনে যাত্রীদের সাহায্যের কোনও পুলিশ ছিল না। ফলে ফুটব্রিজে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। আবার এই স্টেশনে ফুটব্রিজের দূরত্বের কারণে বেশিরভাগ মানুষ একই ফুটব্রিজ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। রেলের এতবড় গাফিলতির পরে স্বভাবতই তৃণমূলের পক্ষ থেকে আঙুল তোলা হয়েছে, প্রচারসর্বস্ব রেলমন্ত্রীর দিকে। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, নিউ দিল্লির দুর্ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক, নিন্দনীয়, প্রতিবাদ হওয়া উচিত। প্রতিদিন রিজার্ভ কামরায় বহিরাগতরা উঠে অরাজকতা করছে, মারপিট করছে। এবার আবার চূড়ান্ত অব্যবস্থা, রাজধানীর বুকে মৃত্যু মিছিল, পদপিষ্ট (stampede)। এই রেলমন্ত্রী (Railway Minister) পাবলিসিটি হাঙ্গার (publicity hunger) রেলমন্ত্রী। কোথায় দুর্ঘটনা, পাশে বসে ছবি তুলবেন। আর কত রকম দুর্ঘটনা, কত প্রাণ গেলে মনে হবে ওই চেয়ারটায় বসে থাকার নৈতিক অধিকার তাঁর নেই।
অথচ এই রেলই পদপিষ্টের ঘটনার পরে দীর্ঘক্ষণ গোটাটাই গুজব বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সেখানেই তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে (Saket Gokhale) তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, যথেষ্ট হয়েছে। পদপিষ্ট হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেও রেল দফতর অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে গোটাটা একটি গুজব (rumor)। দেহ প্রকাশ্যে চলে আসার আগে পর্যন্ত এটা ছিল রেলের গোটা ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার একটি নির্লজ্জ প্রয়াস। মোদির আংশিক সময়ের রেলমন্ত্রী (Railway Minister) আবার নিজের হাত মানুষের রক্তে রাঙালেন। যদি অশ্বিনী বৈষ্ণবের (Ashwini Vaishnaw) বিন্দুমাত্র দায়িত্ববোধ থাকে তাহলে তাঁর অবশ্যই পদত্যাগ করা উচিত।
তবে শুধু রেলমন্ত্রী নন, সাকেতের নিশানায় নরেন্দ্র মোদিও। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র (Narendra Modi) মোদির যদি এতটুকুও লজ্জা থাকে তাহলে তিনি রেলমন্ত্রীকে বরখাস্ত করবেন। সেই সঙ্গে জোরের সঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রাণ এত সস্তা হতে দেওয়া যাবে না।
বারবার বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়া রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vasihnaw) রবিবার তড়িঘড়ি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তবে তাতে মহাকুম্ভ-কে ঘিরে কেন্দ্রের সরকার ও যোগী সরকারের ব্যর্থতা যে ঢাকা যাবে না সেই দাবি জানান সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। তিনি দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার মহাকুম্ভে ভিড় নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, এমনকি যাঁরা যাচ্ছেন সেখানে তাঁদের ক্ষেত্রেও ব্যর্থ। তারপরেও দায় স্বীকার করার বদলে বিজেপি ধামাচাপা দিয়ে চলেছে। নিউ দিল্লি রেলস্টেশনের ঘটনায় জবাব দিন মোদি।
–
–
–
–
–