বাজেট পেশের পরে সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্র মানুষের ঝুলি ফাঁকাই রয়ে গিয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ (price rise) থেকে কর্মসংস্থানে (employment generation) দিশা দেখাতে পারেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তা সত্ত্বেও বাজেট অধিবেশন নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) গলা ফাটালেন দরিদ্র-বন্ধু সরকারের সপক্ষে। যে সরকার কর্মসংস্থান তৈরিতেই ব্যর্থ, সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাস্যকরভাবে দাবি করেন তাঁদের সরকার দরিদ্রের সমস্যা মেটাচ্ছে। পাশাপাশি বিরোধী সাংসদদের বাজেট অধিবেশনে (budget session) তোলা কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister) দাবি করেন, সব সমীক্ষা দেখিয়েছে এইবারে এবং বিগত যে ১০ বছর মানুষ আমাদের পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, সেই সময়ে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্রকে (poverty) পরাজিত করেছে এবং দারিদ্র থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই প্রসঙ্গেই তিনি যুক্ত করেন, আমাদের ১০ বছরের কাজের মধ্যে দিয়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল দারিদ্রের সমাধান করা এবং আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে সেই সমাধানের পথ খুঁজেছি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কতটা স্ববিরোধী তার প্রমাণ বাজেটেই মিলেছে। যে আয়কর (income tax) ছাড়ের সীমা বাড়ানো নিয়ে লোকসভায় মঙ্গলবার সওয়াল করেন নরেন্দ্র মোদি, সেই সীমায় গত ৫ বছরে কমেছে চাকুরিজীবীর সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৭ সালে বেতনভোগী (salaried) কর্মী যেখানে দেশের উপার্যনক্ষম মানুষের ২২.৮ শতাংশ ছিল, ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১.৭ শতাংশে। সেই সঙ্গে বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে ২০১৭ সালে বেতনভোগী পুরুষদের গড় বেতন মাসিক ১২,৬৬৫ টাকা ছিল। ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১,৮৫৮ টাকায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক বেতন কমে দাঁড়িয়েছে ১০,১১৬ টাকা থেকে ৮,৮৫৫ টাকায়।
যেখানে বাজেট বক্তব্য পেশের আগে কেন্দ্র সরকারের সমীক্ষায় উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়, সেখানে বাজেটে নতুন স্টার্ট আপ বা উৎপাদন শিল্পের (manufacturing industry) জন্য করে কোনও সুবিধা দেওয়া হয়নি। যার প্রতিফলন বাজেটের পরদিন থেকেই শেয়ার বাজারে দেখা গিয়েছে। এরপরেও মোদি মঙ্গলবার লোকসভায় দাবি করেন, যখন মানুষ মাটির সঙ্গে যুক্ত থাকে, বাস্তব জানে এবং নিজেদের জীবন মাটির উপরে কাটায়, তখন বাস্তবে পরিবর্তন অনিবার্য। আমরা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিই না, আমরা বাস্তবের উন্নয়ন দিয়েছি।
নিজের বক্তব্যে কার্যত বেতনভোগীদের নজরে রেখে দিল্লি নির্বাচনের আগের দিন আপ-কে টার্গেট করার চেষ্টা করেন মোদি। তবে সংসদে বাজেট অধিবেশনে বিদেশ নীতির ব্যর্থতা নিয়ে যে প্রশ্ন বিরোধিতা তোলেন তার কোনও জবাব দিতে পারেননি মোদি। চিন নীতিতে ভারতের বাজার বিশ্বে জায়গা না পাওয়ার অভিযোগ নিয়েও মুখে কুলুপ প্রধানমন্ত্রীর। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে দেশের অনুন্নয়নকে নিশানায় রেখেছিলেন বিরোধী সাংসদরা এমনকি বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। সেখানেও শুধুমাত্র জন কেনেডির বই পড়ার উত্তর পাওয়া যায় মোদির মুখে। কীভাবে ভারত ট্রাম্প জমানার আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করবে, তা নিয়ে কোনও উত্তর দিতে পারেননি তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী।
–
–
–
–
–
–