জঙ্গল-ঘেঁষা এলাকায় পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সতর্ক বন দফতর-প্রশাসন

0
2

জঙ্গল ঘেঁষা এলাকায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিরাপদে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিল বন দফতর। সোমবার প্রথমদিন পরীক্ষার্থীদের গাড়ি করে নিরাপদে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর কাজ শুরু করে বন দফতর। বাগডোগরার টিপুখোলা, তিরহানা, অর্ড ও তারাবাড়ি এবং নকশালবাড়ির বেলগাছি সহ পানিঘাটা জঙ্গল ঘেরা এলাকা হিসেবে পরিচিত।এদিন সকাল থেকেই বন দফতরের বিশেষ গাড়ি ও রাজ্য সরকারের বাস এলাকায় পৌঁছে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়।জঙ্গল ঘেঁষা এলাকার প্রায় শতাধিক পরীক্ষার্থী এবার বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।পাশাপাশি কার্শিয়াং বনদফতরে উদ্যোগে বিভিন্ন রেঞ্জে চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর।এদিন সমস্ত বিষয়ে তদারকি করেন কার্শিয়াঙ বনদফতরে ডিএফ‌ও ও এডিএফ‌ও।বনদফতর ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে খুশি পরীক্ষার্থীরা।

জানা গিয়েছে এদিন সাত সকালে উর্দীধারী বেশ কয়েকজন হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হাজির হন উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত বনজঙ্গল লাগোয়া বনবস্তিতে।জলপাইগুড়ি জেলায় মোট ১০০টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে জলপাইগুড়ি বন বিভাগের জঙ্গল লাগোয়া বেশ কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। বিশেষ করে ধূপগুড়ি ও বানাহাট ব্লকের এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জঙ্গল পেরিয়ে বন্যপ্রাণীদের করিডোর দিয়েই পরীক্ষা কেন্দ্র যেতে হয়।। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের কথা মাথায় রেখেই বন দফতরের এই বাড়তি উদ্যোগ। বন দফতরের গাড়িতে করেই একেবারে পরীক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়।

ঝাড়গ্রামেও বিশেষ নজরদারি ছিল পুলিশ প্রশাসন ও বন দফতরের।এদিন সকালে বেলপাহাড়ি এলাকায় নতুন করে বাঘের পায়ের ছাপ, অন্যদিকে ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতির আতঙ্ক দেখা দেয়। যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বেলপাহাড়িতে লাগানো হয়েছে নতুন করে ট্র্যাপ ক্যামেরা। বিভিন্ন জায়গায় করা হয়েছে বন দফতরের চেকপোস্ট, বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। জেলার যেসব এলাকায় হাতি রয়েছে সেইসব এলাকায় বনকর্মীদের পাশাপাশি মোতায়েন থাকছে পুলিশ। যাতে হাতির জন্য পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদি কোনও পরীক্ষার্থী হাতির হামলার ভয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে সমস্যায় পড়ে তাহলে তাকে বন দফতরের গাড়িতে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রাকা হয়েছে। রাস্তায় ছিলব বন দফতরের ঐরাবত গাড়ি। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এমনকী, ঝাড়খন্ড থেকে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় চলে আসা বাঘ নিয়ে সাবধানী প্রশাসন। এই এলাকার কোনও পরীক্ষার্থীকে নিজের ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হচ্ছে না। সকলকে একেবারে গ্ৰাম থেকে বাসে তুলে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া এবং বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষা দফতরের পাশাপাশি দেখছেন বিধায়ক রাজীব লোচন সরেন। বন দফতরও জঙ্গলে কড়া নজর রেখেছে। পায়ের ছাপ মিললেও বাঘ এখনও দেখা যায় নি। বিধায়ক জানিয়েছেন, এবার বান্দোয়ানে তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্রে মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে। চিরুডি হাইস্কুল ছাড়া অপর দুটি পরীক্ষাকেন্দ্র বান্দোয়ান সদরে। প্রশাসন তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্রের জন্য তিনটি বাস দিয়েছে। বাসগুলি পরীক্ষার্থীদের গ্ৰাম থেকে নিয়ে আসা যাওয়া করছে। ফলে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা তো হচ্ছেই না, বাঘের জন্য চিন্তাতেও থাকতে হচ্ছে না অভিভাবকদের।

আলিপুরদুয়ার জেলার একদিকে যেমন রয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের জঙ্গল, অন্যদিকে রয়েছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের গভীর অরণ্য। আর এই জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বহু  বনবস্তি এবং  জঙ্গল ঘেরা গ্রাম।এই এলাকার ছাত্র ছাত্রীরা স্থানীয় স্কুল পড়াশোনা করলেও মাধ্যমিক ও তার চেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে দীর্ঘ জঙ্গল পথ পেরিয়ে শহরে আসে। তাদের এই আসা যাওয়ার পথগুলো সবসময় থাকে বিপদে পরিপূর্ণ। এই পথে সব থেকে বড় ভয় বন্য প্রাণীদের আক্রমণ। করণ মাঝে মাঝেই এই বন বস্তি ও গ্রাম গুলোতে হাতি, বাইসনের আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তাই এই এলাকা গুলোর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময়  দুশ্চিন্তায় পড়েন ।

কিন্তু তাদের এই দুশ্চিন্তা দূর করতে এগিয়ে এসেছে বন দফতর। তারা দায়িত্ব নিয়ে প্রতিটি বন বস্তি ও গ্রাম থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বন দফতরের গাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে। এরপর পরীক্ষা শেষ হলে তাদেরকে ফের বাড়িতেও পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে বন দফতর। এদিন  জেলার অন্যান্য জায়গার মতই রাজভাত খাওয়া, জয়ন্তী থেকে বেশ কিছু পরীক্ষার্থী বন দফতরের এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের গাড়ি ঐরাবত চড়ে পরীক্ষা দিতে আসে আলিপুরদুয়ার জংশন শ্যামাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিকা বিদ্যালয়ে। এছাড়াও অন্যান্য জায়গায় ঐরাবত ছাড়াও ভাড়ার গাড়ি বন কর্মীরা এসকর্ট করে পৌঁছে দেয় পরীক্ষা কেন্দ্রে।

এর পাশাপাশি, বন কর্মীরা দিনভর হাতি চলাচলের রাস্তায় নজরদারিও চালায়।বন দফতরের গাড়ির ব্যবস্থায় পরীক্ষার্থীরা খুশি। তারা  পরীক্ষা দিতে এসে নিজেদের নিরাপদ মনে করছে জঙ্গলের  যাতায়াতের পথে।এই বিষয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও প্রভিন কাসোয়ান জানান, বনবস্তি ও জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বন দফতরের গাড়ি দিয়ে। তাদের সঙ্গে বন কর্মীরা পাহারায় ছিলেন, যাতে জঙ্গলের পথে কোনও সমস্যা না হয়।