আরজি কর কাণ্ডে (RG Kar Case) সঞ্জয় রাইকে (Sanjay Roy) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের (Life Imprisonment) সাজা দিয়েছেন কলকাতা সেশন কোর্টের বিচারক অনির্বাণ দাস (Judge Anirban Das)। কিন্তু দোষীকে ফাঁসির সাজা না দিয়ে কেন যাবজ্জীবন দেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee) এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফাঁসির দাবিতে অনড়। কেন ফাঁসির সাজা দিলেন না বিচারক, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে বিচারকের ১৭২ পৃষ্ঠার নির্দেশনামায়।
সেই ১৭২ পাতার নির্দেশনামায় বিচারক অনির্বাণ দাস উল্লেখ করেছেন, ‘‘যাবজ্জীবন শাস্তি হল নিয়ম, মৃত্যুদণ্ড ব্যতিক্রম।’’ যদিও তিনি স্বীকার করেছেন যে, সঞ্জয় রাইয়ের অপরাধ অত্যন্ত জঘন্য ও নৃশংস। নির্দেশনামায় লেখা হয়েছে, এই অপরাধ নির্যাতিতাকে অসহায় করে তুলেছিল। যৌন লালসার তৃপ্তির জন্য তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই মামলায় অপরাধের প্রকৃতি, নৃশংসতা এবং তার সমাজে প্রভাব বিচার্য বিষয় ছিল। সঞ্জয়ের অপরাধকে তিনি ‘সিরিজ ক্রাইম’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
বিচারক তাঁর নির্দেশনামায় ১৯৮০ সালের ‘বচ্চন সিং বনাম পঞ্জাব সরকার’ মামলার রায়কে উল্লেখ করেছেন। ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগে কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করেছিল। বিচারক দাস মনে করেন, আরজি কর-কাণ্ডের নৃশংসতা সত্ত্বেও সেই মানদণ্ড পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ড তখনই দেওয়া উচিত, যখন অপরাধীর সংশোধনের কোনও সুযোগ নেই। এই মামলায় সংস্কারের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
বিচারক আরও জানিয়েছেন, ন্যায়বিচার কখনও ‘চোখের বদলে চোখ’ বা ‘প্রাণের বদলে প্রাণ’-এর মতো প্রতিশোধমূলক চিন্তায় পরিচালিত হতে পারে না। বর্বরতাকে বর্বরতা দিয়ে দমন করা উচিত নয়। তার মতে, আদালতকে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই রায় দিতে হয়। মানুষের আবেগ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে না।
সিবিআই এই মামলাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ উল্লেখ করে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানায়। কিন্তু বিচারক দাস সিবিআইয়ের সঙ্গে একমত হননি। তিনি বলেন, এই অপরাধকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলা যায় না, কারণ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এটি সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
–
–
–
–
–
–
–