মণীশ কীর্তনিয়া
গত ৭টি শিল্প সম্মেলনে ১৯ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। যার মধ্যে ১৩ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি ৬ লক্ষ কোটির প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। বুধবার সন্ধেয় বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)। তাঁর কথায়, যাঁরা এসব বলছে তাঁদের বলব কীভাবে বলছেন এই কথাগুলো? সব সময় নেগেটিভ কথা না বলে রাজ্যের গর্বের সঙ্গে গর্বিত হন।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “শিল্প সম্মেলনের প্রথম দিনে আমি সন্তুষ্ট। কারণ মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দালরা যে ঘোষণা করেছেন বিনিয়োগের তাতে নতুন করে আমার বলার কিছু নেই। বাংলা এখন বাণিজ্যের গন্তব্য। শিল্পপতিরা সকলেই বলেছেন, এবারের শিল্প সম্মেলন সব দিক থেকেই ইউনিক এবং অনেক বড় মাপের হয়েছে। তবে কত টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব বা আরও কী কী এল সেটা এক্ষুনি বলতে পারব না কারণ, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন শিল্প সংস্থার সঙ্গে বিটুবি এবং বিটুজি কর্মসূচি রয়েছে। তারপরই নিশ্চিত করে বলা যাবে এ বছর কত টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এল।”
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এই শিল্প আলোচনা, MOU সই এগুলি চলতে থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, “আমিও কয়েকটি স্টেশনে অংশ নেব। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলব।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একজন প্রতিনিধি এখানে এসেছেন তাঁকে আমি অনুরোধ করেছি, এখান থেকে সরাসরি লন্ডনের (London) উড়ান চালু করতে। একটা সময় এই উড়ান ছিল। জার্মানিকেও (Germany) বললাম এখান থেকে উড়ান চালাতে। লুফৎ হানসা তো আমার আসার আগে।”
এদিনের শিল্পপতিদের ভাষণে এবং তাঁদের বিনিয়োগ প্রস্তাবে অত্যন্ত খুশি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যা করে গেলাম তাতে আগামী দিনে বাংলার মুকুটে আরও একটা পালক যোগ হয়ে থাকবে। বিশেষ করে জাপানের (Japan) কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তাঁরা বারবার বলেছে সেখানে যেতে। কিন্তু এখানে এত কাজ রয়েছে এখন ১২ মাসের ১০০ পার্বণ সবেতেই থাকতে হয়। তবুও বাংলার স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।”
মুকেশ আম্বানির বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, এখনও পর্যন্ত তাঁদের ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে সেটা ডবল হবে। এ-ছাড়াও তারা AI হাব তৈরি করছে কলকাতায়। সঞ্জীব পুরীও জানিয়েছেন, তাঁরা কলকাতায় AI হাব তৈরি করবেন। এ-প্রসঙ্গে তিনি জানান কলকাতা পুলিশও এআই নিয়ে একটি প্রকল্প করছে।
বুধবার বিশ্ববাংলা কনভেশন সেন্টারে বাংলার অষ্টম শিল্প সম্মেলনকে (BGBS) কেন্দ্র করে ছিল কার্যত চাঁদের হাট। দেশের ও রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতিরা হাজির ছিলেন প্রথম দিনই— মুকেশ আম্বানি থেকে সজ্জন জিন্দল। সঞ্জীব পুরী থেকে হর্ষ নেওটিয়া। আগরওয়াল থেকে বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়- কে ছিলেন না সেখানে! এসেছিলেন সস্ত্রীক ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও। সকলেই এক সুরে বলেছেন বাংলা মানে বাণিজ্য। আর বর্তমান বাংলায় এই বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা তৈরি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই।
বুধবার দুপুরের নিউ টাউনের উপচে পড়া বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারের প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত সকলেই চাক্ষুষ করলেন কাকে বলে মমতা-ম্যাজিক। সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া— টেলিভিশনের পর্দায় সেই ম্যাজিক দেখল দেশ-সহ গোটা বিশ্ব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শিল্পপতিদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে মুকেশ আম্বানির সঙ্গে আধঘণ্টারও বেশি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় তাঁর। এদিন নিজের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, বাংলাকে ভুলে যাবেন না বাংলাও আপনাদের ভুলবে না। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন বাংলায় শিল্পনীতি সংক্রান্ত বিষয় গড়ে তুলতে গিয়ে কোন বিষয়গুলিকে তাঁর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কথায়, ৫ হাজার একর জমি এই মুহূর্তে রাজ্যে রয়েছে শিল্প স্থাপনের জন্য। বেসরকারি সংস্থা যাতে শিল্পতালুক তৈরি করতে পারে আমরা তার জন্য নীতি তৈরি করেছি।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বরা। দেশ-বিদেশের অভ্যাগতরা ছড়াও ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও আমলারা। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান-শেষে অমিত মিত্রের পরিচালনায় শুরু হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেশন। যেখানে বিনিয়োগ প্রস্তাবের আদান-প্রদান চলে দেশ-বিদেশের অতিথিদের সঙ্গে। কিছু সময়ের জন্য যোগদান করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
আরও পড়ুন- দিল্লিতে ভোটারদের ভোটদানে আগ্রহ বাড়াতে নয়া উদ্যোগ! ভোট দিলেই ফুলের চারা, সঙ্গে পণ্যে আকর্ষণীয় ছাড়
_
_