নরেন্দ্র মোদির জমানায় দেশের মানুষ যে প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন তা অর্ধেক পূরণ করতে পেরেছেন আত্মপ্রচারে মগ্ন প্রধানমন্ত্রী। একদিকে যখন দেশের মানুষ থেকে দেশের অর্থনীতি ক্রমশ দুরবস্থার সম্মুখিন হচ্ছে তখন কেন্দ্রের সরকার নিজেদের ঢাক বাজিয়ে প্রচার করতেই ব্যস্ত। ২০২৫ কেন্দ্রীয় বাজেটে (Union Budget 2025) যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Nirmala Sitharaman) তা যে আদতে নরেন্দ্র মোদির দেওয়া প্রতিশ্রুতিকেই মিথ্যা প্রমাণ করে, তা লোকসভায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। কেন্দ্রের ঘোষণার সঙ্গেই প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো প্রতিটি প্রকল্পতে যে ঘাটতি তা তুলে ধরে এই বাজেটকে অভিষেক অর্ধসত্যের (half truth) বাজেট বলে দাবি করেছেন।
কেন্দ্রের সরকার যে ভ্রান্তনীতি তৈরি করে তার মূল কারণ হিসাবে জনগণনায় (census) বিপুল বরাদ্দ কমানোর তথ্য তুলে ধরেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তথ্য দেন, ১৯৯০ সালে ৮৫৭৪ কোটি জনগণনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। এবছরের বাজেটে ৫৭০ কোটি মাত্র বরাদ্দ করা হয়েছে। জনগণনা না হলে প্রকল্প তৈরি, তার জন্য অর্থ বরাদ্দ ও তার রূপায়নের কাজ শুরু করা শুধু মাত্র অন্ধকারে তির ছোঁড়া।
যে কৃষি ক্ষেত্র নিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করেন, তার স্বরূপ তুলে ধরে অভিষেক জানান, লোকসভা নির্বাচনের আগে এমএসপি (minimum support price) নিয়ে আইনি প্রতিশ্রুতি, নির্বাচনের পরে উড়ে গেল। কৃষকদের কৃষি ঋণ মকুবের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে কিষাণ ক্রেডিট লিমিট বাড়িয়ে দেওয়া হল। যার অর্থ কৃষকদের আরও ঋণ নেওয়ার মুখে ঠেলে দেওয়া। শস্য বিমায় কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দ কমানো হল ২৫ শতাংশ প্রস্তাবনার পরেও। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা ইনসিওরেন্স কোম্পানিতে (insurance company) কৃষকের থেকে বেশি সুবিধা দেয়।
তবে কেন্দ্রীয় বাজেট শুধুমাত্র কৃষি বিরোধীই নয়, কীভাবে দেশের শিশু থেকে নারী, সংখ্যালঘু মানুষের বিরোধী তা ব্যাখ্যা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) তথ্য দেন, পিএম পোশন যোজনায় পাঁচ বছরের কম বয়স্ক ৫০ শতাংশের বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। ১৭ শতাংশের ওজন কম। ৩৬ শতাংশের খর্বতায় ভোগে। নারী সংরক্ষণ বিল আনার কথা থাকলেও ১৮ মাস পরেও তা কার্যকর হয়নি। এই ক্ষেত্রে কোনও বরাদ্দ না থাকায় তা এই অর্থবর্ষের আদৌ হবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন অভিষেক। সেই সঙ্গে তথ্য দেন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বাজেট কমিয়ে দেওয়া হল ৫৭ শতাংশ। ২০২৪-২৫ সালের ১৫০৭৫ কোটি থেকে ৬০৭৫ কোটিতে নামিয়ে আনা হল এই খাতে বরাদ্দ। বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পে ৮০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে প্রচারে। জন ধন যোজনা ৫৪.৬৬ কোটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ১১.৫৮ কোটি অ্যাকাউন্ট কাজ করে না। আর যে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তার মধ্যে ৩৩.৬৭ কোটি অ্যাকাউন্টে হাজার টাকার কম থাকে। উৎপাদন শিল্প ধুঁকছে চিন থেকে আমদানি করা জিনিসের চাপে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১.২ কোটি বাড়িতে একটিও সিলিন্ডার কেনা সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র অভূতপূর্ব মূল্যবৃদ্ধির জন্য। এলপিজি সংযোগ দিতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ প্রস্তাবনার থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ৩০ শতাংশ।
যে কর্মসংস্থান নিয়ে বারবার নিজেদের ঢাক বাজানোর চেষ্টা করেছেন নরেন্দ্র মোদি সেই কর্মসংস্থানের পর্দাও এদিন খুলে দেন অভিষেক। তিনি তথ্য দেন, বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে। ১০ জন স্নাতকের মধ্যে আজ ৩ জন বেকার। পিএমকেভিওয়াই যোজনায় প্রশিক্ষিতদের মাত্র ১৮ শতাংশ চাকরি পেয়েছে। চাকুরিজীবীদের ৯০ শতাংশ চাকরিক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বেকারত্ব ৪৫ বছরের শীর্ষে।
আর কেন্দ্রের ভ্রান্তনীতিতে অর্ধমন্ত্রীদের দ্বারা প্রশাসন চালানোয় কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ভারতীয়রা, তা বলতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ভারতীয় রেল দেশের লাইফ লাইন। সেখানে একজন মন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রিত্ব দেওয়া হলেও তাঁর কাঁধে আরও মন্ত্রিত্ব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রেলমন্ত্রী আইটি যেমন দেখছেন, তেমনই তথ্য ও সম্প্রচারও দেখছেন। ফলে দেশের রেল খাতে বরাদ্দ বাড়ছে না। কত কিলোমিটার নতুন রেলপথ, কত কিলোমিটার কবচ সুরক্ষার অধীনে এলো তার তথ্য নেই। দেশের আইটি ক্ষেত্র ধুঁকছে।
–
–
–
–
–