মেদিনীপুর-কাণ্ডে ১২ চিকিৎসক সাসপেন্ড, মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য-চাকরি: ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

0
1

সিনিয়র চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের (Medinipur Medical College And Hospital) প্রসূতি এবং সদ্যোজাতকে বাঁচানো যেত। তিন প্রসূতিকে এত কষ্ট সহ্য করত হত না। বৃহস্পতিবার, নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই ঘটনায় সিনিয়র ও জুনিয়র মিলিয়ে ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, এঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে মৃতের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ও একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) বলেন, সিনিয়ন ডাক্তাররা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ওই মা এবং সদ্যোজাতকে বাঁচানো যেত। তাঁর কথায়, “যাঁদের কাছে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, যাঁদের হাতে সন্তান জন্মায়, তাঁরা দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করলে মাকে এবং সন্তানকে বাঁচানো যেত।“

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, “মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ওই বিভাগের আরএমও ডক্টর সোমেন দাসকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সিআইডি এর পরে বাকি তদন্ত করবে।“ এর পরে সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসকদের তালিকা পড়ে শোনান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা হলেন,
সোমেন দাস (আরএমও)
দিলীপকুমার পাল (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর)
হিমাদ্রী নায়েক (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর)
মহম্মদ আলাউদ্দিন (এইচওডি)
জয়ন্তকুমার রাউত (এমএসভিপি)
পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় (সিনিয়র আরএমও)
মৌমিতা মণ্ডল (পিজিটি)
ভাগ্যশ্রী কুণ্ডু (পিজিটি)
সুশান্ত মণ্ডল (ফার্স্ট ইয়ার পিজিটি)
পূজা সাহা (ফার্স্ট ইয়ার পিজিটি)
মণীশ কুমার (ফার্স্ট ইয়ার পিজিটি)
জাগৃতি ঘোষ (সেকেন্ড ইয়ার পিজিটি)

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “যাঁরা সেদিন দায়িত্বে ছিলেন, যাঁদের জন্য এই কাণ্ড হয়েছে, তাঁদের রাখা যাবে না। তাঁদের হাতে অন্য রোগীরও ক্ষতি হতে পারে। সেই ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।“

মৃতদের পরিবারের প্রতি সহনুভূতিশীল মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, কোনও সান্ত্বনাই ওই পরিবারের প্রতি যথেষ্ট নয়। মমতা জানান, মৃতার পরিবারকে এককালীন ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে। এছাড়া পরিবার চাইলে এক সদস্যকে দেওয়া হবে চাকরি। মমতা বলেন, “মানুষের জবাব চাওয়ার অধিকার আছে। যেখানে অন্যায় হয়, সেখানে কথা উঠবেই। আমরা যেমন চিকিৎসকদের প্রতি সহানুভূতিশীল, তেমনি মানুষের দিকটাও দেখতে হবে। তাই তদন্তের সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।“

একাংশের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ৮ ঘণ্টা ডিউটি করেন না অনেক চিকিৎসক। সেই সময়ে তাঁরা বেসরকারি জায়গায় রোগী দেখেন। এটা বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট জানান মমতা। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ নিগমকে তাঁর নির্দেশ, “কোনও জুনিয়র ডাক্তার যেন একা রোগীর কাছে না যান। সিনিয়র ডাক্তাররাই যেন সঙ্গে করে নিয়ে যান তাঁদের। নইলে তাঁরা দুম করে ঢুকে কী বলে দেবেন, তার খারাপ প্রভাব হতে পারে। সব কেসেই সিনিয়ররা সঙ্গে থাকবেন জুনিয়রদের। সিস্টাররা তো থাকবেনই।“

মুখ্যমন্ত্রী মতে, ওটির ভিতরে সিসি ক্যামেরা থাকলে অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরা যেত। তিনি বলেন, “সিসি ক্যামেরা করিডরে থাকে। তাই চিকিৎসকদের গতিবিধি জানতে পারছি না।“ সব হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের গেট পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দেন মমতা।