বাংলার শিল্পের মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন-এর (MSME) প্রথম দিনই শিল্পপতিরা শিল্পবান্ধব বাংলার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সেই এমএসএমই ক্ষেত্রেই বিপুল বিনিয়োগ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, প্রথমবার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে (Defence sector) বিনিয়োগ হচ্ছে। সেই সঙ্গে চার জেলায় বস্ত্রশিল্পে নতুন করে বিনিয়োগের বার্তা দ্বিতীয় দিন বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টার থেকে দিলেন টেগা ইন্ডাস্টিজের মেহুল মোহাঙ্কা (Mehul Mohanka)। বাংলার শিল্পোদ্যোগের উৎসাহ দেখে এবার রেলের তরফ থেকেও যোগাযোগ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রকল্প নেওয়ার বার্তা টিটাগড় রেল সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর উমেশ চৌধুরির (Umesh Chowdhary)।
উৎপাদন শিল্প ও উৎপাদিত দ্রব্য পরিবহন অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। আর বাংলায় দুটি ক্ষেত্রকে একসঙ্গে কাজ করার যে নজির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেখেছেন, তা ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতেও নেই। যার ফলে বাংলায় সবথেকে বেশি এগিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। কেন্দ্র সরকারের পরিসংখ্যানে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিজিবিএস-এর দ্বিতীয় দিন শিল্পপতি মেহুল মোহাঙ্কা সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, রাজ্যে এমএসএমই-তে (MSME) ১৩৬ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। ৮১ শতাংশ জিএসডিপি (GSDP) এসেছে শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্র থেকে এসেছে। এই শিল্পক্ষেত্রে রাজ্যের উৎপাদন মাত্রা জাতীয় মাত্রার থেকে বেশি। গোটা দেশে সবথেকে বেশি মহিলা নিয়োগ, যেখানে মহিলারা উদ্যোগপতি ২৯ লক্ষের বেশি। ১৩.৬৬ শতাংশ কর্মসংস্থান অসংগঠিত ক্ষেত্রে যা দেশের সবথেকে বেশি। ৬০০-র বেশি ক্লাস্টার যা ২০১১ সাল থেকে ১৩ গুণ বেশি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সবথেকে বেশি বিনিয়োগ বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রে হয়েছে বলে জানান মোহাঙ্কা। পরিসংখ্যান পেশ করে তিনি জানান, দেশের সবথেকে বড় হ্যান্ডলুম হাব ৬.৩ লক্ষ তাঁতি যুক্ত হতে পেরেছেন। দেশের সবথেকে বড় শাড়ি উৎপাদক রাজ্য বাংলা যেখানে ৩৫ শতাংশের বেশি শাড়ির উৎপাদন হয়। টাওয়েল, ন্যাপকিন, ডাস্টার, সার্জিকাল ব্যান্ডেজ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে বাংলা। সুতির শিশুদের পোশাক উৎপাদনেও অন্যতম। মেটিয়াবুরুজে সবথেকে বড়া বস্ত্রশিল্পের ক্লাস্টার যেখানে প্রতিদিন ৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
চলতি বিজিবিএস-এ মূলত তিনটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানান মেহুল মোহাঙ্কা। সেগুলি হল বস্ত্রশিল্প (textile industry), প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও কেমিক্যাল এবং ডিফেন্স উৎপাদন (Defence sector)। প্রথমবার ডিফেন্স উৎপাদন নিয়ে আলোচনা হয়েছে যা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে জানান তিনি। সেই সঙ্গে ৭টি মউ (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। হাওড়া, হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগণা, নদিয়ায় সাতটি বস্ত্রশিল্প উৎপাদনে বিনিয়োগ হবে। জলপাইগুড়িতে তিনটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ১৫,৫০০ নিয়োগ হবে বলেও জানানো হয়।
এই উৎপাদনশিল্পগুলিকে সফল করতে পরিবহনের দিকেও সমান নজর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। সেই সূত্রে আমন্ত্রিত টিটাগড় রেলের কর্ণধার উমেশ চৌধুরি (Umesh Chowdhary)। বিজিবিএস-এ যোগদান করে তিনি দাবি করেন, এটি এমন এক সম্মেলন যেখানে একদিকে নীতি নির্ধারকরা অন্যদিকে বিশ্বের তাবড় শিল্পপতিরা। এরকম সম্মেলনেই পরিকাঠামো সংক্রান্ত শিল্প সুবিধা পায়। এখানে দুটি আলাদা আলোচনাচক্রের আয়োজন হয় – একটি উন্নত উৎপাদন ও অন্য়টি ব্যয় উপযোগী পরিবহন ব্যবস্থা। একাধিক রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে যা এই শিল্পক্ষেত্রগুলিকে বাস্তব অর্থেই সহায়তা করতে পারবে। আশা করি আগামী বছরের মধ্যে এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হবে।
–
–
–
–
–
–