‘এলো যে প্রেমের দিন’, উৎপল সিনহার কলম

0
1
উৎপল সিনহা

‘ প্রেমের জোয়ারে
ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও , দাও দাও ।
ভুলিব ভাবনা
পিছনে চাব না ,
পাল তুলে দাও , দাও দাও ।’

শহীদ ভ্যালেন্টাইন । বিশ্ববাসীর জন্য প্রেমের দরজা হাট করে খুলে দিতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন এবং মৃত্যুবরণ করেন । তারপর কিন্তু সত্যিই খুলে যায় প্রেমের দরজা। পৃথিবী জুড়ে শুরু হয় প্রেমপার্বণ । ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই বিশেষ দিনটি । ভালোবাসা দিবস । যদি প্রেম দিলে না প্রাণে , কেন ভোরের আকাশ ভরিয়ে দিলে এমন গানে গানে … স্রষ্টার কাছে এমনতরো অনুযোগ করার কোনো অবকাশ থাকে না এই দিনটিতে । অথচ প্রাচীন পর্দা ঠেলে ইতিহাসের অতলে চোখ রাখলে দেখা যায় এক অতীব বেদনাবিধুর ছবি ।

ভালোবাসা ছাড়া আর আছেই বা কী ? ভালোবাসাই তো সমস্ত সুখ ও সৃজনের উৎস । বাকিটা তো ঈর্ষা , হিংসা , ছল , কপটতা , প্রতারণা , হানাহানি আর বিরামহীন খুনোখুনি । এইসব আবিলতার অন্ধকারে পাঁকে পদ্মফুলের মতো ‌জেগে থাকে ভালোবাসার মায়ামাখা একটুকরো আলো। শুধু সেটুকুই কান্তিময় । সেটুকুই তিমিরবিনাশী । বাকিটা যেন তিন আঙুলের জীবনে সাতশো মাইল অন্ধকার । কবির ভাষায় , সাতশো মাইল অন্ধকারে একটা জীবন একটা বিন্দু । তাই ভালোবাসার আলো ছাড়া গতি নেই মানবসভ্যতার ।

অত্যাচারী রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তৃতীয় শতকে সমগ্র রোমান সম্প্রদায়কে ১২ জন দেবতার আরাধনা করার নির্দেশ দেন। সেসময় খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করা ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ । এমনকি খ্রীষ্টানদের সঙ্গে মেলামেশা করলেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো । এদিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন খ্রীষ্টধর্ম নিবেদিতপ্রাণ । মৃত্যুভয়ে তিনি তাঁর প্রিয় ধর্ম ত্যাগ করতে রাজি হননি । তাই যা হবার তাই হলো । রাজ আদেশ অমান্য করার দায়ে সম্রাট ক্লডিয়াস তাঁকে কারাগারে বন্দী করে রাখলেন । বন্দী অবস্থায় ভ্যালেন্টাইনের জীবনের শেষ দিনগুলোতে ঘটলো জাদুকরী ঘটনা । সেখানকার কারারক্ষী ভ্যালেন্টাইনের প্রজ্ঞায় মুগ্ধ হয়ে ভ্যালেন্টাইনকে একটা বিশেষ অনুরোধ করে ফেলেন । তিনি বলেন , ভ্যালেন্টাইন যদি অনুগ্রহ করে তাঁর জন্মান্ধ মেয়ে জুলিয়াকে একটু লেখাপড়া শেখান তাহলে মেয়েটি শিক্ষার আলো পেতে পারে । জুলিয়া অন্ধ হলেও ছিলেন খুবই মেধাবী । জুলিয়াকে রোমের ইতিহাস পড়ে শোনাতেন এবং গণিত শেখাতেন ভ্যালেন্টাইন । প্রকৃতির শোভা বর্ণনা করতেন , ঈশ্বরের মহিমা বোঝাতেন । অন্ধ মেয়েটি ভ্যালেন্টাইনের চোখে তাঁর অদেখা পৃথিবীকে যেন দেখতে পেতেন । ধীরে ধীরে মেয়েটির জ্ঞান , উপলব্ধি ও মানসিক শক্তির আধার হয়ে ওঠেন ভ্যালেন্টাইন । তাঁর শান্ত , প্রসন্ন ও প্রেমময় প্রতিমূর্তি যেন হৃদয় দিয়ে প্রত্যক্ষ করতেন জুলিয়া ।

তাঁর মধ্যে এই বিশ্বাস জাগে যে , ঈশ্বর মানুষের সব প্রার্থনা শোনেন এবং সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করেন । এভাবে একান্তে প্রার্থনা করতে করতে একদিন স্বচক্ষে পৃথিবীটা দেখার সাধ পূরণ হয় জুলিয়ার । তাঁর নাকি দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে । তাঁর অন্ধজীবনের সমাপ্তি ঘটে । কিন্তু তখন সময় ঘনিয়ে এসেছে ভ্যালেন্টাইনের । ক্রুদ্ধ ক্লডিয়াস ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ডের দিন ধার্য করলেন। দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি , ২৭০ অব্দ ।

মৃত্যুর আগের দিন জুলিয়াকে একটি চিঠি লেখেন তাঁর শিক্ষক ভ্যালেন্টাইন । চিঠির শেষে লেখা ছিল , ‘ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন ‘ । তারপর এলো শেষ মুহূর্ত । তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো ১৪ ফেব্রুয়ারি । তাঁকে বর্তমান রোমের প্রক্সিদেস গির্জার সংলগ্নস্থলে সমাহিত করা হয়। কথিত আছে , জুলিয়া ভ্যালেন্টাইনের কবরের কাছে একটি আমন্ড গাছ লাগান , যে গাছ ভরে থাকতো গোলাপী ফুলে । সেখান থেকেই আমন্ড গাছ স্থায়ী প্রেম ও বন্ধুত্বের প্রতীক । পরবর্তীতে ৪৯৬ অব্দে পোপ প্রথম জেলাসিউস ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে ঘোষণা করেন । বর্তমানে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হয় । শুধুমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকারাই নয় , বৃহত্তর অর্থে এই বিশেষ দিনটি আসলে মানুষে মানুষে পারস্পরিক ভালোবাসার বার্তা বহন করে । বেঁচে থাকুক ভালোবাসা অনন্তকাল ।

আরও পড়ুন- স্বাস্থ্য পরিষেবার আরও উন্নয়নে হবে PHA-র জেলাভিত্তিক কমিটি: ঘোষণা সভাপতি শশীর

_

 

_

 

_

 

_

 

_