লস এঞ্জেলসের(los angels) ভয়াবহ দাবানলে সব হারিয়ে নিঃস্ব ক্যান্সার চিকিৎসক মদনগোপাল মুখোপাধ্যায়। একটু একটু করে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর মূল্যবান ভাণ্ডার। দুর্মূল্য কিছু সংগ্রহ চিরতরে হারিয়েছেন তিনি। সংগ্রহের তালিকায় ছিল অবনীন্দ্রনাথের ছবি থেকে শুরু করে কোম্পানি আমলের চিত্র, এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম সম্পাদকের সই করা জার্নাল থেকে নেহেরুর স্বাক্ষরিত বই।
দাবানলের আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে বই-পোস্টকার্ড ছাড়াও পাল-গান্ধর্ব সময়ের ভাস্কর্য, ইন্দো-আর্য যুগ, মুঘল আমলের মুদ্রা, কলকাতার প্রাচীন দুষ্প্রাপ্য ম্যাপ, যামিনী রায়, বিকাশ ভট্টাচার্য, মকবুল ফিদা হোসেনের ছবি। এই সমস্ত জিনিস নিয়ে সান ফ্রান্সিসকোর একাধিক ইন্সটিটিউট আয়োজন করত শিল্প প্রদর্শনীর। শুধুমাত্র দুষ্প্রাপ্য রবীন্দ্ররচনার( rabindranath) সংকলন নিয়ে আলোচনা সভা বসত স্থানীয় মিউজিয়ামে। মদনগোপালবাবু বাড়িতে থাকলেই রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গানেই আশ্রয় খুঁজে নিতেন।
রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘পার্সোনালিটি’ বইয়ের প্রথম সংস্করণের সই করা কপি, ‘ভুবনজোড়া আসনখানি’ গানের অপ্রকাশিত ইংরেজি অনুবাদ,’পোয়েট্রি’ পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক কবিতা, যার একাধিক সংখ্যা মদনবাবুর সংগ্রহে ছিল। এই সমস্ত কিছু আগুনের গ্রাসে পুড়ে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে ‘গীতাঞ্জলি’র হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, কথিকা গ্রন্থ ‘লিপিকা’র ‘ঘোড়া’ রচনার অনুবাদ (দ্য হর্স), ‘শুধু তোমার বাণী নয় গো’ গানের হাতেলেখা তরজমা—সমস্তকিছু হারিয়ে ফেলেছেন মদনগোপালবাবু।
সংগৃহীত সমস্ত বইয়ের ক্যাটালগ একা হাতে তৈরি করেছিলেন চিকিৎসক, এখন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ১৯৬৬ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক। ১৯৬৭-তেই আমেরিকা যান মদনগোপালবাবু। থাকতেন ক্যালিফোর্নিয়ার বেকার্সফিল্ডে। সেখানে তাঁর নামে একটি রাস্তাও রয়েছে। ২০১৩ সালে বাড়ি বদলে যান আল্টাডেনায়। তৈরি করেন বাড়ি। কিন্তু এই দাবানলের আগুন সেই বাড়ি, গাড়ি সব ছাই করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় হাতের কাছে যা পেয়েছেন তাই নিয়ে এসেছেন মদনগোপালবাবু।
–
–
–
–
–
–
–
–