আর জি কর আন্দোলন: ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা দিয়ে কোটি কোটি নয়ছয়!

0
5

এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট। হ্যাঁ তাই। কলকাতার রাজপথ জুড়ে আন্দোলনের নামে আসলে যা দেখা গিয়েছে তা হল সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত চিত্রনাট্য অনুযায়ী আন্দোলনের অভিনয়। তাতে সঙ্গত করেছে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী টিআরপি খোর মিডিয়া। নির্যাতিতার বিচারের নামে তোলা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লাইনও এক্কেবারে বিজ্ঞাপনী কায়দায় ভেবে বের করা। উদ্দেশ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকারকে টলমল করে দেওয়া। তারপর এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই। অর্থাৎ আবার ক্ষমতা চাই। আর এসব করতে গেলে প্রয়োজন বিপুল অর্থের। সেই অর্থের জোগানও এসেছে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’য়ের (crowd funding) মাধ্যমে। এক-দু’টাকা নয়, ৯ কোটি টাকারও বেশি তোলা হয়েছে আরজি কর আন্দোলনকে সামনে রেখে। তুলেছে জুনিয়র ডাক্তাররাই।

অবাক হচ্ছেন? এখনই হবেন না। আরও বাকি আছে। এই যে ২ কোটি টাকার উপর উঠেছে সেই টাকা আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি, সকাল-বিকেল দামি ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-স্ন্যাকস-ডিনারে যেমন খরচ হয়েছে, একইসঙ্গে পেশাদার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট (event management) সংস্থার (ইনোভেডরস) পিছনে ঢালা হয়েছে। কারণ, ছবির প্রি-প্রোডাকশন, শ্যুটিং, পোস্ট প্রোডাকশন এবং প্রোমোশনের মতো এই পেশাদার সংস্থাও আন্দোলনের সবটুকু ছকে দিয়েছে কর্পোরেট (corporate) কায়দায়। স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী জুনিয়র ডাক্তারদের মাতব্বররা কেউ হিরো, নায়িকা, পার্শ্বচরিত্র, জুনিয়র আর্টিস্ট (ভিড়ের দৃশ্যে যাদের লাগে), অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করে গিয়েছে। যখনই এদের টাকার উৎস এবং খরচের হিসেব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই সযত্নে পাল্টা মন্তব্যে এরা এড়িয়ে গিয়েছে। অথচ দেখা গিয়েছে এই কোটি কোটি টাকা কোনওভাবেই নির্যাতিতার পরিবারের পিছনে বা তাঁদের আইনি লড়াইয়ে ব্যবহার হয়নি। কারণ আইনজীবীরা বাবা-মার কাছ থেকে এক টাকাও ফিজ নেননি। অথচ সেই টাকা খরচ হয়েছে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের আইনজীবীর পিছনে। কারণ তাদের স্বার্থে, তাদের মতো করে আদালতের নির্দেশ আনার তাগিদ ছিল।

শুধু তাই নয়, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে এবার বেরচ্ছে কেউটে। এই যে জুনিয়র ডাক্তাররা (junior doctors) বারবার ছাত্র নির্বাচনের কথা বলছিল, জানা গিয়েছে, ছাত্র নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বা সরকারকে সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে বাধ্য করতে পারলে এই নির্বাচনে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের টাকা খরচ করা হবে। যাতে টাকা খরচ করে পুরোটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তারপর যা খুশি তাই করা যাবে।

আচ্ছা, তবে আরজি কর আন্দোলন, নির্যাতিতার বিচার, লালবাজারে শিরদাঁড়া পৌঁছে দেওয়া, বাংলার মানুষকে তাদের আন্দোলনে যোগ হতে বলা, মিডিয়ায় রাজ্য সরকার বিরোধী বা বলা ভাল মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী বিষবাক্য ছড়ানো— এসবের কি কোনও দরকার ছিল? অবশ্যই ছিল। এগুলো না হলে যে অ্যাকাউন্টে হু হু করে টাকা ঢুকত না। আর সেই টাকায় যা খুশি তাই করার পরিকল্পনা করা যেত না। সিবিআই তদন্ত চাওয়া এই গুণধর ডাক্তারদের বিরুদ্ধেই এবার কেন সিবিআই তদন্ত হবে না, সে-প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকরাই। যাঁরা সেসময় কুচক্রী এই ডাক্তারদের বদবুদ্ধি ধরতে না পেরে সকাল-বিকেল হাজির হতেন আন্দোলন-ধরনাস্থলে এবার তাঁরাই আসল তথ্যগুলো একে একে জানতে পেরে ছিছিক্কার করছেন। তাঁরাই এবার বলতে শুরু করেছেন, আরজি কর আন্দোলনের নামে এই মিথ্যার দোকান কেন খোলা হয়েছিল? কেন সুপরিকল্পিত চিত্রনাট্যে মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে? উত্তরের অপেক্ষায় নাগরিকরা। আর এই মওকায় হাওয়া হয়ে গিয়েছে আন্দোলনের আঁচে টিআরপি সেঁকতে আসা তথাকথিত সেলেবদের দল। তাঁদের মুখেও এখন কোনও রা নেই। তাঁরা এখন আর কিছু দেখতে পান না।