ফাঁসি চাই না: আর জি কর মামলায় রাজ্য-সিবিআইয়ের বিরোধিতায় মৃতার পরিবার!

0
3

আর জি করের মতো জঘন্য ঘটনায় অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গোটা রাজ্য সরব। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শিয়ালদহ আদালতের (Sealdah Court) আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে (Calcutta High Court) মামলা দায়ের হয়েছে। এরপরই তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-ও (CBI) হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ফাঁসির দাবি নিয়ে। সেই মামলার শুনানিতে বড় দাবি এবার মৃতার পরিবারের। সঞ্জয়ের মতো অপরাধীর ফাঁসি (capital punishment) চাই না বলে হাইকোর্টের শুনানি চলাকালীন দাবি করলেন মৃতার পরিবার।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই শিয়ালদহ আদালতে আর জি করের ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম (rarest of the rare) দাবি করলেও শিয়ালদহ আদালতের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেনি তারা। রাজ্য সরকার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ফাঁসির দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার পরে সিবিআই হাইকোর্টে যায়। আবার তারাই সেখানে গিয়ে দাবি করে ফাঁসির দাবি জানানোয় রাজ্যের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে ফের রাজ্যের এক্তিয়ার নিয়ে সিবিআই-এর আইনজীবী প্রশ্ন তুললে কড়া জবাব দেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (Advocate General)।

সোমবারের শুনানিতে আইনের ধারা তুলে ধরে রাজ্যের এজি (AG) দাবি করেন সংশোধিত আইনে রায়ের বিরোধিতায় কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যকেও আবেদনের অধিকার দেওয়া রয়েছে। সেখানেই সিবিআই-এর তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (ASG) দাবি করেন, ১৩ অগাস্ট সিবিআই-এর হাতে গোটা মামলা হস্তান্তরিত করার পরে রাজ্যের কাছে কোনও তথ্য নেই। সেই যুক্তিতে ফাঁসির আবেদন করার থেকে রাজ্যের আবেদন নাকচ কারতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন সিবিআই-এর আইনজীবী। যদিও বিচারপতি দেবাংশু বসাকের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের যদি আবেদনের ক্ষমতা না-ই থাকে, সিবিআই ফাঁসির আবেদন না জানালে নিজেদের আবেদন কীভাবে পেশ করবে রাজ্য। শুনানির শেষে রায়দান স্থগিত রাখে ডিভিশন বেঞ্চ।

তবে মামলায় চমকপ্রদ মোড় আসে মৃতার পরিবারের আবেদনে। তাঁদের আইনজীবীর পক্ষে জানানো হয়, তাঁদের মেয়ের প্রাণ গিয়েছে মানেই যারা দোষী তাঁদেরও প্রাণ নিতে হবে (capital punishment) এমন তাঁরা চান না। হাইকোর্টের শুনানিতে তাঁরা স্পষ্ট জানান শিয়ালদহ আদালত (Sealdah Court) যে আমৃত্যু কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছে তা যেন বহাল থাকে। কার্যত শিয়ালদহ আদালতে সঞ্জয় রাই দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে যে ফাঁসির দাবি মৃতার পরিবার জানিয়েছিলেন, সেই অবস্থান থেকেও তাঁরা এদিন সরে এলেন।

সঞ্জয় রাই-এর আমৃত্যু কারাদণ্ডের শাস্তিতে সম্মতি জানিয়ে মৃতার পরিবার সোমবার আদালতে দাবি করে, সিবিআই তদন্তে তাঁদের ভরসা নেই। তাঁদের দাবি বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচার প্রক্রিয়ার উপর অনেকাংশে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা। যদিও শিয়ালদহ আদালতের রায়ের উপর বেশ কিছু প্রশ্ন তাঁদের রয়েছে বলেও জানান তাঁরা। হাইকোর্টের মামলায় সেই প্রশ্নও তাঁরা পেশ করেন।

মৃতা চিকিৎসকের পরিবারকে বিভ্রান্ত করে ভুল পথে চালানোর দাবি রাজ্যের শাসকদলের। কারা বিপথে চালনা করছেন তা নিয়েও তদন্তের দাবি জানান তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। শিয়ালদহ আদালত যখন দোষী সাব্যস্ত করলেন তখন রায়কে স্বাগত জানিয়েছিলেন এই বাবা-মা। এই তিন ধারার সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি। নিজের মেয়ের ফাঁসির বিরুদ্ধে বাবা-মা, বিস্ময় প্রকাশ কুণালের। তাঁর আরও দাবি, পৃথিবীর অন্য সব অপরাধের সঙ্গে ধর্ষণ ও খুনের আকাশ-পাতাল তফাৎ। এঁদের ভূমিকা অত্যন্ত রহস্যজনক। এর সঙ্গে কারা ও কী কী জড়িত গোটাটাই তদন্ত হওয়া দরকার। অন্য কেউ অপরাধী থাকলে তার সঙ্গে সঞ্জয়ের সাজার সম্পর্ক কী, প্রশ্ন কুণালের।